E-Paper

জলবায়ু-বদলের কবলে গঙ্গোত্রী, দাবি গবেষণায়

গবেষণায় দেখানো হয়েছে, গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে ভাগীরথীতে প্রতি সেকেন্ডে থেকে ২৮ ঘনমিটার জল এসে পৌঁছয়। সব থেকে বেশি জল আসে বরফ গলে। বার্ষিক প্রবাহের ৬৪%।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৩২
গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে শুরু করে গঙ্গা নদীর অববাহিকায় চার দশক ধরে কী ভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে, তা উঠে এল একটি গবেষণায়।

গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে শুরু করে গঙ্গা নদীর অববাহিকায় চার দশক ধরে কী ভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে, তা উঠে এল একটি গবেষণায়। ছবি: সংগৃহীত।

গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে শুরু করে গঙ্গা নদীর অববাহিকায় চার দশক ধরে কী ভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে, তা উঠে এল একটি গবেষণায়। সম্প্রতি ‘জার্নাল অব দ্য ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব রিমোট সেন্সিং’-এ প্রকাশিত হয়েছে আইআইটি ইন্দোর ও কিছু সহযোগী প্রতিষ্ঠানের এক দল গবেষকের ওই গবেষণাপত্র। তাঁরা জানিয়েছেন, গঙ্গার নিম্নগতিতে ভাগীরথীর অনেক দূর পর্যন্ত এর প্রভাব পড়তে পারে।

গঙ্গোত্রী ও গঙ্গার অববাহিকায় ৪১ বছরের জলবৈজ্ঞানিক পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে ওই গবেষণায়, এ যাবৎ যা সব থেকে বিস্তারিত ও দীর্ঘ বলে দাবি করা হচ্ছে। তাতে দেখানো হয়েছে, গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে ভাগীরথীতে প্রতি সেকেন্ডে থেকে ২৮ ঘনমিটার জল এসে পৌঁছয়। সব থেকে বেশি জল আসে বরফ গলে। বার্ষিক প্রবাহের ৬৪%। হিমবাহ গলে ২১%, বৃষ্টি থেকে আসে ১১%। ভিত্তিপ্রবাহে থাকা ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ মাত্র ৪%।

গবেষণাপত্রের প্রধান প্রণেতা পারুল ভিঞ্জ বলছেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য গত চার দশকের বেশি সময় ধরে এই বিন্যাসটাই বদলে যাচ্ছে।” তিনি জানান, বরফ গলা জলের পরিমাণ ক্রমশ কমছে, বাড়ছে বৃষ্টি ধোয়া জল ও ভিত্তিপ্রবাহের পরিমাণ। ১৯৯০-এর পরে গঙ্গোত্রী হিমবাহ প্রক্রিয়ার সর্বোচ্চ জল ছাড়ার সময়টা অগস্ট থেকে জুলাইয়ে চলে এসেছে। যা শীতকালীন অধঃক্ষেপণ (বায়ুমণ্ডল থেকে জলীয় পদার্থ বা বরফকণা নীচে নেমে আসা) কমা ও গ্রীষ্মে দ্রুত বরফ গলার ফল বলে পারুল জানান। তিনি বলছেন, “সময় এবং পরিমাণ, দু’টিই এ ক্ষেত্রে সমান গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত নদীর নিম্নগতির এলাকাগুলির জন্য।” এর প্রভাব কৃষিসেচ এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপরে পড়ছে।

ওই গবেষণায় দেখানো হয়েছে, কী ভাবে তাপমাত্রার বৃদ্ধি ও অধঃক্ষেপে পরিবর্তন হিমালয়ের জলতাত্ত্বিক বদল ঘটিয়ে চলেছে। অববাহিকা অঞ্চলের তাপমাত্রা বার্ষিক তাপমাত্রা বাড়লেও অধঃক্ষেপের পরিমাণগত পরিবর্তনের কোনও দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে না। যেটা হচ্ছে, সেটা এক ধরনের বদল। বেশি বৃষ্টি, কম তুষার। এতে জোড়া চাপ তৈরি হচ্ছে তুষার-নির্ভর প্রক্রিয়াটিতে। আর্দ্র গ্রীষ্মকালে জলপ্রবাহ বাড়ছে, উষ্ণ শীতকালে বরফ দানা বাঁধা কমছে।

অন্য দিকে দেখা যাচ্ছে, ১৯৮০-১৯৯০ তুষার গলে সারা বছরের চার ভাগের তিন ভাগ জল আসছিল। যা ২০০১-২০১০ নাগাদ অর্ধেকে নেমে আসে। তার পরের দশকে অবশ্য শীতকালীন অধঃক্ষেপ কিছুটা বাড়ায় সেটা আবার অল্প বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ১৯৮০ নাগাদ বৃষ্টি থেকে আসা জলের যে পরিমাণ ছিল ২ শতাংশ মাত্র, সেটা ২০০০-এ এসে ২২% ছুঁয়েছে। পারুল বলছেন, “বরফ গলা জল আসা কমে বৃষ্টির জলের ভাগ বাড়াটা জলবায়ু পরিবর্তনের মার্কামারা একটি লক্ষণ। ভারসাম্যের সামান্য বদলও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, যে জলধারার উপরে লক্ষ লক্ষ মানুষ নির্ভর করেন।”

পারুল আরও বলেন যে, এ ক্ষেত্রে আরও বিশদ গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। দরকার আরও নানা পদ্ধতিতে নিবিড় পর্যবেক্ষণের।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Gangotri Climate Change Climate Crisis Research

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy