“আমি বাঁচতে চাই, কিন্তু খুবই দুশ্চিন্তা ও দমবন্ধ করা পরিস্থিতি। আতঙ্ক হচ্ছে। রাতদিন কাজ করেও এসআইআর-এর লক্ষ্য পূরণ করতে পারিনি। সময় বেশি পেলে করে ফেলা যেত। এই সময় পর্যাপ্ত নয়। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো।’’
উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে বিএলও হিসেবে নিযুক্ত স্কুল শিক্ষক সর্বেশ সিংহের মৃতদেহের পাশে এমনই ‘সুইসাইড নোট’ মিলেছে বলে তাঁর পরিবারের অভিযোগ। তাঁর স্ত্রী বাবলি সিংহের অভিযোগ, কোনও রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই ৪৫ বছরের সর্বেশকে বিএলও হিসেবে কাজ করানো হচ্ছিল। তাঁকে ১,০১৫টি এনুমারেশন ফর্ম দেওয়া হয়েছিল। রাত দেড়টা-২টো পর্যন্ত কাজ করেও তিনি সামলাতে পারছিলেন না। সেই কারণেই সর্বেশ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। প্রয়াত সর্বেশের চার মেয়ে রয়েছে।
সোমবার থেকে সংসদের শীতকীলান অধিবেশনে বিরোধী শিবির এসআইআর নিয়ে আলোচনার জন্য রবিবারই সর্বদলীয় বৈঠকে দাবি তুলেছে। ঠিক তার আগে যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে আরও এক বিএলও-র আত্মহত্যার অভিযোগ বিরোধী শিবিরকে নতুন অস্ত্র তুলে দিয়েছে। রবিবার দুপুরে সংসদের সর্বদলীয় বৈঠকে সমাজবাদী পার্টির নেতা রামগোপাল যাদব এই ‘সুইসাইড নোট’ পড়ে শুনিয়েছেন। সেই সঙ্গে দাবি তুলেছেন, বাকি সব বিষয় বাদ দিয়ে অবিলম্বে সংসদে এসআইআর নিয়ে আলোচনা করতে হবে। কংগ্রেসের সংসদীয় কৌশল নির্ধারণকারী কমিটির বৈঠকেও রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘‘বিএলও-দের কাজে লাগিয়ে বিজেপি নিজের মর্জিমাফিক তালিকা তৈরি করাতে চাইছে। বিএলও-দের আত্মহত্যা তাই গুরুতর বিষয়। এটি সংসদে তুলতে হবে।’’
কংগ্রেসের দাবি, এই নিয়ে এসআইআর-এর চাপে মোট ২৮ জন বিএলও বা সুপারভাইজরের মৃত্যু বা আত্মহত্যার ঘটনা ঘটল। উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, রাজস্থান, কেরলে এসআইআর-এর কাজের চাপে মৃত্যু বা আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে। সেই মতো একটি তালিকাও প্রকাশ করেছে কংগ্রেস।
শুধু মোদী সরকার নয়। বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে ফের একটি আত্মহত্যার অভিযোগ নির্বাচন কমিশনের উপরেও চাপ তৈরি করেছে। তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার বিএলও-দের মৃত্যুর দায় তৃণমূলের বিএলএ-দের উপরে চাপাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানে একের পর এক বিএলও-র মৃত্যু ও আত্মহত্যার অভিযোগ নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। অখিলেশ যাদব শনিবারই অভিযোগ তোলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের হাত রক্তে লাল হয়ে গিয়েছে।’ কমিশনের একটি সূত্রের দাবি, যেখানেই তৃণমূল, বিজেপি বা সিপিএমের মতো ক্যাডারভিত্তিক দলের বিএলএ-রা সক্রিয়, সেখানেই বিএলও-দের উপরে চাপ তৈরি হচ্ছে। যদিও আত্মহত্যার কোনও যুক্তি নেই।
এমনিতেই এসআইআর-এর কাজে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় উত্তরপ্রদেশ পিছিয়ে। রবিবার বিকেল পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে ৭০ শতাংশেরও কম গণনাপত্র বা এনুমারেশন ফর্ম ডিজিটাইজ়েশন হয়েছে। অধিকাংশ রাজ্যই এই কাজ ৯০ শতাংশের কাছাকাছি বা তার বেশি করে ফেলেছে। তার ফলে বিএলও-দের উপরে চাপ তৈরি করা হচ্ছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। আজ সর্বদলীয় বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সামনে সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদব মনে করিয়ে দিয়েছেন, নয়ডায় বিএলও-দের উপরে ৬০টি এফআইআরদায়ের হয়েছে। রাজনাথের পুত্রপঙ্কজ সিংহ নয়ডার বিধায়ক। ঘটনাচক্রে নয়ডার জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক মেধা রূপম মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের কন্যা।
রবিবার মোরাদাবাদে সর্বেশ সিংহের আত্মহত্যার অভিযোগের পরে জেলাশাসক অনুজ সিংহ জানিয়েছেন, পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। সর্বেশ ভালই কাজ করছিলেন। নিজের কাজের প্রায় ৬৭ শতাংশ শেষ করে ফেলেছিলেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)