ছবি: সংগৃহীত।
দেওয়ালির ছুটিতে বাড়িতে এসেছিল বছর বারোর মেয়ে তিনটি। তাদের বয়সি অন্য বাচ্চা যখন ছুটে-খেলে বেড়াচ্ছে, তখন ওই তিন জন এক কোণে চুপ করে বসে। তাদের বাড়ির লোক জানতে চান কেন তারা চুপ করে বসে রয়েছে? তারা জানায়, তাদের পেটে প্রচণ্ড ব্যথা। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, তিন নাবালিকাই গর্ভবতী!
এর পরেই সামনে আসে মহারাষ্ট্রের বুলঢানা জেলায় আদিবাসীদের জন্য সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত আবাসিক নিনাধি আশ্রম স্কুলের ভয়ঙ্কর ঘটনা। অভিযোগ উঠেছে সেই স্কুলে দিনের পর দিন ধর্ষণ করা হয়েছে ১২ জন আদিবাসী ছাত্রীকে। প্রত্যেকেরই বয়স ১২ থেকে ১৪-র মধ্যে। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বৃহস্পতিবার রাতে ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিগম্বর খারাট-সহ সাত জন শিক্ষক। বাকি চার জন অশিক্ষক কর্মী। এদের মধ্যে ২৩ বছরের পিওনই মূল অভিযুক্ত। বুলঢানার এস পি সঞ্জয় বাভিস্কার বলেন, ‘‘ছাত্রীরা তাদের উপর হওয়া অত্যাচারের কথা প্রধান শিক্ষককে জানিয়েছিল। কিন্তু তিনি পুলিশকে কিছু জানাননি। তাই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ এই ঘটনায় আরও দু’জন জড়িত। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। মহারাষ্ট্রের ডিজিপি সতীশ মাথুর জানিয়েছেন, তদন্ত এখনও চলছে।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস জানিয়েছেন, বিষয়টি ‘যথেষ্ট উদ্বেগের’। এক জন মহিলা আইপিএস অফিসারের নেতৃত্বাধীন একটি দল বিষয়টির তদন্ত করবে। তাঁর আশ্বাস, ‘‘দোষীরা কেউ রেহাই পাবে না। তদন্তেও গাফিলতির প্রমাণ মিললে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ মাথুরও এ দিন জানিয়েছেন, এই ধর্ষণ মামলার তদন্তের জন্য এক জন আইপিএস অফিসারের নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে।
যে তিন নাবালিকা গর্ভবতী হয়ে পড়েছে, তারা জলগাঁও জেলার মুক্তিনগরের হালখেদা গ্রামের বাসিন্দা। ওই মেয়েদের বাবা-মা প্রথমে বিষয়টি গ্রামের মহিলা উপপ্রধানকে জানান। তিনি বিষয়টি জানান মুক্তিনগরের বিধায়ক একনাথ খাড়সেকে। তিনি গোটা বিষয়টি দেখতে বলেন মন্ত্রী পাণ্ডুরাগ ফুন্দকরকে। ফুন্দকর তখন বুলঢানা জেলার খামগাঁওয়ে ছিলেন। তিনি বুলঢানার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যশবন্ত সোলাঙ্কেকে বিষয়টি দেখতে নির্দেশ দেন। নাবালিকার বাবা-মায়েরাও খামগাঁও থানায় অভিযাগ জানান। এর পরেই পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ১২ জন নিগৃহীতাকে আকোলা জেলার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাভিস্কার জানান, নিগৃহীতাদের ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা হয়ে যাওয়ার পরে এক মহিলা আইপিএস অফিসার তাদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করবেন, ঠিক কী ঘটেছিল?
বুলঢানার এই স্কুলটি চালান এক জন স্থানীয় নেতা। এই স্কুলের ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে রাজ্য জুড়ে। মহারাষ্ট্রে হাজারেরও উপর এ রকম আবাসিক স্কুল রয়েছে। যেগুলির কিছু রাজ্য সরকার চালায়। কিছু সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত। এই সব স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৪.৪৫ লাখ। তাদের মধ্যে ছাত্রী ১.৯৯ লাখ। গত ১০ বছরে মহারাষ্ট্রের এমন স্কুলে খারাপ শৌচাগার ও নিরাপত্তা, চিকিৎসায় গাফিলতি এবং খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে প্রায় ৮০০ ছাত্রছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। তার পর বুলঢানার এই ঘটনা সামনে আসায় নড়েচড়ে বসেছে মহারাষ্ট্রের মহিলা কমিশনও। মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য এই সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহতকর জানিয়েছেন, ১০ নভেম্বর থেকে তাঁরা এই স্কুল পরিদর্শনের কাজ শুরু করবেন। এই বিষয়ে রাজ্যকে রিপোর্টও দেওয়া হবে। এ দিন ফডণবীসের সঙ্গে দেখা করেন বিজয়া। তিনি বলেছেন, ‘‘আগামী কাল আমি বুলঢানা যাচ্ছি। কাল সারা দিন আমি সেখানে থাকব এবং পরিস্থিতি খতিয়ে দেখব। প্রশাসন কী পদক্ষেপ করছে, সে দিকেও আমাদের নজর থাকবে। নিগৃহীতারা যাতে সুবিচার পায়, তা-ও কমিশন নিশ্চিত করবে।’’
তবে এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই লেগেছে রাজনীতির রং। এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী ফডণবীসের পদত্যাগ দাবি করেছেন এনসিপি নেতা নওয়াব মালিক। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কিছু মেয়ে গর্ভবতী হয়ে যাওয়ায় বিষয়টি সামনে এল। পুলিশ তো প্রথমে অভিযোগ নিতেই চায়নি।’’ রাজ্যের সব আবাসিক স্কুলের ছেলে-মেয়েদের ডাক্তারি পরীক্ষারও দাবি জানিয়েছেন তিনি। রাজ্যের মহিলা ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী পঙ্কজা মুন্ডে এবং আদিবাসীমন্ত্রী বিষ্ণু সাভারার পদত্যাগ দাবি করেছেন এনসিপি-র মহিলা শাখার সভাপতি। এ দিন খামগাঁও থানার সামনে বিক্ষোভও দেখান সাধারণ মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy