E-Paper

পুলিশের হাতে প্রাণ গিয়েছে প্রাক্তন সেনার

সাবু-র বাসিন্দা তারচিন ২০১৭ সালে হাবিলদার পদ থেকে অবসর নেন। এখন একটি জামাকাপড়ের দোকান চালাতেন।

সাবির ইবন ইউসুফ

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:২৯
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কার্গিল যুদ্ধে লড়েছিলেন তিনি। দু’দশকের বেশি ভারতীয় সেনাবাহিনীর লাদাখ স্কাউটে কাজ করেছেন। গত বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর লাদাখে বিক্ষোভ-আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন এমন এক জন প্রাক্তন সেনানী সেওয়াং তারচিন। পিঠে গুলি করা হয়েছিল তাঁর। এ খবর প্রকাশ্যে আসতেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

পূর্ণ রাজ্যের দাবি ও সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত করা-সহ আরও বেশি কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে দীর্ঘ আন্দোলন চলছে লাদাখে। গত বুধবার আচমকাই সেই অশান্তি হিংসার চেহারা নেয়। এই ঘটনায় লাদাখের সমাজকর্মী তথা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী সোনম ওয়াংচুক-সহ ৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজস্থানের জোধপুর সেন্ট্রাল জেলে রাখা হয়েছে ওয়াংচুককে। এ নিয়ে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে সেওয়াং তারচিনের খবর প্রকাশ্যে আসায় আগুনে ঘৃতাহুতি পড়েছে।

সাবু-র বাসিন্দা তারচিন ২০১৭ সালে হাবিলদার পদ থেকে অবসর নেন। এখন একটি জামাকাপড়ের দোকান চালাতেন। তাঁর স্ত্রী ও চার সন্তান বুধবারের ঘটনার বিভীষিকা কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। আজ তাঁদের পাহাড়ে বাড়িতে আত্মীয়-পরিজনদের ভিড় জমেছিল। ঘরে ভিতরে তখন বৌদ্ধ প্রার্থনা চলছিল। তারচিনের সত্তরোর্ধ্ব বাবা স্ট্যানজিন নামগেয়াল কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘কার্গিলে শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়েছিল ও। সিয়াচেনে চার বার নিযুক্ত ছিল। কিন্তু প্রাণ হারাল শেষে নিজেদের পুলিশের গুলিতে। পাকিস্তান ওর প্রাণ নিতে পারেনি, কিন্তু আমাদের নিজেদের দেশ সেই কাজটা করল।’’ স্ট্যানজিনও অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার মেজর। কার্গিলের যুদ্ধে লড়েছিলেন তিনিও। আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘জানেন, আমরা দু’জনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছিলাম কার্গিলের যুদ্ধে। এটা আমাদের সঙ্গে অন্যায় হল।’’

সে দিন লে-তে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনায় ৪ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান। তার মধ্যে এক জন তারচিন। লাদাখের উপরাজ্যপাল কবিন্দর গুপ্ত ও স্থানীয় প্রশাসন এ ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, এ রকম ঘটনা আর যাতে না ঘটে, সে দিকে লক্ষ্য রাখা হবে।

তারচিনের স্ত্রী-র দাবি, তাঁর স্বামীর ‘হত্যার’ পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কেন সে সময়ে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হল না? রাবার বুলেট ব্যবহার করা হল না? কে গুলি চালানোর নির্দেশ দিল?’’ এ সব প্রশ্নের উত্তর চাওয়ার পাশাপাশি তারচিনের পরিবারের আরও দাবি, গুলি করে হত্যার আগে তারচিনের উপর অত্যাচার করা হয়েছিল। তারচিনের মৃতদেহে পুলিশের লাঠির দাগ দেখিয়ে এ কথা বলেছেন তাঁর স্ত্রী। তারচিনের ভাইয়ের আক্ষেপ, ‘‘লাদাখের অসংখ্য মানুষ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তাঁরা। কেউ হাবিলদার হিসেবে, কেউ গাইড হিসেবে, কেউ কুলি হিসেবে তো কেউ রাঁধুনী হিসেবে। এখন সেই মানুষগুলো নিজেদের অধিকারের প্রশ্ন তুলতেই তাঁদের দেশদ্রোহী বলা হচ্ছে।’’

আজ তারচিনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। তাঁর বৃদ্ধ বাবা বলেন, ‘‘ওঁর মৃত্যু বিফলে যাবে না। ও সেনার মৃত্যু মরেনি। ও লাদাখের কণ্ঠস্বর হয়েপ্রাণ দিয়েছে। সরকারকে এ বার শুনতেই হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kashmir

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy