সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের পরে সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফস্পা) নিয়ে পুরনো বিতর্ক ফের মাথাচাড়া দিয়েছে। শীর্ষ আদালত তার নির্দেশে বলেছে, সেনাবাহিনী বা আধাসেনা কোনও অবস্থায় অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ বা প্রতিশোধমূলক আচরণ করতে পারবে না। তা সেই এলাকা জঙ্গি অধ্যুষিত বলে যতই আফস্পা বলবৎ থাকুক না কেন।
এই আফস্পা আসলে কী ধরনের আইন?
উপদ্রুত এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা তুলে দেওয়ার জন্য প্রথম এই আইন বলবৎ হয় ১৯৫৮ সালে। প্রথম এই আইন প্রয়োগ করা হয় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে, মণিপুর ও অসমে। আইনটি প্রথম বলবৎ হওয়ার সময় এটির নাম ছিল আফস্পা (মণিপুর ও অসম) ১৯৫৮।
পরে খলিস্তান আন্দোলন তুঙ্গে ওঠার পরে পঞ্জাবে ’৮০-র দশক থেকে আফস্পা প্রয়োগ করা হয়। জম্মু-কাশ্মীরেও ’৯০ সাল থেকে রয়েছে আফস্পা।
আফস্পা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপালের সুপারিশ বা কেন্দ্রের সুপারিশই গ্রহণযোগ্য হয়। কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নির্দিষ্ট কোনও এলাকায় আফস্পা প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের বড় একটা ভূমিকা থাকে না। তারা বড়জোর সুপারিশ করতে পারে মাত্র। সেই সুপারিশও মানতে বাধ্য নয় কেন্দ্রীয় সরকার।
আফস্পা-র বলে বলীয়ান নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কী আছে?
আরও পড়ুন: আফস্পা এখনই উঠছে না: রিজিজু
১) কাউকে সতর্ক করে দেওয়ার পরে কাজ না হলে সংশ্লিষ্ট অফিসার তাকে গুলি করতে পারেন, তাতে তার মৃত্যু ঘটলেও সে কাজ তিনি করতে পারেন।
২) সন্দেহভাজন হিসেবে যে কাউকে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার করা যাবে।
৩) অস্ত্রভাণ্ডার, গোপন ডেরা— যেখান থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র আক্রমণ হয়েছে বা হতে পারে, সন্দেহজনক সেই সব ডেরা বা অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস করে দেওয়া যাবে।
৪) সন্দেহভাজন কাউকে বা কোনও অস্ত্র উদ্ধার করতে উপদ্রুত এলাকার যে কোনও বাড়ি বা জায়গায় ঢুকে পড়তে পারবে সশস্ত্র বাহিনী।
৫) সন্দেহজনক যে কোনও গাড়িকে আটকে তল্লাশি চালাতে পারবে নিরাপত্তা বাহিনী।
৬) আফস্পা প্রয়োগ করা থাকলে নিরাপত্তা বাহিনী বাড়তি রক্ষাকবচ পায়। উপদ্রুত এলাকায় আফস্পা প্রয়োগ করা থাকলে কোনও ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অফিসারের বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত বা আইনি পদক্ষেপ করা যাবে না।
৭) সরকার কেন কোনও এলাকাকে উপদ্রুত বলে মনে করছে সেই সিদ্ধান্ত দেশের সাধারণ বিচার ব্যবস্থায় খতিয়ে দেখা যাবে না।
স্বাভাবিক ভাবেই এই আইনের বিরুদ্ধে বারে বারে দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিবাদ উঠেছে। এই আইন সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করারও দাবিও তুলেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
২০০৪-এর ১৫ জুলাই মণিপুরে, কাংলা দুর্গের সামনে সম্পূর্ণ নগ্ন কয়েক জন নারী অসম রাইফেলসের জওয়ানদের হাতে থাংজাম মনোরমার ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কার্যত গোটা বিশ্বে আলোড়ন পড়েছিল সেই দৃশ্যে। অসম রাইফেলসের তৎকালীন সদর দফতরের সামনে দু’হাতে ফেস্টুন তুলে সেই মহিলারা চিৎকার করেছিলেন, ‘ভারতীয় সেনা, এসো, আমাদের ধর্ষণ কর’। সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং উপদ্রুত এলাকা আইন রদের দাবিতে শুধু মণিপুরই উত্তাল হয়নি, কাশ্মীর উপত্যকাও বারে বারে উত্তাল হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy