Advertisement
E-Paper

‘ইকবাল’-এর বোন মধুচক্রে, হতবাক ফিল্মি দুনিয়া

জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে ছোট্ট মেয়েটি। ২০০২ সালে ‘মাকড়ি’ ছবিতে যমজ বোন চুন্নি ও মুন্নির চরিত্রে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য। কাট... ২০১৪। হায়দরাবাদের বানজারা হিলসের একটি নামিদামি হোটেলের মধুচক্রের আসর থেকে পুলিশ টেনে বার করছে সেই মেয়েটিকেই! ‘মর্দানি’ ছবিতে শিবানী শিবাজী রায়-রূপী রানি মুখোপাধ্যায় যখন নারীপাচারকারীদের ধোলাই দিয়ে নিষিদ্ধপল্লি থেকে মেয়েদের উদ্ধার করে সারা দেশের প্রশংসা কুড়োচ্ছেন, তখন রবিবার মধুচক্রের আসর থেকে বছর তেইশের শ্বেতা বসু প্রসাদের গ্রেফতার হওয়ার ঘটনায় হতবাক চলচ্চিত্র মহল।

প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১৬
শ্বেতা বসু প্রসাদ

শ্বেতা বসু প্রসাদ

জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে ছোট্ট মেয়েটি। ২০০২ সালে ‘মাকড়ি’ ছবিতে যমজ বোন চুন্নি ও মুন্নির চরিত্রে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য।

কাট... ২০১৪। হায়দরাবাদের বানজারা হিলসের একটি নামিদামি হোটেলের মধুচক্রের আসর থেকে পুলিশ টেনে বার করছে সেই মেয়েটিকেই!

‘মর্দানি’ ছবিতে শিবানী শিবাজী রায়-রূপী রানি মুখোপাধ্যায় যখন নারীপাচারকারীদের ধোলাই দিয়ে নিষিদ্ধপল্লি থেকে মেয়েদের উদ্ধার করে সারা দেশের প্রশংসা কুড়োচ্ছেন, তখন রবিবার মধুচক্রের আসর থেকে বছর তেইশের শ্বেতা বসু প্রসাদের গ্রেফতার হওয়ার ঘটনায় হতবাক চলচ্চিত্র মহল।

যেমন ‘মাকড়ি’র সহ-প্রযোজক সঞ্জয় রৌত্রে। তিনি বলেন, “খবরটা শুনে আমি সারা দিন অফিসে কাজ করতে পারিনি। মনে পড়ছে বিশাল ভরদ্বাজের ‘বরফ’ বলে একটা ছবিতে অডিশন দিয়েছিল ও। ছবিটা তখন হয়নি। কিন্তু কী প্রতিভা ছিল ওর মধ্যে! সেই দেখেই তো আমরা মাকড়ি ছবিতে ওকে নিয়েছিলাম।”

খবরটা শুনে বিশ্বাস করতে পারছেন না টলিউডের পরিচালক সৌমিক চট্টোপাধ্যায়ও। তাঁর পরিচালিত ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে’ ছবিতে অভিনয় করার কথা ছিল শ্বেতার। তবে শেষ পর্যন্ত শ্বেতার বদলে চরিত্রটি করেন শ্রাবন্তী। সৌমিক বলেন, “এত ভাল অভিনয় করেছিল ‘মাকড়ি’তে। শুনেছিলাম জামশেদপুরের মেয়ে। আমার ছবিটার জন্য দু’-এক দিন ওয়র্কশপও করেছিল। খবরটা পেয়ে আমি স্তম্ভিত!”

কিন্তু ‘ইকবাল’ (২০০৫) ছবিতে মূক ও বধির দাদা ইকবালকে ক্রিকেটার হতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল যে খাদিজা (শ্বেতা অভিনীত চরিত্র), তার এমন পরিণতি কেন? পয়সার জন্য কবুল করছেন বড় ও ছোট পর্দার এই পরিচিত মুখ। আদালতের নির্দেশে সোমবার থেকে যাঁর ঠিকানা নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের হোম। বাঙালি মায়ের মেয়ে শ্বেতা বলেন, “পরিবারকে সাহায্য করার জন্য এবং আরও নানা কারণে আমার টাকার দরকার ছিল। আর কোনও রাস্তা খোলা ছিল না। বেশ কিছু মানুষ টাকা রোজগারের জন্য দেহব্যবসায় নামতে উৎসাহ জুগিয়েছিল। আর কোনও উপায় না দেখে আমি এই পেশায় জড়িয়ে পড়ি।”

