একা লড়ার সিদ্ধান্তেরই খেসারত দিতে হল আম আদমি পার্টি (আপ)-কে! কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হলে ভোটের ফলাফল উল্টে যেতে পারত। ভোটের পাটিগণিতের বিশ্লেষণ তেমনই বলছে। ভোটপণ্ডিতেরা তেমনই মনে করছেন। পরিসংখ্যান বলছে, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র দুই শরিক আপ এবং কংগ্রেসের ভোট কাটাকাটির ফলে ১৪টি আসনে জয় নিশ্চিত করে নিয়েছে বিজেপি। শেষ পর্যন্ত ওই ১৪ আসনই দিল্লির ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে নির্ধারক ভূমিকায় উঠে এসেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরেই আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল ঘোষণা করে দেন, দিল্লির ভোটে তাঁর দল একা লড়বে। ফলে লোকসভা ভোটের মতো এ বার আর আপ-কংগ্রেসের আসন বোঝাপড়া হয়নি। একক ভাবে দিল্লির ৭০টি বিধানসভা আসনেই প্রার্থী দেন কেজরী। ভোটগণনার পর দেখা যাচ্ছে, কেজরীর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসেরই মাসুল গুনতে হচ্ছে আপকে। ২২টি আসন আপের দখলে। বিজেপি পেল ৪৮টি আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ৩৬টি আসন। আপ এবং কংগ্রেসের ভোট কাটাকাটি না-হলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হাতছাড়া হতে পারত বিজেপির। ‘ইন্ডিয়া’র দুই শরিকের জোট হলে আরও অন্তত ১৩টি আসনে জয়ের সম্ভাবনা ছিল আপের। খাতা খোলার সুযোগ ছিল কংগ্রেসের কাছেও।
আপের দুই প্রথম সারির নেতা কেজরীওয়াল এবং মণীশ সিসৌদিয়া পরাস্ত হয়েছেন বিজেপির কাছে। ত্রিমুখী লড়াইয়ে ভোট কাটাকাটি না হলে দুই নেতারই জেতার সুযোগ ছিল। নয়াদিল্লি বিধানসভা কেন্দ্রে আপ প্রধান কেজরীওয়াল পরাস্ত হয়েছেন ৪,০৮৯ ভোটে। ওই আসনে কংগ্রেসের টিকিটে দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের পুত্র সন্দীপ পেয়েছেন ৪,৫৬৮ ভোট। সন্দীপের প্রাপ্ত ভোট আপের ঝুলিতে গেলে খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারতেন কেজরী। জঙ্গপুরা বিধানসভা কেন্দ্রে ৬৭৫ ভোটে পরাজিত হয়েছেন আপ নেতা মণীশ সিসৌদিয়া। সেখানে কংগ্রেস পেয়েছে ৭,৩৪০ ভোট। সেখানে কংগ্রেসের ভোটের সামান্য কিছু অংশও আপের ঝুলিতে গেলে জয়ী হতেন সিসৌদিয়া।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
এ ছাড়া তিমারপুর, বাদলী, নাঙ্গলোই দজাট, মাদীপুর, রাজেন্দ্রনগর, কস্তুরবানগর, মালব্যনগর, মহরৌলী, ছত্রপুর, সঙ্গমবিহার, গ্রেটার কৈলাস এবং ত্রিলোকপুরীতেও গণনা-পরবর্তী পরিসংখ্যান এমনই। কস্তুরবানগরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কংগ্রেস। সেখানে ১১ হাজারের কিছু বেশি ভোটে পরাস্ত হয়েছে তারা। ওই আসনে আপ পেয়েছে সাড়ে ১৮ হাজারেরও বেশি ভোট। ‘ইন্ডিয়া’র দুই শরিক জোট বেঁধে লড়লে আসনটি কংগ্রেস জিতত বলে ভোটপণ্ডিতদের মনে বিশেষ সন্দেহ নেই।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
আরও পড়ুন:
ত্রিলোকপুরীতে কেজরীর দল হেরেছে ৩৯২ ভোটে। সেখানে কংগ্রেস পেয়েছে ৬,১৪৭টি ভোট। সঙ্গম বিহারে ৩৪৪ ভোটে আপকে হারিয়েছে বিজেপি। সেখানে কংগ্রেস পেয়েছে ১৫ হাজারেরও বেশি ভোট। তিমারপুরে আপ হেরেছে ১,১৬৮ ভোটে। সেখানে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ৮,৩৬১। বাদলীতে আপ হেরেছে ১৫ হাজারের কিছু বেশি ভোটে। কংগ্রেস সেখানে পেয়েছে ৪১ হাজারেরও বেশি ভোট। নাঙ্গলোই জাটে আপ হেরেছে ২৬ হাজারের কিছু বেশি ভোটে। ওই বিধানসভা আসনে কংগ্রেস পেয়েছে ৩২ হাজার ভোট। মাদীপুরে আপকে ১১ হাজারের কাছাকাছি ভোটে হারিয়েছে বিজেপি। কংগ্রেস সেখানে পেয়েছে প্রায় ১৮ হাজার ভোট। রাজেন্দ্রনগরে কংগ্রেস পেয়েছে চার হাজারের সামান্য বেশি ভোট। ওই আসনে আপ হেরেছে ১,২৩১ ভোটে। কস্তুরবানগরে আপ হেরেছে ১১ হাজার ভোটে। সেখানে কংগ্রেস পেয়েছে ১৮ হাজারের বেশি ভোট। মালব্যনগর, মহরৌলী, ছত্রপুর, গ্রেটার কৈলাসেও কংগ্রেসের ভোট আপের ঝুলিতে গেলে সমীকরণ অন্য রকম হত।
আরও পড়ুন:
কংগ্রেস এবং আপের প্রাপ্ত ভোট মিলিত হলে এই ১৪টি আসন বিজেপির হাতছাড়া হওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা ছিল। সমীকরণ সে দিকে এগোলে বিজেপির আসন ৪৮ থেকে নেমে আসত পারত ৩৪-এ। দিল্লিতে এক দশকের ক্ষমতা আবার ধরে রাখার সম্ভাবনা ছিল আপের। প্রসঙ্গত, মুস্তফানগর বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের পাশাপাশি আপের ভোট কেটেছে আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দলও। সেখানে আপ হেরেছে ১৭,৫৭৮ ভোটে। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওয়েইসির ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন’ (এআইএমআইএম বা মিম)। তারা পেয়েছে ৩৩ হাজারের বেশি ভোট। মিম যদিও বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র অংশ নয়। কংগ্রেস ওই আসনে ১১ হাজারের বেশি ভোট কেটেছে।