বিহার বিধানসভা ভোটে বিপুল সাফল্যের পরে নিজের রাজ্য গুজরাতের মাটিতে দাঁড়িয়ে আজ কংগ্রেস এবং আরজেডি-কে তীব্র আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
শনিবার সুরাটের বিমানবন্দরে আয়োজিত স্থানীয় বিহারিদের জনসভায় জাতপাত এবং ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগ তুলে নিশানা করেছেন বিরোধী জোট মহাগঠবন্ধনকে। তাদের বিরুদ্ধে উল্টে মেরুকরণের অভিযোগও তুলেছেন। মোদীর দাবি, বিহারের মানুষ এ বার জাতপাতের সমীকরণকে ছুঁড়ে ফেলে উন্নয়নের নামে ভোট দিয়েছেন। গোটা বক্তৃতায় একবারই জেডি(ইউ) নেতা নীতীশ কুমারের নাম নিয়েছেন তিনি। রাহুল গান্ধী এবং তেজস্বী যাদবকে উদ্দেশ করে মোদী বলেছেন, "নীতীশ কুমারকে অপমান করার একটা ফ্যাশন তৈরি হয়েছিল এই নামদার নেতাদের। দুই নামদার নেতার নির্দেশে সংসদে নানা রকম হাঙ্গামা করা হত। দেশের জনতা তা স্বীকার করেনি। এঁরা ঘৃণার পরিবেশ তৈরি করেছিলেন।"
বিরোধী ওই দুই নেতাকে উদ্দেশ করেই শনিবারের বক্তৃতার বয়ান সাজিয়েছেন মোদী। বলেছেন, “গত দুই বছর ধরে জামিনে থাকা কিছু নেতা শুধু জাতপাতের রাজনীতি ছড়িয়েছেন বিহার জুড়ে। ভেবেছিলেন, জাত বিভাজনের বিষ ছড়িয়ে লাভ মিলবে। কিন্তু বিহারের মানুষ সেই বিষকে সম্পূর্ণ ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।” তার দাবি, বিহারের এই ফলাফল শুধু রাজনৈতিক পরাজয় নয়, একটি মানসিকতার পরাজয়। মোদীর বক্তব্য, “এ বারের নির্বাচনে বিজয়ী এনডিএ এবং পরাজিত মহাগঠবন্ধনের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ ভোটের ফারাক। এটা ছোট সংখ্যা নয়। এর অর্থ, সাধারণ মানুষ একসুরে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর সেই সিদ্ধান্তের মূল ভরকেন্দ্র
ছিল উন্নয়ন।”
তেজস্বী যাদব এর আগে মন্তব্য করেছিলেন, বিহারে জিতলে ওয়াকফ সংশোধনী আইন রাজ্যে চালু হতে দেবেন না। আজ তাঁকে 'জামানত প্রাপ্ত নেতা' হিসাবে সম্বোধন করে মোদী বলেছেন, "বিহারে সাধারণ মানুষের জমি জায়গা দখল করে ওয়াকফ সম্পত্তিতে পরিণত করা হয়েছে। তামিনাড়ুতেও দেখা গিয়েছে শতাব্দী প্রাচীন হাজার হাজার গ্রাম দখল করে ওয়াকফ বোর্ডকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এ সব রুখতে কেন্দ্রীয় আইন এনেছি। জামানতে মুক্ত এক নেতা সেই আইনের কপি ছিঁড়ে ফেলে বলেছিলেন, জিতে এলে বিহারে তা চালু হতে দেবেন না। বিহারের মানুষ এই সাম্প্রদায়িকতার বিষ প্রত্যাখ্যান করে উন্নয়নের পথে হেঁটেছেন।"
এর আগে দিনের শুরুতে, প্রধানমন্ত্রী সুরাতে নির্মাণাধীন বুলেট ট্রেন স্টেশন পরিদর্শনে যান। মুম্বই-আমদাবাদ হাই-স্পিড রেল করিডরের কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নর্মদা জেলার উপজাতি অধ্যুষিত ডেড়িয়াপাড়া শহরে ন'হাজার সাতশো কোটি টাকার একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেছেন
মোদী। পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণ বিশেষ করে জনজাতি সমাজের ক্ষমতায়নকে মাথায় রেখেই এই প্রকল্পগুলি পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বিশিষ্ট জনজাতি নেতা, স্বাধীনতা সংগ্রামী বীরসা মুন্ডার দেড়শোতম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজই প্রকল্পগুলির সূচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘যখনই দেশের গৌরব, আত্মসম্মান এবং স্বাধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, তখনই জনজাতি সমাজের মানুষ সামনের সারিতে থেকে সেই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)