শ্বেতা টাকার প্রয়োজনের কথা বললেও সঞ্জয়ের দাবি, দু’বছর আগে তাঁর সঙ্গে মুম্বইয়ের এক মল-এ দেখা হয় শ্বেতার। “ওর মা ছিল সঙ্গে। আমাকে বলেছিল যে, তেলুগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ভাল কাজ করেছে। অনেক টাকাও রোজগার করছে,” বলছেন সঞ্জয়।

তা হলে কী এমন ঘটল যে, এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হলেন ইকবালের বোন! সঞ্জয় জানাচ্ছেন, শেষ বার যখন তাঁর সঙ্গে শ্বেতার দেখা হয়, তখন ওর মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ করেন তিনি। বলেন, “আমি তো ওকে বাচ্চা বয়সে দেখেছি। নিজের মেয়ের মতো। হঠাৎ এমন খোলামেলা পোশাক পরে ওকে দেখে একটু অদ্ভুত লেগেছিল। তবে স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি, যে ও এ রকম কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে যাবে!”

গ্রেফতারের পরে শ্বেতা দাবি করেছেন, অন্য অনেক অভিনেত্রীই নাকি এই রকম চক্রের সঙ্গে জড়িত। তথ্যও বলছে, শুধু তেলুগু ইন্ডাস্ট্রি থেকেই এর আগে আরও সাত অভিনেত্রীর নামে একই অভিযোগ উঠেছে।

বিষয়টি অবশ্য মানতে নারাজ পরিচালক অশোক পণ্ডিত। তিনি বলেন, “এই ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ কাউকে কোনও কিছুর জন্য চাপ দিতে পারে না। কেউ কেউ বিখ্যাত হওয়ার জন্য এবং চটজলদি টাকা রোজগারের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। এই মরিয়া ভাবটা এখন আমি অনেকের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। শুধু চলচ্চিত্র নয় অন্যান্য জগতেও এটা আছে।”

শ্বেতার পাশাপাশি ওই হোটেল থেকে মধুচক্রের আয়োজক আনজানেইয়েলু ওরফে বালু এবং কিছু ব্যবসায়ীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, প্রত্যেক খরিদ্দারের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা করে নিয়েছিলেন বালু। তাঁকে জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।

হোমে পাঠানোর আগে শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে শ্বেতার। হোমের অন্য আবাসিকরাই অভিনেত্রীকে খাবার, কাপড় দিয়ে সাহায্য করছেন। কারিগরি শিক্ষাও দেওয়া হচ্ছে শ্বেতাকে। মাস তিনেক হোমে থাকতে হতে পারে তাঁকে।

এখন শ্বেতার বাড়ি সরকারি হোম হলেও এক সময় তিনি ঘরে ঘরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন শিশু চরিত্র হিসেবে ‘কহানি ঘর ঘর কি’ ধারাবাহিকে ‘পার্বতী’ ও ‘ওম’-এর মেয়ে ‘শ্রুতি’র ভূমিকায় অভিনয় করে। ‘ইকবাল’ ছবির জন্য পঞ্চম করাচি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পান সেরা সহ অভিনেত্রীর পুরস্কার। এ ছাড়াও তিনি কাজ করেছেন ‘ওয়াহ! লাইফ হো তো অ্যায়সি’, ‘ডরনা জরুরি হ্যায়’ নামে দু’টি হিন্দি এবং একটি তেলুগু ছবিতেও। ২০০৯ সালে বাংলা ছবি ‘একটি নদীর গল্প’-তেও কাজ করেন তিনি। ছবিটা মুক্তি পায়নি।

শিশুশিল্পীদের অনেকেই বড় বয়সে তারকা হয়ে উঠতে পারেন না। তার চাপ না-নিতে পেরেই কি এই পথে চলে গিয়েছিলেন শ্বেতা? আপাতত ১৫টি ছবি করেছেন ‘চিনি কম’-এর সুইনি খেরা। সঙ্গে ২০টি বিজ্ঞাপন। শ্বেতার খবরটি শুনে সুইনির বাবা নিমেষ খেরা বলেছেন, “মেয়ের ওপর সে রকম কোনও চাপ আমরা দিইনি। তবে, অনেক বাবা-মা খুব চাপ দেন। জনপ্রিয় হতে হবে, রোজগার করতে হবে বাচ্চারাও সেই মোহে ছুটতে থাকে।” এই মোহই কি শ্বেতাকে ঠেলে দিল এই অন্ধকার গলিতে?

ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশ্নটা।

Shweta Basu Prasad caught in a prostitution racket makdee film ikbaal national news online news national national news latest latest news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy