দিল্লি পুলিশ সূত্রের দাবি, নভেম্বরের গোড়ায় শ্রদ্ধা খুনের অস্ত্র-সহ একের পর এক প্রমাণ নষ্ট করতে শুরু করেন আফতাব। —ফাইল চিত্র।
শ্রদ্ধা ওয়ালকরকে খুন করে ৩৫ টুকরো করার পর তাঁর মুম্বইয়ের বন্ধুদের কাছে ভুয়ো গল্প ফেঁদেছিলেন আফতাব আমিন পুনাওয়ালা। তাঁদের বলেছিলেন, প্রেমিকা শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে। এমনকি, খুনের পর শ্রদ্ধার মোবাইলের মাধ্যমে তাঁর কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে অনলাইনে চ্যাটও করেছিলেন। দিল্লি পুলিশ সূত্রে এমনই দাবি। শ্রদ্ধার বন্ধুদের যাতে সন্দেহ না হয়, সে জন্যই এমনটা করেছিলেন বলে আফতাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ।
শ্রদ্ধা হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে মুম্বইয়ের বসইয়ে পৌঁছে গিয়েছে দিল্লি পুলিশ। মুম্বইয়ের বসইয়ের বাসিন্দা শ্রদ্ধার মা-বাবা এবং পুরনো পাড়াপড়শিদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করবেন তদন্তকারীরা। বসইয়ে তদন্তকারী দিল্লি পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ১৮ মে শ্রদ্ধাকে খুনের পর তাঁর মোবাইল থেকে ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে প্রেমিকার মুম্বইয়ের বন্ধুদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন আফতাব। শ্রদ্ধা ‘গায়েব’ হয়ে যাওয়ার পর সে সম্পর্কে যাতে কারও কোনও সন্দেহ না হয়, সে জন্যই নাকি এমন করেছিলেন তিনি। যদিও খুনের পরেই ওই মোবাইলের সিম কার্ডটি আফতাব নষ্ট করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রে আগেই দাবি করা হয়েছিল, শ্রদ্ধার বাবা বিকাশ মদন ওয়ালকরকে তাঁর সম্পর্কে প্রথম সচেতন করেছিলেন লক্ষ্মণ নাদার। শ্রদ্ধার মুম্বইয়ের বন্ধু লক্ষ্মণ গত সেপ্টেম্বরে দাবি করেছিলেন, মাস দুয়েক ধরে শ্রদ্ধার মোবাইল সুইচড অফ আসছে। বসইয়ের বাসিন্দা বিকাশ সে কথায় সেখানকার মানিকপুর থানায় মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার ডায়েরি করেন। ওই অভিযোগের তদন্তে নেমে অক্টোবরে মানিকপুরা থানায় আফতাবকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করে মুম্বই পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ১২ অক্টোবর নিখোঁজ হওয়ার ডায়েরি করার পর শ্রদ্ধার লিভ-ইন সঙ্গী আফতাবকে থানায় ডেকে পাঠায় পুলিশ। ২০ অক্টোবর প্রথম বার জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশ তাঁর মোবাইল-সহ অন্যান্য বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি খতিয়ে দেখেনি।
তদন্তকারীদের দাবি, প্রথম বার জিজ্ঞাসাবাদের পর থেকে ৩ দিন অর্থাৎ ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত শ্রদ্ধার মোবাইল ব্যবহার করেছিলেন আফতাব। এর পর বসই ক্রিক এলাকায় শ্রদ্ধার মোবাইল-সহ বহু প্রমাণ নষ্ট করে ফেলেন। এর পর ২৬ অক্টোবর আফতাবকে আবার তলব করেছিল মানিকপুর থানা। সে সময় তাঁর দাবি ছিল, ঝগড়াঝাঁটি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন শ্রদ্ধা। এমনকি, তাঁর মোবাইল ছাড়া সঙ্গে কোনও জিনিসপত্র নিয়ে যাননি। যদিও শ্রদ্ধার মোবাইল লোকেশন দিল্লির ছতরপুর এলাকায় দেখাচ্ছিল বলে দাবি। যে এলাকায় একটি ভাড়াটে ফ্ল্যাটে এসে উঠেছিলেন শ্রদ্ধা-আফতাব। সূত্রের দাবি, এর পরেই আফতাবকে সন্দেহ হয় তদন্তকারীদের। ২৬ অক্টোবর আর এক দফায় আফতাবকে জিজ্ঞাবাদ করা হয়। ওই সংক্রান্ত রিপোর্ট দিল্লি পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেয় মানিকপুরা থানা। এর পর ১২ নভেম্বর শ্রদ্ধাকে খুনের অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ।
সূত্রের মতে, দু’দফার জিজ্ঞাসাবাদের পরই আফতাব সতর্ক হয়ে গিয়েছিলেন। ৪ নভেম্বরের পরে দিল্লি ফিরে এসে শ্রদ্ধা খুনের অস্ত্র-সহ একের পর এক প্রমাণ নষ্ট করতে শুরু করেন তিনি।
সোমবার দিল্লির রোহিণী এলাকায় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (এফএসএল)-এ আবার পলিগ্রাফ টেস্ট করানো হয়েছে আফতাবের। বস্তুত, শুক্রবারও এই লাই ডিটেক্টর টেস্টের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি।
এই মুহূর্তে তিহাড় জেলের একটি কুঠুরিতে ২৪ ঘণ্টার সিসিটিভি নজরদারিতে রয়েছেন আফতাব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy