Advertisement
E-Paper

ডাইনি অপবাদে খুন একই পরিবারের তিন

ডাইনি অপবাদ দিয়ে পুরো পরিবারকেই শেষ করতে এসেছিল তিন আততায়ী। এলোপাথাড়ি ভোজালির আঘাতে পরিবারের দুই কিশোর-কিশোরী সহ তিনজনের মৃত্যু হল। জখম দুই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৬ ০৪:১৩
খুনের তদন্তে পুলিশ। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।

খুনের তদন্তে পুলিশ। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।

ডাইনি অপবাদ দিয়ে পুরো পরিবারকেই শেষ করতে এসেছিল তিন আততায়ী। এলোপাথাড়ি ভোজালির আঘাতে পরিবারের দুই কিশোর-কিশোরী সহ তিনজনের মৃত্যু হল। জখম দুই।

গত কাল রাতে রাঁচি থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে দশম ফলস থানা এলাকার রাসেন গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটেছে। মৃতদের নাম মুঙ্গিয়া কুমারী (১৫), কাঞ্চন মুণ্ডা (১২) ও ডিম্বা মুন্ডা (৫০)। আহতরা হলেন সোমবারি দেবী (৪০) ও হরিশ মুণ্ডা (১৫)। রাঁচির পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) রাজকুমার লকড়া বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে ডাইনি অপবাদের খুনের ঘটনাই মনে হচ্ছে। তবে জমি সংক্রান্ত কোনও বিবাদ নিয়ে বা কোনও পুরনো শক্রতার জেরে এই ঘটনা কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

দশম ফলসের কাছে জঙ্গলের মধ্যে প্রত্যন্ত গ্রাম রাসেন। গ্রামের শেষ প্রান্তে সোমবারি দেবীর বাড়ি। তদন্তকারীরা জানান, সোমবারি দেবীর ছেলে হরিশের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা জেনেছেন, কাল রাত দশটায় তিন দুষ্কৃতী তাদের বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ে। এত রাতে কে জানতে চাইলে তারা ‘অতিথি’ বলে পরিচয় দেয়। দরজা খুলে তাদের তিনজনকে বসতে দিয়ে কোথা থেকে তারা আসছে জানতে চান সোমবারি। তখন ঘরেই ছিল সোমবারির মেয়ে মুঙ্গিয়া, দুই ছেলে কাঞ্চন ও হরিশ ও সোমবারির দেওর ডিম্বা। ওই তিনজনের একজন সোমবারির কাছে জল চায়। সোমবারি তাদের জল দিতে রান্নাঘরে যেতেই হঠাৎ তিনজনই পকেট থেকে ভোজালি বের করে তাদের আক্রমণ করে।

পুলিশকে হরিশ জানিয়েছে, চোখের সামনে সে দেখে, তার মা, ভাই, বোন ও কাকাকে ভোজালি দিয়ে কোপানো হচ্ছে। এক আততায়ী তার মাথায়ও ভোজালির কোপ মারে। তবে ওই অবস্থাতেই সে দরজা খুলে বেরিয়ে জঙ্গলের দিকে ছুটতে থাকে। এক আততায়ী তার পিছু নিলেও হরিশকে ধরতে পারেনি। হরিশ সারারাত জঙ্গলে ঘুরে ভোরে থানায় পৌঁছে পুলিশকে সব জানায়। পুলিশ তাদের বাড়ি এসে দেখে কাঞ্চন, মুঙ্গিয়া ও ডিম্বা মারা গিয়েছে। সোমবারি দেবীর শ্বাস তখনও চলছে। সোমবারি ও হরিশকে রাঁচির রিমসে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

আজ দুপুরে সোমবারির বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, উঠোন রক্তে ভেসে গিয়েছে। পুরো গ্রাম চুপ। খুনের ঘটনা নিয়ে কেউ মুখ খুলতে চায়নি। তবে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রিয়াঙ্কা দেবী বলেন, ‘‘সোমবারির পরিবার এই গ্রামে বেশ কয়েক মাস ধরে একঘরে হয়ে ছিল বলে শুনেছি। সোমবারির এক আত্মীয়, বুদ্ধু মুণ্ডার ছেলে ও স্ত্রী অসুস্থ ছিল বলে গ্রামবাসীরা জানায়। সোমবারিদের পরিবারের সঙ্গে এই নিয়ে বুদ্ধুদের ঝগড়াও হয়।’’ ঘটনার পর থেকে বুদ্ধুদের পরিবারের কেউই বাড়ি নেই। পুলিশ তাদের বাড়ি গিয়ে দেখে ঘরে তালা। এসপি বলেন, ‘‘ডাইনি অপবাদ ছাড়াও বুদ্ধুদের সঙ্গে সোমবারির পরিবারের জমি জমা সংক্রান্ত ঝামেলা ছিল কি না তাও দেখা হচ্ছে। তদন্তে জানা গিয়েছে, সোমবারিদের জমির পরিমাণ খুবই কম। তাই জমি সংক্রান্ত ঝামেলায় পুরো পরিবারকে জ্ঞাতিরা মেরে ফেলতে চাইছে, এটা কতটা বিশ্বাসযোগ্য পুলিশ তা দেখছে।’’ কারা এসেছিল কাল রাতে? রক্তমাখা শরীরে সারা রাত দশম ফলসের জঙ্গলে ঘুরেছে হরিশ। আজ সকালে তার ঠাঁই হয়েছে রিমসে হাসপাতালে। সে বলে, ‘‘যারা এসেছিল তাদের চিনি না। গ্রামের লোকেরা ওদের ভাড়া করেছিল।’’

Jharkhand tribal family
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy