সেনা অভিযানের পর নিজের সঙ্গেই নতুন লড়াই শুরু হল নরেন্দ্র মোদীর।
দু’দিন আগের পরিস্থিতি ছিল, বিরোধী দলে থেকে মোদী যে কথা বলতেন, প্রধানমন্ত্রী হয়ে তা করেন না। আর এ বারে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে জঙ্গি দমনের পর সেই মাত্রাটি বজায় রাখাই মোদীর কাছে এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ, যে ঝুঁকি নেওয়ার পর গোটা দেশের সমর্থন তিনি পেয়েছেন।
সনিয়া গাঁধীর পর আজ রাহুল গাঁধীও উত্তরপ্রদেশে তাঁর রাজনৈতিক সফরের ফাঁকেই প্রধানমন্ত্রীকে ঢালাও তারিফ করতে বাধ্য হলেন। বললেন, গত আড়াই বছরে প্রধানমন্ত্রী এই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর মতো পদক্ষেপ করেছেন। তার জন্য গোটা দেশ তাঁর সঙ্গে আছে। কথায় কথায় মোদীকে গাল পাড়া অরবিন্দ কেজরীবালও আজ বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করে বলেন, ‘‘নিরাপত্তার জন্য প্রধানমন্ত্রী যে পদক্ষেপই করুন, আমরা তাঁর সঙ্গে আছি।’’
কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব বলছেন, পাকিস্তান তো চুপ করে বসে থাকবে না। সীমান্তে বিক্ষিপ্ত হামলা যেমন শুরু হয়েছে, তেমনই দেশের ভিতরে ঢুকে আসা জঙ্গিরাও হামলার চেষ্টা করবেই। আর কঠোর হাতে সেই সব হামলা আগেভাগে প্রতিরোধ করাই এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। তা না হলে আজ যে গোটা বিরোধী শিবির প্রধানমন্ত্রীকে ‘ধন্য ধন্য’ করছে, তারাই তখন সমালোচনার ঝড় বইয়ে দেবে।
আজ যে জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুলে জাত-পাত-ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে নরেন্দ্র মোদী সকলকে একসূত্রে বাঁধতে পেরেছেন, একটি বিফল পদক্ষেপ তাতে জল ঢেলে দিতে পারে। তাই নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে যে মাপকাঠি প্রধানমন্ত্রী নিজেই নির্ধারণ করেছেন, এখন সেটি বজায় রাখার লড়াই তাঁকে করে যেতে হবে নিরন্তর। সীমান্তে ও দেশের ভিতর নিরপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতার উপরেই তাই বাজি রাখতে হচ্ছে তাঁকে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তাই সেনা অভিযানের পর দুটি গোটা দিন পেরিয়ে গেল, প্রধানমন্ত্রী নিজে বসে রয়েছেন মুখে কুলপ এঁটে। না গতকাল তিনি এই নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেছেন, না আজ সকালে দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে স্বচ্ছতা অভিযান নিয়ে সুদীর্ঘ বক্তৃতায় পাকিস্তান নিয়ে মুখ খুলেছেন। কথায় কথায় যে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বিষয়ে টুইট করেন, কাল থেকে আজ পর্যন্ত এই বিষয়ে একটিও বাক্য ব্যয় করেননি সেখানেও। বিজেপির এক নেতার মন্তব্য, ‘‘পরশু রাতের টোয়েন্টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ছক্কা হাঁকিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ বারে টেস্ট ম্যাচেও জিততে হবে তাঁকে। কারগিল, পোখরান করেও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী যে সাহস দেখাতে পারেননি, নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে হামলার ঝুঁকি নিয়ে নরেন্দ্র মোদী তা করে দেখিয়েছেন। এ বারে তাঁকে নিজের সঙ্গেই লড়ে যেতে হবে।’’
অমিত শাহের নেতৃত্বে বিজেপি অবশ্য দেশে তৈরি জাতীয়তাবাদের হাওয়াকে মোদীর পালে নিয়ে আসার জন্য সাংগঠনিক স্তরে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। উত্তর প্রদেশের প্রচারে এখন সামরিক অভিযানে নরেন্দ্র মোদীর ‘ইচ্ছাশক্তি’কে বড় করে তুলে ধরতে বলা হয়েছে। উত্তর প্রদেশে বিজেপির ছায়ামুখ রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও মোদী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের নির্বাচনী কেন্দ্র লখনউয়ের পথে উৎসবে সামিল হয়েছেন সংখ্যালঘুরাও। ‘ইসলামিক সেন্টার অফ ইন্ডিয়া’র ব্যানারে। সেনা হামলার আগে জাতীয়তাবাদের উগ্র হাওয়ায় সংখ্যালঘুরা যাতে ‘দলছুট’ মনে না করে, তার জন্য তাদের কাছে টানার বার্তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সংখ্যালঘু মন্ত্রী মোখতার আব্বাস নকভিকেও এখন সংখ্যালঘু এলাকায় ‘পঞ্চায়েত’ করা শুরু করেছেন। কিন্তু সেনা অভিযানের পর এক ধাক্কায় জাতীয়তাবাদের হাওয়ায় সকলেই এক ছাতার তলায়। আর এটিকেই পুঁজি করে আপাতত মোদীর জয়ধ্বনি করে ভোটযুদ্ধ লড়তে চাইছেন অমিত শাহ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy