Advertisement
২৭ মার্চ ২০২৩

মায়ের কোলেই জীবন-যুদ্ধ সুপ্রিয়ার

মায়ের কোলে চেপেই মাধ্যমিকের পরীক্ষা কেন্দ্রে যেত সুপ্রিয়া দেব। বছর ষোলোর ওই কিশোরীর দু’টি পা ছোটবেলা থেকে জটিল রোগে অকেজো। অসাড় বাঁ হাতও। ডান হাতের কব্জি দু-তিন বছরের শিশুর মতো! সেটিই তার সম্বল। তা দিয়েই সমান তালে অন্যদের সঙ্গে লড়তে চায় সুপ্রিয়া। শিক্ষকরা আশাবাদী, জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় সে ভাল ফল করবেই।

মায়ের কোলে সুপ্রিয়া।

মায়ের কোলে সুপ্রিয়া।

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৯
Share: Save:

মায়ের কোলে চেপেই মাধ্যমিকের পরীক্ষা কেন্দ্রে যেত সুপ্রিয়া দেব। বছর ষোলোর ওই কিশোরীর দু’টি পা ছোটবেলা থেকে জটিল রোগে অকেজো। অসাড় বাঁ হাতও। ডান হাতের কব্জি দু-তিন বছরের শিশুর মতো! সেটিই তার সম্বল। তা দিয়েই সমান তালে অন্যদের সঙ্গে লড়তে চায় সুপ্রিয়া। শিক্ষকরা আশাবাদী, জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় সে ভাল ফল করবেই।

Advertisement

সহপাঠীরা পরীক্ষা দিয়েছে ডেস্কে বসে। সুপ্রিয়া স্কুলঘরের কোণের মাটিতে, কম্পল পেতে। তিন ঘণ্টা একনাগাড়ে লিখেছে। নজরদারিতে বহাল শিক্ষকরা জানান, কোনও দিকে এক বারও তাকায়নি। সুপ্রিয়ার আশা, ভাল নম্বর পেয়েই পাস করবে। আরও অনেক দূর পড়বে। এই স্বপ্ন তার মা সুকৃতীদেবীর।

কাছাড়ের দয়াপুর চা বাগানের শ্রমিক সুপ্রিয়ার বাবা শঙ্করবাবু। বাড়ি কাছেই ডলুগ্রাম কলোনি। ছোট মেয়ে রূপশ্রী পড়ে নবম শ্রেণিতে। শঙ্করবাবু জানান, অনটন থাকলেও তাঁদের সুখের সংসার। সুস্থই জন্মেছিল তাঁর বড় মেয়ে সুপ্রিয়া। ন’মাস বয়সে ডায়ারিয়া হয়। তার পর নানা উপসর্গ। আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বাঁ হাতও কাজ বন্ধ করে। চিকিৎসকের কাছে গেলেও লাভ হয়নি। দিন দিন সমস্যা বাড়তেই থাকে। আগে দাঁড়াতে না-পারলেও পা সোজা করতে পারত। কয়েক মাস আগে সেই শক্তিও হারায়। পেটের পেশি ভিতরে ঢুকছে, পিঠে তৈরি হচ্ছে কুঁজ। কমছে ওজনও। ওই দম্পতির আশঙ্কা, শেষ পর্যন্ত সুপ্রিয়ার ডান হাতও না অকেজো হয়ে যায়। শিলচরের শিশু চিকিৎসক চন্দ্রশেখর দাস বলেন, “সম্ভবত মেয়েটির ব্রেন-স্ট্রোক হয়েছিল। মায়োপ্যাথিও হতে পারে। ফের পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।”

দুর্গানগর নয়ারাম উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে পড়ে সুপ্রিয়া। শিক্ষকরা জানান, মেয়ের সঙ্গে লড়ছেন সুকৃতীদেবীও। তাকে তাই কোলে করেই স্কুলে দিয়ে যান। বাড়ি নিয়ে যান একই ভাবে। আগে ডলুগ্রাম কলোনিরই একটি স্কুলে পড়ত সুপ্রিয়া। নবম শ্রেণিতে তাকে দুর্গানগর স্কুলে ভর্তি করা হয়। বাড়ি থেকে দুরত্ব ৪-৫ কিলোমিটার। মেয়েকে নিয়ে বাসে স্কুলে যান সুকৃতীদেবী। বাসস্ট্যান্ডে নেমে কোলে তুলে নেন মেয়েকে। পৌঁছন স্কুলে। ছুটি না হওয়া পর্যন্ত ঠায় বসে থাকেন সেখানেই। তাঁর কথায়, “ও পড়াশোনা করতে চায়। সারা দিন বই নিয়ে থাকে। গৃহশিক্ষক রাখার সামর্থ্য আমার নেই। কিন্তু ও কখনও ফেল করেনি। স্কুলের শিক্ষকরাও সাহস দেন। এতেই শান্তি।” স্কুলের অধ্যক্ষ ললিতমোহন সিংহ বলেন, “পড়াশোনায় সাধারণ হলেও, যে যুদ্ধ সুপ্রিয়া করছে সেটাই আসল। সুকৃতীদেবীও শ্রদ্ধার যোগ্য।”

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.