কয়েক ঘণ্টার স্বস্তি মাত্র।
বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ সংঘর্ষবিরতির খবর শুনে নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম সকলে। কিন্তু সন্ধ্যের পরে আবার একই পরিস্থিতি। জয়সলমের ফের অন্ধকারে। জানি না, আবার কত দিন এ ভাবে চলবে।
সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’ ছবি দেখে ৩৫ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে জয়সলমেরে এসেছিলাম। তার পরে পাকাপাকি ভাবে থেকে গিয়েছি। এমন পরিস্থিতি কখনও হয়নি। আমার দোকান রয়েছে সোনার কেল্লার ভিতরে। সন্ধ্যার পরে সোনার কেল্লা গত দু-তিন দিন ধরে ভূতুড়ে কেল্লার মতো চেহারা নিচ্ছিল। পাঁচ থেকে ছ’হাজার মানুষের বসবাস সোনার কেল্লায়। প্রতি দিন অজস্র পর্যটক আসেন। কিন্তু গত দুতিন দিন ধরে পুরো কেল্লাটাই কেমন একটা মৃতপ্রায় চেহারা নিয়েছিল। কেউ বাড়ি থেকে বেরোচ্ছিল না। সন্ধ্যা হলে অন্ধকার। আকাশের দিকে তাকালে মাঝেমধ্যেই লাল আলো আর বিস্ফোরণের শব্দ। সেনাবাহিনীর লোকজন বলছিলেন, পাকিস্তানের দিক থেকে ড্রোন উড়ে আসছে আর সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে। কলকাতায় আমার অনেক চেনাশোনা রয়েছে। সবাই উদ্বেগ নিয়ে ফোন করছেন। এখানকার পুরনো যাঁরা বাসিন্দা, তাঁরা ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময়ে গোলাগুলির শব্দ খুব শুনতেন। টানটান পরিস্থিতি ছিল সেই সময়ে। সে সব গল্পও ঘুরেফিরে আসছিল।
শুক্রবার এখানে রেড অ্যালার্ট ছিল। কোভিডে যেমন লকডাউনের সময়ে দোকানপাট সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল,এখনও তেমন লোকজনকে বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছিল। রাস্তায় কেউ বেরোলে পুলিশ তাড়া দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিত। শুক্রবার ও শনিবারে সব পর্যটকেরা জয়সলমীর ছেড়ে গিয়েছেন। গাড়ি-মোটরবাইক সব বন্ধ। রাত্রি নামলে সোনার কেল্লা আলোয় ঝলমল করে। সেখানে সারা শহরে আলো বন্ধ ছিল। এমনকি বাড়ির মিটারে যে লাল আলো জ্বলে, সেখানেও টেপ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
মানুষ সরকারের নির্দেশিত পথে চলছে। কারণ, জীবনের চেয়ে বড় কিছুই নয়। জয়সলমের শহর থেকে লোঙ্গেওয়ালা আর তানোট সীমান্ত খুব দূরে নয়। তাই বোমার শব্দ ক্ষীণ ভাবে শহরের দিকেও শোনা যাচ্ছিল। ব্যবসার সূত্রে সীমান্তের কোনও কোনও গ্রামের লোকজনের সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। ফোনে কথাবার্তা বলার সময়ে অনেকেই মৃত্যুভয়ের কথা বলছিলেন। জয়সলমেরে যাঁরা কাজের জন্য অন্য জেলা থেকে এসেছিলেন, তাঁরা ফিরে গিয়েছেন। লোকজন খুব বিভ্রান্ত। কেউ মনে করছেন ঘরে থাকবেন। যদি বোমা পড়ে পরিবারের সঙ্গেই মারা যাবেন। কেউ কেউ আবার বোমার আওয়াজ পেলে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে পড়ছেন।
বৃহস্পতিবার জয়সলমের শহরের আশপাশেও বোমার শব্দ শোনা গিয়েছে। শহরের লোকজন ভয়ে সারা রাত জেগে কাটিয়েছেন। তবে শুক্রবার শহর থেকে শব্দ কমেছিল। আর এখন? আবার সেই অন্ধকার।
সোনার কেল্লা কবে ঝলমল করবে?
অনুলিখন: প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)