একমাত্র পুত্র নিশান্ত ত্রিপাঠী আত্মঘাতী হয়েছেন মুম্বইয়ের হোটেলে। তাঁর শেষকৃত্য করার পরে সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে মনের অবস্থা জানালেন মা নীলম চতুর্বেদী। লিখলেন, তিনি মরে বেঁচে রয়েছেন। পুত্রবধূ অপূর্বা পারেখ এবং তাঁর মাসি প্রার্থনা মিশ্রের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন মহিলা অধিকার রক্ষা কর্মী নীলম। অভিযোগ, ছেলেকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছেন তাঁরা। সুইসাইড নোটে নিশান্তও তাঁদের দায়ী করেছেন। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মুম্বইয়ের এক হোটেলের ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে নিশান্তের দেহ। এর আগে একই ভাবে স্ত্রীকে দায়ী করে আত্মঘাতী হয়েছিলেন বেঙ্গালুরুর অতুল সুভাষ। এর পরে আগরায় স্ত্রীকে দায়ী করে আত্মহত্যা করেছিলেন মানব। তার পরেই পুরুষদের জন্য ‘লিঙ্গ-নিরপেক্ষ’ আইন চেয়ে সরব হয়েছেন বহু মানুষ। সেই আবহে ছেলে নিশান্তের শেষকৃত্যের পরে নীলম সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, কিশোরী বয়স থেকে মহিলাদের অধিকার রক্ষার জন্য, লিঙ্গবৈষম্য দূর করার জন্য লড়াই করেছেন তিনি। এমনকি, ১৮ বছর বয়সে গ্রেফতারও হয়েছেন। হাজার হাজার মহিলাকে নির্যাতনের হাত থেকে উদ্ধার করেছেন। অথচ, আজ তাঁর ছেলেই স্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে আত্মঘাতী হয়েছেন।
নীলম সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘আমি লাশ হয়ে বেঁচে রয়েছি। আপনারা দেখছেন, যে আমি বেঁচে রয়েছি। কিন্তু আমি আসলে মারা গিয়েছি।’’ তিনি জানিয়েছেন, একমাত্র পুত্র হিসাবে নিশান্তেরই তাঁর শেষকৃত্য করার কথা ছিল। কিন্তু ঘটল উল্টো। তাঁর কথায়, ‘‘২ মার্চ মুম্বইয়ের ইকো-মোক্ষতে ছেলের সৎকার করেছি। আমার মেয়ে প্রাচীও দাদার শেষকৃত্য করেছে। আমাদের শক্তি দিন।’’ এর পরেই কী ভাবে প্রতিনিয়ত লড়াই করে পুত্র-কন্যাকে একা মানুষ করেছেন, তা-ও লিখেছেন তিনি। এ জন্য কখনও ঈশ্বরের কাছে অভিযোগ জানাননি। কারণ, তাঁর পুত্র নিশান্ত ‘শক্তি’ জুগিয়েছিলেন তাঁকে। সে জন্যই হাজার হাজার মহিলাকে সাহায্য করতে পেরেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সখী কেন্দ্র সংগঠন এবং অন্য সংগঠনের মাধ্যমে ৪৬ হাজার মহিলাকে সাহায্য করেছি। ৩৭ হাজার মহিলা ন্যায় পেয়েছেন। হাজার হাজার মহিলাকে স্বনির্ভর করেছি।’’ তাঁর দাবি, অর্থ বা নামের লোভে এ সব করেননি তিনি। সেই নিশান্তের মৃত্যুর পরে তিনিও ‘মৃত’ বলেই দাবি নীলমের।
আরও পড়ুন:
হোটেলের যে ঘরে নিশান্ত আত্মহত্যা করেছেন, সেখান থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে। তাতে স্ত্রীর উদ্দেশে লেখা, ‘‘তুমি যখন এই চিঠিটা পাবে, তত ক্ষণে আমি পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেব। জীবনের শেষ মুহূর্তে তোমার প্রতি আমার ঘৃণা, বিদ্বেষ নয়, ভালবাসা রইল। আজীবন তা থেকে যাবে। ফিকে হতে দেব না।’’ নিশান্ত আরও লেখেন, ‘‘আমার মা জানে, কী লড়াইয়ের মধ্যে বেঁচে ছিলাম। কিন্তু তুমি আর প্রার্থনা মাসি আমাকে বাঁচতে দিলে না। তোমাদের কাছে অনুরোধ, মাকে শেষ করে দিয়ো না। অনেক কষ্ট পেয়েছেন। এ বার একটু শান্তিতে বাঁচতে দাও মাকে।’’