E-Paper

ভোটে কি ঘর এনডিএ-রও ভেঙেছে, জল্পনা

ভোটাভুটির আগের সন্ধ্যা পর্যন্ত এনডিএ শিবিরের দাবি ছিল, তাঁদের প্রার্থী ৪৩৬টি ভোট পেতে চলেছেন। ফল প্রকাশের পরে দেখা যায়, তার থেকে ১৬টি ভোট বেশি পেয়েছেন এনডিএ প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৪১

—প্রতীকী চিত্র।

বিরোধী শিবির ভেঙে ক্রস ভোটিং করানো গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বের মতে, গত কাল উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটাভুটিতে নিজের ঘর ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে এনডিএ শিবিরও। ভোটের ফল বিশ্লেষণ করে গেরুয়া শিবিরের উপলব্ধি, কম হলেও এনডিএ-র বেশ কিছু ভোট বিপক্ষে গিয়েছে। অন্য দিকে বিজেপি টাকা দিয়ে ভোট কিনেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

ভোটাভুটির আগের সন্ধ্যা পর্যন্ত এনডিএ শিবিরের দাবি ছিল, তাঁদের প্রার্থী ৪৩৬টি ভোট পেতে চলেছেন। ফল প্রকাশের পরে দেখা যায়, তার থেকে ১৬টি ভোট বেশি পেয়েছেন এনডিএ প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণন। আজ এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবি, তিনি নিশ্চিত যে বিপক্ষের অন্তত ৩৬টি ভোট এনডিএ পেয়েছে। কিন্তু সেটা হলে রাধাকৃষ্ণনের প্রাপ্ত ভোট হওয়া উচিত ছিল ৪৭২। গত কাল মোট ১৫ জন সাংসদের ভোট বাতিল হয়েছে। যার মধ্যে ১০ জন সাংসদই হলেন এনডিএ-র। সে ক্ষেত্রে রাধাকৃষ্ণনের প্রাপ্ত ভোট হওয়া উচিত ছিল ৪৬২। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাধাকৃষ্ণন পেয়েছেন ৪৫২টি। অর্থাৎ আরও ১০টি ভোট কম, যার কোনও হিসাব নেই। সম্ভবত সেগুলি বিপক্ষ শিবিরের প্রার্থীর ঘরেই গিয়েছে বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব।

এ কথা ঠিক, মোট ১৪ জন সাংসদ গত কাল ভোট দেননি। কিন্তু তাঁদের মধ্যে এনডিএ-র কোনও সাংসদ থাকার সম্ভাবনা কম। কারণ যাঁরা ভোট দেননি, তাঁরা হলেন বিজেডি দলের ৭, বিআরএস দলের ৪ এবং শিরোমণি অকালি এক ও এক জন নির্দল প্রার্থী। আরেক জনের পরিচয় জানা যায়নি। তাই সমস্ত যোগ-বিয়োগের শেষে বিজেপি শিবির নিশ্চিত, বিপক্ষের ঘর ভাঙতে সক্ষম হলেও, নিজেদের ঘরও একেবারে অক্ষত থাকেনি। এনডিএ শিবিরের ওই ক্রস ভোটিং চিন্তায় ফেলেছে শীর্ষ নেতৃত্বকে। কারা ক্রস ভোটিং করছেন, তাঁদের কোনও ভাবে চিহ্নিত করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ দিকে দু’দিন ধরে ভোটের মহড়া চলার পরেও এনডিএ-র ১০টি ভোট বাতিল হওয়ায় কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছে বিজেপিকে। কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘এত মহড়া দিয়ে কী হল! এনডিএ-র সাত জন সাংসদের একটি দলের সাতটি ভোটই বাতিল হয়ে গিয়েছে। যার অর্থ, কী ভাবে ভোট দিতে হবে, তা তাঁরা জানতেনই না’’

তবে বিজেপি নেতৃত্ব যখন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ১৫০ ভোটের ব্যবধানকে তুলে ধরে সরকারের শক্তির প্রদর্শনের কৌশল নিয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে বক্তব্য, ‘‘৪,১১৬ দিন প্রধানমন্ত্রী সংসদে একটি প্রশ্নেরও জবাব দেননি। ৮৬১ দিন ধরে মণিপুরে সংঘর্ষ চলছে। প্রধানমন্ত্রী সেখানে যেতে পারেননি। সংখ্যা বলতে আমরা সেটাই বুঝি।’’ বিপক্ষের সাংসদদের একাংশ যে রাধাকৃষ্ণনকে ভোট দিয়েছেন, সে কথা আজ সদর্পে ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। তিনি এক্স সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়ে যে সাংসদেরা এনডিএ প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের বিশেষ করে ধন্যবাদ।’’ অন্য দিকে যেনতেন ভাবে জয় নিশ্চিত করতে বিপক্ষ শিবিরে এই সিঁধ কাটাকেই বিজেপির ভোট চুরির নমুনা হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, ‘‘গোটা দেশে ভোট চোর, গদি ছোড় স্লোগানের সত্য়তা প্রমাণিত হয়েছে। আমরা এই চুরি আরও নাটকীয় ভাবে প্রমাণ করে ছাড়ব।’’ কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, বিজেপি নানা চাপ দিয়ে, অর্থের লোভ দেখিয়ে যে ভাবে মহারাষ্ট্রে, কর্নাটকে সরকার ফেলেছে, তেমনই উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কিছু বিপক্ষের ভোট নিশ্চিত করেছে। তা না হলে এক দলের সাংসদ কেন প্রতিপক্ষের প্রার্থীকে সমর্থন করতে যাবেন? এটাও যে এক ধরনের ভোট চুরি সে কথাই রাহুল বোঝাতে চেয়েছেন।

উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধীদের ভোট কিনতে বিজেপি টাকার বস্তা নিয়ে নেমেছিল বলে অভিযোগে সরব হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার দিল্লিতে পৌঁছে চার-পাঁচ জনের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম, বিজেপি এক-এক জন সাংসদের ভোট কিনতে ১৫-২০ কোটি টাকা খরচ করেছে। বিজেপি টাকার বস্তা নিয়ে নেমেছিল।’’ ভোট দিয়ে আজ কলকাতায় ফিরেছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘গোপন ব্যালটে ভোট হয়েছে। তাই এটা বলা মুশকিল যে বিরোধীদের ভোটই বাতিল হয়েছে, না ক্রস ভোটিং হয়েছে। মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় বিধায়ক কিনতে এই রকমই হয়েছিল।’’ এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের ‘বন্ধু দল’ আম আদমি পার্টির দিকে আঙুল তুলে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কয়েকটা দল রয়েছে আম আদমি পার্টির মতো। ওদের রাজ্যসভার এক সাংসদ তো অরবিন্দ কেজরীওয়ালের বিরুদ্ধে। এই রকমই দু’চারটি দল বিজেপিতে নাম লিখিয়েছে।’’ অভিষেকের অভিযোগের পাল্টা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘যে যেমন কাজ করেন, তিনি তেমন ভাবেন। ভাইপো বাবু নিজে কয়লা, গরু, বালি, পাথর বিক্রি করে টাকা তোলেন, তাই এমন বলেছেন। আমরা তো আমাদের ভোট পেয়েছি। ওঁরা যদি ওদের ভোট ধরে রাখতে না পারেন, সেটা আমাদের দোষ? এই নির্বাচনে তো কোনও হুইপ থাকে না। যাঁর যাঁকে ইচ্ছে ভোট দেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

NDA BJP Vice President Election

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy