E-Paper

দিল্লিতে ধর্নায় বসার হঁশিয়ারি অভিষেকের

গত রাতেই তৃণমূল জেনে গিয়েছিল, বৈঠক এড়াচ্ছেন গিরিরাজ। তাঁর অফিস সময়াভাবের কথা জানিয়ে দেওয়ার পরে দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন প্রতিমন্ত্রীর সময় চান।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:১১
tmc leaders.

কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের দফতরের সামনে বুধবার অপেক্ষা করছেন অভিষেক-সহ তৃণমূল সাংসদেরা। পিটিআই।

রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় বকেয়ার দাবিতে আজ চব্বিশ জন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদকে নিয়ে দিল্লির কৃষি ভবনে কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়লেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের তরফে দিনভর যতই শীতল দেওয়াল গড়া হয়েছে, ততই মরিয়া দেখিয়েছে অভিষেক-বাহিনীকে। শেষ পর্যন্ত মন্ত্রকের সচিব শৈলেশ কুমারের সঙ্গে চল্লিশ মিনিটের বৈঠকের পরে তৃণমূলকে কেন্দ্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, দু’সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মন্ত্রীকে নিয়ে বৈঠকে বিষয়টির নিষ্পত্তি করা হবে। সেখানে থাকবেন মন্ত্রকের কর্তা এবং তৃণমূল সাংসদেরাও। সূত্রের খবর, বৈঠকে অভিষেক সচিবকে রীতিমতো কড়া ভাবে বলেছেন, পনেরো দিনের মধ্যে রাজ্যের টাকা ছাড়া না-হলে বঞ্চিত পরিবারগুলির দু’লক্ষ মানুষকে এনে দিল্লির রাস্তায় বসে পড়া হবে।

গত রাতেই তৃণমূল জেনে গিয়েছিল, বৈঠক এড়াচ্ছেন গিরিরাজ। তাঁর অফিস সময়াভাবের কথা জানিয়ে দেওয়ার পরে দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন প্রতিমন্ত্রীর সময় চান। কিন্তু নীরবই থাকে মন্ত্রক। আজ সকালে অধিবেশন মুলতুবি হওয়ার আগে অভিষেকের সঙ্গে কথা বলেন তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর ট্রেজ়ারি বেঞ্চে গিয়ে গিরিরাজকে তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসানোর অনুরোধ করেন রাজনাথ সিংহকে। মন্ত্রী না পারলে প্রতিমন্ত্রী, নিদেনপক্ষে সচিবের সঙ্গে বৈঠক চান সুদীপ। তৃণমূলের একটি অংশের মতে, রাজনাথ গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে যোগাযোগ করার ফলে সচিব পর্যায়ে দীর্ঘ বৈঠকটি করা সম্ভব হয়। তার আগে অবশ্য বেলা ১২টা নাগাদ সংসদ থেকে অভিষেকের নেতৃত্বে সুদীপ, ডেরেক, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মালা রায়, দোলা সেন-সহ পঁচিশ জন তৃণমূল সাংসদ কৃষি ভবনে পৌঁছন। সেখানে তখন হাজির বড় গোলমাল থামানোর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী। প্রথমে সাংসদদের ঢুকতে বাধা দেওয়ার পরে কিছুক্ষণ বাদানুবাদ চলে। এর পরে সাংসদেরা মন্ত্রীর ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। তাঁদের জানানো হয়, মন্ত্রী বিহারে চলে গিয়েছেন। অভিষেককে বলতে শোনা যায়, “এই কথা সত্যি না হলে কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা জেনে যাব। আজকের তথ্যপ্রযুক্তির যুগে কিছুই গোপন থাকে না!” শেষ পর্যন্ত সচিবের সঙ্গে কনফারেন্স হলে তাঁরা বৈঠক করেন।

অভিষেকের বক্তব্য, “আমাদের জানানো হয়েছে, বাংলার বিজেপির সাংসদ-বিধায়কেরা এসে কেন্দ্রকে রাজ্যের টাকা আটকে রাখতে বলছেন। বাংলার মানুষকে বলতে চাই, পরের নির্বাচনের আগে মনে রাখবেন, যাঁদের ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন, তাঁরা দিল্লিতে এসে বাংলার টাকা আটকে রাখার ষড়যন্ত্র করেছেন।” বৈঠকেই মন্ত্রকের কর্তাদের অভিষেক বলেছেন, অসম, মধ্যপ্রদেশ বা উত্তরপ্রদেশে বিপুল দুর্নীতির খবর এবং প্রমাণ তাঁদের কাছে রয়েছে। সেটা তিনি কেন্দ্রকে দিতেও পারেন। কিন্তু অন্যান্য রাজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু বাংলার টাকা বন্ধ রাখা হবে কেন? অভিষেকের মন্তব্য, “১৭ লক্ষ পরিবার কাজ করে টাকা পায়নি। বাকি আছে সাত হাজার কোটি টাকা।” তৃণমূলের দাবি, দুর্নীতির প্রমাণ থাকলে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কেন্দ্র ব্যবস্থা নিক। রাজ্যের প্রাপ্য কেন আটকে রাখা হবে? গত দু’বছরে ১৫১ বার বিভিন্ন কেন্দ্রীয় দল এসে তদন্ত করেও বাংলায় কোনও উল্লেখযোগ্য কারচুপি পায়নি, অথচ টাকাও ছাড়া হয়নি বলে দাবি রাজ্যের শাসক দলের।

বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, “কেন্দ্রীয় দল দুর্নীতি খুঁজে না পেলে তো টাকা চলেই যেত রাজ্যে। কোনও অফিসার কি বলেছেন রাজ্য বিজেপির কথায় টাকা আটকে রয়েছে? আবার দুর্নীতি হলে আবার অভিযোগ জানাব।” কলকাতায় চাকরি ও ডিএ-র দাবিতে যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ধর্না চলছে, তারাই দিল্লিতে ধর্নার হুমকি দিচ্ছে বলে কটাক্ষ করে দিলীপ বলেন, “একশো দিনের কাজে বাংলায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে। আমরাও চাই বাংলা টাকা পাক। দুর্নীতি হওয়ায় কেন্দ্র তদন্ত করে দেখছে। সন্তুষ্ট হলেই টাকা ছাড়বে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Abhishek Banerjee TMC Delhi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy