বাস দুর্ঘটনায় দু’টো হাতই অকেজো হয়ে গিয়েছিল বছর উনিশের শ্রেয়ার। কনুইয়ের পর থেকে হাতের উপরের অংশ বা বাজু আর কাজ করত না। অস্ত্রোপচার করে হাতের ওই অংশ আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করেছিল শ্রেয়া এবং তার পরিবার। কিন্তু সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখাল কোচির অমৃতা হাসপাতাল। প্রায় ১৩ ঘণ্টার বিরল অস্ত্রোপচার করে শ্রেয়ার দু’টো হাতেরই বাজু প্রতিস্থাপন হল। এই বিরল অস্ত্রোপচার এশিয়াতেও প্রথম বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
আরও পড়ুন: ডাস্টার দিয়ে পিটিয়ে ক্লাসে ছাত্রের হাত ভাঙলেন শিক্ষিকা
মনিপাল ইন্সটিটিউটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্রী শ্রেয়া সিড্ডানাগৌড়া। শ্রেয়ার কথায়, ‘‘দু’টো হাত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গোটা জগৎটাই আমার কাছে অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। পরে মা’র কাছে জানতে পারি হাত প্রতিস্থাপন এখন ভারতেও হচ্ছে। ফের সুস্থ জীবনে ফেরার স্বপ্ন দেখি।’’ প্রতিস্থাপনের আগে কৃত্রিম হাত ব্যবহার করতেন শ্রেয়া। কিন্তু সেই হাতে সব কাজ ঠিকঠাক মতো করা যেত না বলেই জানিয়েছেন তিনি। অগস্টের শেষে তিনি ভর্তি হন কোচির অমৃতা হাসপাতালে। দাতাও খুঁজে পাওয়া যায়। বছর কুড়ির এক কলেজ ছাত্র। মোটরবাইক দুর্ঘটনায় ওই যুবকের মস্তিষ্কের মৃত্যু হওয়ায় তাঁর অঙ্গ দানের সিদ্ধান্ত নেন তাঁর পরিবারের লোকজন।
আরও পড়ুন: দশমীতে সঙ্ঘের মঞ্চে অতিথি মুসলিম, দলিত
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ২০১৫-তে এই হাসপাতালেই ভারতের মধ্যে প্রথমবার হাত প্রতিস্থাপনের জন্য অস্ত্রোপচার হয়। এর পর চার বার ওই অস্ত্রোপচার হয়েছে। তবে হাতের উপরের অংশের অস্ত্রোপচার এই প্রথম। হাসপাতাল সূত্রে খবর, মোট ১৩ ঘণ্টা ধরে ২০ জন সার্জন এবং ১৬ জন অ্যানাসথেসিস্টের মেডিক্যাল টিম ওই অস্ত্রোপচার করেছেন। চিকিৎসক সুব্রহ্মণ্যম আইয়ার জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত বিশ্বে মোট ন’বার বাজু প্রতিস্থাপন হয়েছে। এশিয়াতে প্রথম অমৃতা হাসপাতালেই এই অস্ত্রোপচারের কাজ হল। এই ধরণের অস্ত্রোপচার খুব জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। প্রতিস্থাপনের পরেও অনেক সময় ওই অঙ্গ সঠিক ভাবে সাড়া দেয় না। তবে শ্রেয়ার ক্ষেত্রে এই অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। মেডিক্যাল টিমের আরও দু’জন চিকিৎসক মোহিত শর্মা এবং রবিশঙ্করণের কথায়, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন অঙ্গ ঠিকঠাক ভাবে কাজ করা শুরু করে দেবে। এক বছরের মধ্যেই শ্রেয়া অন্তত ৮৫ শতাংশ কাজ তার হাত দিয়েই করতে পারবে।