Advertisement
E-Paper

খেয়েছি তো ক’টা গাছ, তা বলে মানুষের জেলে!

মিডিয়া ডেকে পুলিশের কাছে বিচার চাইছেন উত্তরপ্রদেশের কমলেশ। বলছেন, ‘‘ভাবুন তো, ওরা কি উকিল পেয়েছিল?’’

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৩১
রেহাই: সোমবার জালৌন জেল থেকে বেরিয়ে আসছে একটি গাধা। ছবি: পিটিআই।

রেহাই: সোমবার জালৌন জেল থেকে বেরিয়ে আসছে একটি গাধা। ছবি: পিটিআই।

ভরে তো দিলেন হুজুর, জামিন করাবে কে?

মিডিয়া ডেকে পুলিশের কাছে বিচার চাইছেন উত্তরপ্রদেশের কমলেশ। বলছেন, ‘‘ভাবুন তো, ওরা কি উকিল পেয়েছিল?’’

কলকাতার এক কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের সুপার বললেন, ‘‘পরোয়ানা ছাড়া কাউকে জেলে ঢোকানোটাই বেআইনি। জেল সুপারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে সরকার।’’

যোগী আদিত্যনাথের পুলিশকে রেয়াত করছেন না বিজেপিরই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মেনকা গাঁধী। ‘‘ওরা কি কথা বলতে পারে?’’
— প্রশ্ন তাঁরও।

আসলে পুলিশ তো আর পটলডাঙার প্যালারামের ‘ফুচুদা’ নয়, যে ধোপার হিসেবের খাতায় দুঃখ করে লিখবে— ‘‘সে বেচারা তার পিঠেতে চাপায়ে/ কত শাড়ি-ধুতি-প্যান্ট লইয়া যায়/... একখানা ধুতি-প্যান্ট পরিতে না পায়!’ পুলিশ বেয়াড়ামি দেখেছে, ‘অ্যারেস্ট’ করেছে। বিতর্কটা হল, গ্রেফতারির ধরন নিয়ে। ‘আসামিরা’ অবশ্য মুচলেকার বিনিময়ে খালাস পেয়েছে গত সোমবার। টিভি দেখিয়েছে সে ছবি। জেলের ফটক দিয়ে বেরিয়ে আসছে আট জন। হঠাৎ এক জন পাশের জনকে ঠেলে নেচে নিল কয়েক পা। ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়..।’

‘‘দুনিয়া জুড়ে খবর হব জানলে আমিও কিন্তু জেল থেকে একটু ভদ্র ভাবে বেরোতাম’’— মজা করলেন কলকাতার তরুণ চাকুরে। আসলে হয়েছেও তো তা-ই। উত্তরপ্রদেশের জালৌন জেলার ওরাই জেলের এই ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার খবর করেছে পাকিস্তানের ‘জিও নিউজ’ থেকে বিলেতের ‘ডেলি মেল’। ওয়েবসাইটেও সে খবর গোগ্রাসে পড়েছে লোকে। হেডলাইন— ‘দামী গাছ খাওয়ার অপরাধে চার দিনের জেল আটটি গাধার।’

জেলের আবাসন চত্বরে বসেছিল গাছের চারা। সেই গাছই মুড়িয়েছে গাধায়! ওরাই জেলের হেড কনস্টেবলের যুক্তি, ‘‘প্রায় ষাট হাজার টাকার গাছ! গাধার মালিককে অনেক বার বলেছিলাম, ওদের বেঁধে রাখতে। শোনেনি। শেষে গত ২৪ তারিখ সিনিয়রদের নির্দেশে গাধাগুলোকে ধরে এনে জেলে
ঢুকিয়ে দিই।’’

এমন যে সত্যিই ঘটেছে, সেটাই বিশ্বাস করানো যাচ্ছিল না কলকাতার দুই কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের সুপারকে। তাঁরা বলেছেন, ‘‘এ অবিশ্বাস্য! তা ছাড়া মানুষের জেলে জীবজন্তু রাখা যায় নাকি!’’

ওরাই জেলের সুপার সীতারাম শর্মা সে কথা মেনেছেনও। বলেছেন, ‘‘গাধাকে গ্রেফতারের কোনও আইন নেই, জানি। কমলেশ আসলে কথাই শুনছিল না। তাই মুচলেকা লিখিয়ে নিয়েছি যে, ও আর যেখানে-সেখানে গাধা ছেড়ে রাখবে না।’’ যদিও এ দিন উল্টো গেয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। বলেছে, গাধাদের ধরেছিল তো বন দফতর! পুলিশ কী করবে?

কেউ কেউ বলছেন, কমলেশের দশাটাই এখন প্রসিদ্ধ এক গাধার মতো। সাহিত্যিক কৃষণ চন্দরের সৃষ্টি সেই সে গাধা কথা-বলিয়ে, পড়িয়ে-লিখিয়ে। কাপড় কাচতে গিয়ে তার ধোপাকে কুমিরে খেলে ক্ষতিপূরণের আশায় সরকারি অফিসে যায় গাধা। কর্তারা তাকে বলেন, ‘‘ধোপাকে তো কুমিরে খেয়েছে, আমরা খেয়েছি নাকি!’’ বঙ্গানুবাদে ওই উপন্যাসের নাম— ‘আমি গাধা বলছি’। কারও আবার মনে পড়েছে স্প্যানিশ কবি হুয়ান রামন হিমেনেথের কবিতার ছোট্ট গাধা ‘প্লাতেরো’কে। মঙ্গলবার সকালে হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে গাধাদের গ্রেফতারির খবরের সঙ্গে ঘুরছিল বাংলা ব্যান্ডের গানও। রূপক-প্রেক্ষিত আলাদা। তবু ‘চন্দ্রবিন্দু’র সেই গান জুড়ে তো ‘তৃতীয় সুর’ আর ‘ষষ্ঠ সুর’ই!

সন্ধ্যায় সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বললেন, তাঁদের ছোটবেলায় বাড়িতে গরু ঢুকলে খোঁয়াড়ে দিয়ে আসার চল ছিল। তার জন্য কিছু পয়সা পাওয়া যেত। আবার মালিককেও বেশি পয়সা দিয়ে খোঁয়াড় থেকে সেই পোষ্যকে ছাড়িয়ে আনতে হতো। ‘‘গাধাদের তো বুঝতে হবে যে, তারা জেল খাটছে। সেটা না হলে এই জেলখাটা অর্থহীন। এটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছে,’’— হাসতে হাসতে বললেন শীর্ষেন্দুবাবু।

Donkey Uttar Pradesh গাধা উত্তরপ্রদেশ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy