দেশের চার রাজ্যের পাঁচ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ চার, আর শাসকজোট এনডিএ এক। ফলাফলের সংক্ষিপ্তসার এটাই। তবে ‘ইন্ডিয়া’র অন্দরের হিসাবনিকাশ কিছুটা বদলেছে। কেরলের নিলাম্বুর বিধানসভা আসনটি বামেদের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। বাকি চার আসনে জয়ী হয়েছে শেষ বার বিজয়ী হওয়া দলগুলিই।
পঞ্জাব
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে নিজের লাইসেন্সপ্রাপ্ত পিস্তল পরিষ্কার করতে গিয়ে ভুল করে গুলি চালিয়ে ফেলেন পঞ্জাবের লুধিয়ানা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন আপ বিধায়ক গুরপ্রীত বসসি গোগি। মাথায় গুলি লেগে মৃত্যু হয় তাঁর। গোগির মৃত্যুর কারণে উপনির্বাচন হয় এই কেন্দ্রে। আপের তরফে প্রার্থী করা হয়েছিল রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ তথা শিল্পপতি সঞ্জীব অরোরাকে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের ভারতভূষণ আশুকে ১০,৬৩৭ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন তিনি। তৃতীয় স্থানে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী জীবন গুপ্ত। চতুর্থ স্থানে চলে গিয়েছে শিরোমণি অকালি দল।
গুজরাত
গুজরাতের দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয় বৃহস্পতিবার। একটি কেন্দ্রে জয়ী হয়েছে বিজেপি, আর একটি কেন্দ্রে আপ। অবশ্য ওই দু’টি আসন এর আগেও ওই দুই দলের দখলেই ছিল।
ভিসাভদর
গুজরাতের ভিসাভদর কেন্দ্রের আপ বিধায়ক ভূপেন্দ্র ভায়ানি ২০২৩ সালে বিধায়কপদে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন। ফলে এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। আপের তরফে প্রার্থী করা হয় দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি গোপাল ইটালিয়াকে। বিজেপি প্রার্থী করে গুজরাতের প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি কিরীত পটেলকে। ভোটের ফল বলছে ১৭, ৫৫৪ ভোটে বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছেন আপের প্রার্থী। ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে অনেকটা পিছনে থেকে তৃতীয় স্থানে কংগ্রেস। ২০০৭ সাল থেকে গুজরাতের এই আসনে কখনও জয়ী হয়নি বিজেপি। উপনির্বাচনে সেই ধারার ব্যত্যয় ঘটবে বলে আশাবাদী ছিল পদ্মশিবির। তবে শেষমেশ নিজেদের জেতা আসন ধরে রাখল আপ।
কড়ী
গত ফেব্রুয়ারি মাসে মৃত্যু হয় গুজরাতের কড়ী বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক কারসন সোলাঙ্কির। উপনির্বাচনের ফল বলছে, তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত এই আসনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের রমেশভাই চাভদাকে ৩৯৪৫২ ভোটে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন বিজেপির রাজেন্দ্রকুমার (রাজুভাই) দানেশ্বর চাভদা। ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে অনেকটা পিছিয়ে থেকে তৃতীয় স্থানে আপ।
কেরল
কেরলের নিলাম্বুর বিধানসভা কেন্দ্রে নিজেদের জেতা আসন ধরে রাখতে পারেনি বামেরা। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে, এলডিএফ জোটের প্রার্থী সিপিএম নেতা এম স্বরাজকে ১১,০৭৭ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী আর্যদান শৌকথ। ২০১৬ এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাম জোট এলডিএফ সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হিসাবে এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন আনবর। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। বিধায়কপদ থেকেও ইস্তফা দেন। ফলে নিলাম্বুর কেন্দ্রে উপনির্বাচন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। ভোটের ফল বলছে, নিলাম্বুরের গত দু’বারের বিধায়ক আনবর উপনির্বাচনে তেমন দাগ কাটতে পারেননি। কংগ্রেস এবং সিপিএম প্রার্থীর পরে তৃতীয় স্থানে শেষ করেছেন তিনি। তবে তাঁর ঝুলিতে গিয়েছে প্রায় ২০ হাজার (১৯,৭৬০) ভোট।
কালীগঞ্জ
নদিয়ার কালীগঞ্জে বিজেপি প্রার্থী আশিস ঘোষকে ৫০,০৪৯ ভোটে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী আলিফা আহমেদ। বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী কাবিলউদ্দিন আহমেদ ২৮৩৪৮টি ভোট পেয়ে রয়েছেন তৃতীয় স্থানে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর পিতা, কালীগঞ্জের প্রয়াত তৃণমূল বিধায়ক নাসিরুদ্দিন (লাল) আহমেদ ৪৬,৯৮৭ ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। চার বছর পর উপনির্বাচনে সেই ব্যবধান আরও বাড়িয়ে জয়ী হলেন কন্যা আলিফা।
নিলাম্বুর বাদ দিয়ে দলগুলি নিজেদের আসন ধরে রেখেছে। তবে দিল্লি বিধানসভা ভোটে পরাজয়ের পর জাতীয় রাজনীতিতে খানিক গুরুত্ব হারানো আপ দু’টি আসন জেতায় (আসন ধরে রাখায়) অরবিন্দ কেজরীওয়ালদের প্রাসঙ্গিকতা খানিক ফিরল বলে মনে করা হচ্ছে। গুজরাতের মতো রাজ্যে বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেস এবং আপ হাত মেলাতে পারে কি না, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে।