কলকাতার চর্মশিল্প। দার্জিলিঙের চা। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় তৈরি প্যাকেটবন্দি খাবার এবং রত্ন-অলঙ্কার। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের মতে, ভারত-ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ফলে মূলত এই চারটি ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ লাভবান হবে। কারণ এই চারটি ক্ষেত্র থেকেই ব্রিটেনে রফতানি বাড়বে। ফলে মানুষের আয় বাড়বে। নতুন কর্মসংস্থানও তৈরি হবে।
বৃহস্পতিবার ভারত-ব্রিটেনের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য সচিব সুনীল বার্থওয়ালের বক্তব্য, চর্মশিল্প, রত্ন-অলঙ্কারের মতো ক্ষেত্রে এমনিতেই বিপুল শ্রমিক নিয়োগ হয়। এ সব জায়গা থেকে ব্রিটেনের মতো দেশে রফতানি বাড়লে রাজ্য লাভবান হবে।
কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, ভারত থেকে মোট ৫০০ কোটি ডলারের চামড়া, জুতো রফতানি হয়। এর মধ্যে ব্রিটেনে যায় ৪৪ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য। ভারত-ব্রিটেন বাণিজ্য চুক্তি চামড়ার ক্ষেত্রে ৮৫০ কোটি ডলারের রফতানির বাজার খুলে দেবে। এত দিন ব্রিটেন ১৬% পর্যন্ত শুল্ক চাপাত। তা শূন্যে নেমে আসছে। ফলে ভারতের চামড়া, জুতো চিন, ভিয়েতনাম, কাম্বোডিয়া, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়াকে প্রতিযোগিতায় পিছনে ফেলে দেবে। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের চামড়ার পণ্য উৎপাদনকারী ও রফতানিকারীরা লাভবান হবেন। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশ-সহ উত্তর ভারতে গোরক্ষক বাহিনীর উৎপাত শুরর পরে এই সব রাজ্যগুলি থেকে অনেক চর্মশিল্প পশ্চিমবঙ্গে সরে গিয়েছিল। এখন ব্রিটেনে চামড়া, জুতোর রফতানির সুযোগ তৈরি হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ তার ফায়দা তুলবে।
একই ভাবে রত্ন, অলঙ্কারের ক্ষেত্রেও ভারতের পণ্যে ব্রিটেনে শুল্কের বোঝা ৪% পর্যন্ত কমবে। ভারত থেকে ব্রিটেনে গত বছর প্রায় ৯৪ কোটি ডলারের রত্ন, অলঙ্কার রফতানি হয়েছে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ফলে রফতানি তিন বছরের মধ্যে ২৫০ কোটি ডলারে পৌঁছতে পারে। ব্রিটেন প্রতি বছর ৩৫০ কোটি ডলারের অলঙ্কার আমদানি করে। বাণিজ্য মন্ত্রকের বক্তব্য, এর ফলে পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাত, মহারাষ্ট্রে হাতে তৈরি গয়নার রফতানি বাড়বে। গুজরাত, মহারাষ্ট্রেও রত্ন, গয়না তৈরিতে পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ শিল্পী কাজ করেন। সেখানেও কাজের সুযোগ বাড়বে।
দার্জিলিংয়ের চায়ের ক্ষেত্রেও ব্রিটেনে রফতানি বাড়ার বিপুল সুযোগ রয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রক মনে করছে। গত বছর ভারত থেকে ব্রিটেনে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি ডলারের চা রফতানি হয়। ব্রিটেন তার চা আমদানির মাত্র ৫ শতাংশ মতো ভারত থেকে আমদানি করে। কিন্তু মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে চায়ের শুল্ক ১০% থেকে শূন্যে নামছে। ফলে দার্জিলিংয়ের চা রফতানি বাড়বে। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যেও শুল্ক ১২% থেকে শূণ্যে নেমে আসছে। তার সুবিধাও পশ্চিমবঙ্গের প্যাকেট বন্দি খাবার তৈরি সংস্থা, বিশেষ করে মহিলা চালিত ছোট-মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলি পেতে চলেছে। বাণিজ্য সচিবের বক্তব্য, ব্রিটেনের সংসদে এই চুক্তিতে সিলমোহর পড়তে সময় লাগবে। তা কাজে লাগিয়ে রফতানিকারীদের প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)