Advertisement
E-Paper

বাড়িতে শৌচাগার নেই, আত্মঘাতী প্রতিবাদী তরুণী

যেন ‘স্বচ্ছ ভারত’ আন্দোলনের প্রতীক হয়ে গেলেন খুশবু! যেখানে ‘শোচ’ সেখানেই ‘শৌচাগার’ বলে দেশজুড়ে প্রচার চালাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ১৫:২৫

যেন ‘স্বচ্ছ ভারত’ আন্দোলনের প্রতীক হয়ে গেলেন খুশবু!

যেখানে ‘শোচ’ সেখানেই ‘শৌচাগার’ বলে দেশজুড়ে প্রচার চালাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কিন্তু, সেই ‘শোচ’ এক অষ্টাদশীর থাকলেও তার অভিভাবকদের ছিল না। শেষমেশ নিজের জীবনের বিনিময়ে পরিবারে ‘শোচ’ আনতে চাইল এই কলেজছাত্রী।

বাড়িতে শৌচালয় নেই। বাইরে অথবা আত্মীয়ের বাড়িতে শৌচকর্ম করতে যেতে হয় বলে ‘অপমানিত’ হচ্ছিল দুমকার বি এ ক্লাসের ছাত্রী খুশবু কুমারী (১৮)। এই নিয়ে বার বার আপত্তিও তুলেছিল সে। তার মা-বাবা আশ্বাস দিয়েছিলেন, খুসবুর বিয়ে হয়ে যাক। বিয়েতে অনেক খরচ। তার পরেই বাড়িতে শৌচালয় বানানো হবে। কিন্তু তার বিয়ে পর্যন্ত অপেক্ষা করল না খুশবু। বাড়িতে শৌচালয় না থাকাকে কেন্দ্র করে বাবা-মায়ের সঙ্গে বিবাদের জেরে আত্মঘাতী হল এই অষ্টাদশী।

শুক্রবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে দুমকা শহরের গোশালা রোড-শাস্ত্রী নগরে। দুমকার পুলিশ সুপার বিপুল শুক্ল জানিয়েছেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে এটা আত্মহত্যারই ঘটনা। মেয়েটির বাবা শ্রীকান্ত যাদবও পুলিশকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, বাড়িতে শৌচালয় না থাকার জন্যই তাঁর মেয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। যদিও কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি।’’ শুক্ল বলেন, ‘‘কিশোরীর মা-বাবা পুলিশকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, তাঁদের মেয়ে বাড়িতে শৌচালয় তৈরির জন্য বার বার বলছিল। তাঁরা খুশবুকে বলেছিলেন, খুশবুর বিয়ে হয়ে গেলে তার পর শৌচালয় করা হবে। কারণ শৌচালয় তৈরির থেকে ওর বিয়ের খরচ জোগাড় করাটাই খুশবুর মা-বাবার কাছে বেশি জরুরি বলে মনে হয়েছিল।’’ এই নিয়ে অনেক বারই মতবিরোধ হয়েছে। শুক্রবারও এই নিয়ে বাবা-মার সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। এর পরেই অভিমানী কিশোরী নিজের ঘরে গিয়ে খিল তুলে দেয়। পুলিশ সুপারের কাছে খুশবুর বাবা-মা বলেছেন, সেই অভিমানের যে এই পরিণতি হবে তা তাঁরা ভাবেননি। খুশবুর বাবা শ্রীকান্ত যাদব ভাড়ার গাড়ি চালানোর কাজ করেন। শ্রীকান্ত যাত্রী নিয়ে পাকুড় চলে যান। সঞ্জু দেবী বাজারে যান। অনেক ক্ষণ কেটে যাওয়ার পরও খুশবু ঘরের দরজা খুলছে না দেখে তাঁরা ধাক্কাধাক্কি করেন। শেষ পর্যন্ত দরজা ভেঙে দেখা যায় গলায় দড়ি দিয়ে খুশবু ঝুলছে।

খুশবুর মা বাড়িতেই থাকেন। খুশবুর এক ভাই পড়াশোনা করে। দরিদ্র পরিবারে কার্যত দুই ভাইবোনের পড়ার খরচ জোগাড় করতে গিয়েই হিমশিম অবস্থা ছিল শ্রীকান্তের। খুশবু বিএ ক্লাসে ভর্তি হওয়ার পর তার বিয়ে দেওয়া নিয়েও চিন্তিত ছিলেন শ্রীকান্ত। এই অবস্থায় বাড়িতে শৌচালয় বানানোকে তেমন গুরুত্ব দিতে চাননি শ্রীকান্ত ও তাঁর স্ত্রী সঞ্জুদেবী। শ্রীকান্ত বলেন, ‘‘আমরা মেয়েকে অনেক বার বলেছি, ওর বিয়ে হয়ে গেলে তার পর শৌচাগার বানাবো। তা ছাড়া বাড়ির বাইরে একটা পাঁচিল তোলারও দরকার ছিল। এক সঙ্গে এতগুলো জিনিস করার মতো আর্থিক অবস্থা আমার নয়। কিন্তু মেয়ে মানতে চাইত না। বাইরে অথবা আত্মীয়ের বাড়িতে যেতে ও ভীষণ আপত্তি করত।’’ কিন্তু তার জেরে যে মেয়ে আত্মঘাতী হবে তা ভাবতে পারেননি শ্রীকান্ত।

toilet suicide dumka jharkhand
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy