E-Paper

ভারসাম্যের অবস্থান থেকে সরে ভারত ঝুঁকে ইজ়রায়েলে

গাজ়ায় মানুষের অসহায় পরিস্থিতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে নয়াদিল্লি, পাশাপাশি ইরানের সঙ্গেও দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক ভারতের। বহু ভারতীয় সেখানে রয়েছেন পেশাগত কারণে।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২৫ ০৫:২৪
(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী এবং বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী এবং বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং এসসিও— পরপর দুই মঞ্চে ইজ়রায়েল-বিরোধী ভোট এড়িয়ে গেল ভারত। বিষয়টি নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে আক্রমণ করে এক দিকে যেমন আসরে ঝাঁপিয়েছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস, অন্য দিকে কূটনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। গাজ়ায় মানুষের অসহায় পরিস্থিতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে নয়াদিল্লি, পাশাপাশি ইরানের সঙ্গেও দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক ভারতের। বহু ভারতীয় সেখানে রয়েছেন পেশাগত কারণে। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্যালেস্টাইন এবং ইরান— এই দুই রাষ্ট্রের উপর ইজ়রায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যখন বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এককাট্টা হয়ে ভোট দিচ্ছে, ভারতের ভোটদানে বিরত থাকায় প্রশ্ন উঠেছে। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, যে ভারসাম্যের কূটনীতিতে বিশ্বাস করে মোদীর সরকার, তার থেকে কিছুটা বিচ্যুত হয়ে ইজ়রায়েলের দিকে ঝুঁকেছে সাউথ ব্লক।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, এসসিও-র যৌথ নিন্দা প্রস্তাব (ইজ়রায়েলের ইরান হামলা নিয়ে) থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়ে প্রস্তাবটিকেই কিছুটা দুর্বল করে দিয়েছে ভারত। ‘পক্ষপাতিত্বের’ প্রশ্নে এটা মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে ইজ়রায়েলের অস্ত্র সরঞ্জামের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ভারত। আবার ভারতের অস্ত্র সংস্থাও ইজ়রায়েলকে বিস্ফোরক এবং ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করে থাকে, গাজ়ার যুদ্ধে যা দেখা গিয়েছে। কৃষি প্রযুক্তি ও জলসম্পদের ক্ষেত্রে ইজ়রায়েলের প্রতি ভারতের নির্ভরতা ক্রমশ বাড়ছে। অন্য দিকে, এটাও ঠিক যে ইরানের চাবাহার বন্দরের উন্নয়নে ভারত সক্রিয়, মধ্য এশিয়ায় পণ্য রফতানিতে এই বন্দরের গুরুত্ব যথেষ্ট। পাকিস্তানকে এড়িয়ে ইরানের মাধ্যমে এই বাণিজ্য ভারতের জন্য লাভজনক।

উভয় রাষ্ট্রের সঙ্গেই সুসম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক ভোটাভুটিতে ভারতের ইজ়রায়েলপন্থী অবস্থানের কারণ হিসেবে তাই ব্লক রাজনীতির প্রসঙ্গ উঠে আসছে। ভারত আমেরিকার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি সম্পন্নের কাছাকাছি এসেছে। সে দেশের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত আচরণ সত্ত্বেও ওয়াশিংটনের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতেসক্রিয় নয়াদিল্লি।

এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার কৌশলগত মিত্র ও শরিক ইজ়রায়েলের পক্ষে থাকার জন্য আমেরিকার চাপকেও হিসেবের মধ্যে রাখা হচ্ছে। এসসিও গোষ্ঠীর দুই শক্তিশালী রাষ্ট্র চিন ও রাশিয়া ইরানের ঘনিষ্ঠ। কিন্তু ইজ়রায়েল এবং আমেরিকার সঙ্গে ভারতের কৌশলগত সম্পর্কের প্রেক্ষিতে মোদী সরকারের পক্ষে এসসিও-র বিবৃতির সঙ্গে সহমত হওয়া সম্ভব ছিল না ভারতের। তাই ভারসাম্য রাখতে চেয়েও শেষপর্যন্ত রাখতে পারছে না তারা। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, নয়াদিল্লি এবং তেহরানের মধ্যে সম্পর্ক এরপর একটু থমকেযেতে পারে।

যদিও ভারত সরকারি ভাবে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে বলেছে, আলোচনা এবং কূটনৈতিক পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ইজ়রায়েল এবং ইরানকে সংঘর্ষ থামানো জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চগুলিরও এই লক্ষ্যেই চেষ্টা চালানো উচিত বলে মনে করছে ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, ইরানের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। সংঘর্ষের পথ থেকে পিছিয়ে এসে দ্রুত কূটনৈতিক স্তরে বিষয়টি দেখার জন্যও ইরানি বিদেশমন্ত্রীকে প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লির এই সামগ্রিক অবস্থানের কথা এসসিও-র সদস্য রাষ্ট্রগুলিকেও জানানো হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Iran-Israel War Israel War Israel Iran War

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy