পাতিয়ালা হাউজ কোর্ট- চত্বরে প্রচণ্ড পেটানো হয়েছিল জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভাপতি কানহাইয়া কুমারকে। বেশ কিছু ক্ষণ ধরে কানহাইয়াকে পেটানো হয়েছিল। এত পেটানো হয়েছিল যে, কানহাইয়া প্যান্টে প্রস্রাব করে ফেলেছিলেন। তার পর তাঁকে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে বাধ্য করা হয়েছিল, ‘জয় ভারতমাতা কি জয়!’ বলতে। পুলিশের উর্দি পরে তো অত পেটানো যায় না! তাই উকিল দিয়ে খাস কোর্ট-চত্বরেই প্রচণ্ড পেটানো হয়েছিল ছাত্র নেতা কানহাইয়াকে। নিগৃহীত হয়েছিলেন জনাকয়েক সাংবাদিকও।
কোনও কল্প-কথা নয়। নয় কোনও মুখোরচক কাহিনীও! কানহাইয়াকে গত ১৫ ফেবুয়ারি পাতিয়ালা হাউজ কোর্ট-চত্বরে যাঁরা প্রচণ্ড পিটিয়েছিলেন, ‘ইন্ডিয়া টুডে’র চালানো ‘স্টিং অপারেশনে’ সেই তিন উকিলই কবুল করে ফেলেছেন সেই কথা। আর সেই কানহাইয়াকে পেটানোর কাহিনী শুনিয়েছেন তাঁরা বেশ গর্ব করেই! যেন পাক্কা ‘দেশপ্রেমিকে’র মতোই কাজটা করেছেন তাঁরা! ওই তিন উকিলের কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। ওই তিন উকিলের নাম- বিক্রম সিংহ চৌহান, যশপাল সিংহ এবং ওম শর্মা। ভিডিও ক্যামেরায় তোলা কানহাইয়া-নিগ্রহের ছবি থেকে স্পষ্টই বোঝা গিয়েছে, ওই ঘটনা ছিল একেবারেই সংগঠিত ও পূর্ব পরিকল্পিত।
‘ইন্ডিয়া টুডে’র সাংবাদিকরা প্রথমে দেখা করেছিলেন আইনজীবী বিক্রম সিংহ চৌহানের সঙ্গে। হরিয়ানার রেওয়ারির সন্তান বিক্রমকে এক বারও মনে হয়নি, ওই ঘটনার জন্য তাঁর কোনও দুঃখবোধ রয়েছে। রয়েছে কোনও অনুশোচনা। বরং ৩৮ বছর বয়সী বিক্রমকে বেশ বুক ফুলিয়েই কথা বলতে দেখা গিয়েছে সাংবাদিকদের সঙ্গে।
আরও পড়ুন- বন্ধুরা কোথায়? কী ভাবে ধরব তাদের? কানহাইয়াকে প্রশ্ন পুলিশের
আমরা প্রশ্নোত্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কী কী কথা হয়েছিল বিক্রমের, আমরা হুবুহু তা তুলে দিচ্ছি।
বিক্রম: ছেলেটাকে আমরা তিন ঘণ্টা ধরে পিটিয়েছিলাম। তিন ঘণ্টা ধরে...
ইন্ডিয়া টুডে: আপনি? আপনি পিটিয়েছিলেন?
বিক্রম: তা না তো কে?
ইন্ডিয়া টুডে: কাকে পিটিয়েছিলেন? কানহাইয়া? নাকি সাংবাদিকদের?
বিক্রম: কানহাইয়াকে। পিটিয়ে ওকে বলতে বাধ্য করেছিলাম, ‘জয়, ভারতমাতা কি জয়!’
ইন্ডিয়া টুডে: কানহাইয়া সত্যি-সত্যি তা বলেছিল?
বিক্রম: আলবাৎ বলেছিল। না হলে ওকে আমি ওখান থেকে যেতেই দিতাম না।
ইন্ডিয়া টুডে: কানহাইয়া ‘জয়, ভারতমাতা কি জয়!’ বলেছিল?
বিক্রম: হ্যাঁ, কানহাইয়া বলেছিল। আমরা ওকে ‘জয়, ভারতমাতা কি জয়!’ বলতে বাধ্য করেছিলাম। আমরা ওকে তিন ঘণ্টা ধরে পিটিয়েছি। প্যান্টে প্রস্রাব করে ফেলেছিল। এত পিটিয়েছিলাম!
এ বার শুনুন, আরেক আইনজীবী যশপাল সিংহের কথা। তিনিও ছিলেন কানহাইয়া-নিগ্রহের ঘটনায়।
ইন্ডিয়া টুডে: কানহাইয়াকে পেটানোর ব্যাপারে আদালতে যদি প্রশ্ন ওঠে, সেখানেও কি বলবেন, আপনি পিটিয়েছিলেন কানহাইয়াকে?
যশপাল: ওকে ছাড়ব না। সুযোগ পেলে আবার পেটাবো। পেট্রোল বোমা ছুঁড়ব। তাতে যদি আমার বিরুদ্ধে খুনের মামলাও করা হয়, তাতেও পিছিয়ে আসব না। কাউকেই ছাড়ব না। যারা ওকে সমর্থন করে চলেছে, তাদেরও পেটাব। তার জন্য জেলে যেতে হলে, যাব। জেলে গিয়েও কানহাইয়ার সেলেই থাকব। যাতে ওকে সেলেও পেটাতে পারি।
ইন্ডিয়া টুডে: জেলের সেলেও পেটাবেন?
যশপাল: ওর সেলে আমাকে না থাকতে দেওয়া হলে, আমি ওর সেলে গিয়েই ওকে পিটিয়ে আসব। আর ওকে পেটানোর জন্য জামিনও নেব না। সেলেই থাকব। যাতে আরও কিছু দিন ওকে পেটাতে পারি।
ইন্ডিয়া টুডে: আর কাকে কাকে পিটিয়েছেন?
যশপাল: কাকে নয়? সাংবাদিকদের পিটিয়েছি। জেএনইউয়ের অধ্যাপকদের পিটিয়েছি। সকলকেই। আমার দেশে থাকতে হলে আমার দেশের হয়েই কথা বলতে হবে। সব সময়। পুলিশও আমাদের খুব সাহায্য করেছে।
ইন্ডিয়া টুডে: পুলিশও খুব সাহায্য করেছে?
যশপাল: অবশ্যই করেছে। ওরা তো বার বার আমাদের ‘সাবাশ, সাবাশ’ বলছিল। বলছিল, ‘স্যর, আমরা উর্দি পরে রয়েছি বলে পেটাতে পারছি না। আপনারা পেটান।
বিক্রম: আমরা বোমাও ছুঁড়তাম। আমি তো পরে ফেসবুকে পোস্ট করে বলেছি, আমাদের সমর্থনে সকলকে এগিয়ে আসতে। আমাদের আরও বড় কিছু করতে হবে। আরও বড় কিছু...
ইন্ডিয়া টুডে: সেটা কী রকম?
বিক্রম: না, এখনই কিছু বলতে চাই না। করে দেখাতে চাই।
ভিডিও সৌজন্য: ইন্ডিয়া টুডে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy