বিয়ের অনেক বছর পরেও নিঃসন্তান ছিলেন দম্পতি। ১৩ বছর আগে হঠাৎ তাঁরা রাস্তা থেকে তিন দিনের এক শিশুকে কুড়িয়ে পান। ‘দেবতার দান’ ভেবে তাকেই সন্তানস্নেহে ঘরে তুলেছিলেন স্বামী-স্ত্রী। চেয়েছিলেন মেয়েটিকে মানুষের মতো মানুষ করতে। কিন্তু প্রেমে বাধা পেয়ে ১৩ বছরে বয়সে সেই পালিত কন্যাই খুন করল মাকে। এমনকি, মায়ের গয়নাগাটি চুরি করে সে দিয়ে দেয় ‘প্রেমিক’কে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে ওড়িশার গজপতি জেলায়। অভিযুক্ত অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী এবং তার দুই ‘প্রেমিক’কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ২৯ এপ্রিল আকস্মিক ভাবে মৃত্যু হয় ৫৪ বছরের রাজলক্ষ্মী করের। ২ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পরে বসতবাড়ি ছেড়ে ভাড়াবাড়িতে উঠেছিলেন মহিলা। পালিত কন্যার পড়াশোনার সুবিধার কথা ভেবেই ওই সিদ্ধান্ত। অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া মেয়েটি পড়াশোনাতে যথেষ্ট ভাল। কিন্তু সেই মেয়ে দু’টি প্রণয়ঘটিত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে মায়ের কাছে বেশ বকাঝকা খায় সে। তবুও ওই দু’টি সম্পর্কই রাখে মেয়েটি। আর পরিকল্পনা করে মাকে খুনের।
মেয়েটি তার মামা, অর্থাৎ রাজলক্ষ্মীর ভাই শিবপ্রসাদ মিশ্রকে গত ৩০ এপ্রিল ফোন করে জানায় যে, হৃদ্যন্ত্র বিকল হয়ে মায়ের মৃত্যু হয়েছে। কয়েক জন পরিচিতকে নিয়ে সে শেষকৃত্যও করে ফেলেছে। ওই খবর পেয়ে পরের দিনই রাজলক্ষ্মীর ভাই দিদির বাড়িতে যান। তিনিই অনাথ মেয়েটির দায়িত্ব নেবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু হঠাৎই শিবপ্রসাদ ‘আবিষ্কার’ করেন তাঁর দিদি মারা যাননি, খুন হয়েছেন!

১৩ বছর আগে কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ের হাতে খুন হলেন ৫৪ বছরের রাজলক্ষ্মী কর। ছবি: সংগৃহীত।
ওই যুবক পুলিশকে জানান, তাঁর প্রথম খটকা লেগেছিল, যখন ভাগ্নি ফোন করে বলে যে মায়ের দাহকার্যও করে ফেলেছে সে। একটু অপেক্ষা করা গেল না? তার আগে একটা ফোন করা যেত না? মেয়েটি সদুত্তর দিতে পারেনি। যা-ই হোক, তিনি দিদির বাড়ি গিয়ে তার জিনিসপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে দেখেন রাজলক্ষ্মীর গয়নাগাটি উধাও। সন্দেহ গাঢ় হয় তাঁর। এর পর যে বাড়িতে দিদি ভাড়া থাকতেন, সেখানে খোঁজাখুঁজি করে একটি মোবাইল পান শিবপ্রসাদ। ওই মোবাইলের সূত্র ধরেই তিনি নিশ্চিত হন, খুনই করা হয়েছে দিদিকে। আর খুনি অন্য কেউ নয়, দিদির পালিত কন্যা।
গত ১৪ মে উদ্ধার হওয়া ওই ফোনটি নিয়ে থানায় যান শিবপ্রসাদ। পুলিশকে ইনস্টাগ্রামের চ্যাট দেখান। সে সব পরীক্ষা করে কার্যত থ হয়ে যায় পুলিশ। জানা যায়, অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীটি দু’জনের সঙ্গে প্রেম করত। মা সেটা জানতে পারায় বকাবকি করেছিলেন নাবালিকা কন্যাকে। কিন্তু মেয়ে তার পরে ওই দুই ‘প্রেমিকের’ সঙ্গে মিলে মাকে খুনের পরিকল্পনা করে। রাজলক্ষ্মীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ইনস্টাগ্রাম চ্যাটে প্রেমিকদের সঙ্গে মিলে ছক কষে মেয়ে।
আরও পড়ুন:
পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে,২১ বছরের গণেশ রথ এবং ২০ বছরের দীনেশ সাউ নামে দুই যুবকের সঙ্গে আলোচনা করে মাকে খুনের পরিকল্পনা করেছিল নাবালিকা। গত ২৮ এপ্রিল রাতে খাবারে অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে দিয়েছিল ১৩ বছরের কন্যা। তার পর শ্বাসরোধ করে খুন করে মাকে। পরের দিন দুই যুবককে বাড়িতে ডাকে মেয়েটি। মায়ের দেহ নিয়ে যায় স্থানীয় হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা রাজলক্ষ্মীকে মৃত বলে ঘোষণা করার পরে গাড়িভাড়া করে মাকে শ্মশানে নিয়ে যায় মেয়ে। সঙ্গে ছিলেন ওই দুই ‘প্রেমিক’। শেষকৃত্যের পরে রাজলক্ষ্মীর ভাইকে ফোন করে মায়ের মৃত্যুসংবাদ দেয় পালিত কন্যা!
ইতিমধ্যে ওই নাবালিকা এবং তার দুই প্রেমিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার ঘটনাস্থলে গিয়ে বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ধৃত তিন জনের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। মেয়েটিকে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে হাজির করানো হয়। বাকিদের হাজির করানো হচ্ছে আদালতে।