Advertisement
E-Paper

কাজে এল না তাম্রপত্র, হাজেলার দেখা নথিও

লজ্জা আর বিস্ময় আরও বেশি অসমের বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি কমল চৌধুরীর।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৪২
গীতারানি পাল ও অপর্ণা চৌধুরী।

গীতারানি পাল ও অপর্ণা চৌধুরী।

প্রায় আর্তনাদ করে ওঠেন গুয়াহাটির আদাবাড়ি নিবাসী সৌমিত্র চৌধুরী। “বলছেন কী! মাকে নিয়ে সত্যিই আদালতে যেতে হবে! নাগরিকত্ব প্রমাণ না-হলে জেলে নিয়ে যাবে নাকি মাকে! আমার তো মাথাই কাজ করছে না। এতদিন তো এ সব ভাবিইনি!” সৌমিত্রের পরিবারের বাকিদের নাম এলেও মা অপর্ণা চৌধুরীর নাম বাদ পড়েছে। অপর্ণাদেবীর দাদা মনোরঞ্জন নন্দী ছিলেন তাম্রপত্র পাওয়া স্বাধীনতা সংগ্রামী। তাঁদের জন্ম শ্রীহট্টে। ১৯৪৯-এ মা, দাদা ও ভাইয়ের সঙ্গে অপর্ণাদেবী চলে আসেন অবিভক্ত অসমের শিলংয়ে। ষাটের দশকে ধসে তাঁদের বাড়ি ভেঙে যায়। সেই সঙ্গেই চাপা পড়ে যায় অপর্ণাদেবীর পরিবারের সব নথিপত্র। মায়ের প্যান কার্ড ও আধার কার্ড-সহ এনআরসিতে আবেদন করলেও বাবার লেগাসি বা অন্য প্রমাণ তাই জমা দিতে পারেননি ছেলে। লিখিত জানিয়েছিলেন তা। কিন্তু আসেনি নাম। হতবুদ্ধি সৌমিত্রবাবু বলেন, “আসলে ব্যাপারটা যে মায়ের জেলে যাওয়া পর্যন্ত গড়াতে পারে, সেটা ভাবতেই পারিনি। ফরেনার্স ট্রাইবুনাল কোথায়, কী ব্যাপার কিছুই জানি না।”

লজ্জা আর বিস্ময় আরও বেশি অসমের বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি কমল চৌধুরীর। বাঙালির বঞ্চনা, নাম বাদ পড়া নিয়ে লড়াই চালানো নেতার নিজের নামই খসড়ায় আসেনি। দেরি না-করে তিনি সোজা এনআরসি কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলার কাছে হাজির হয়েছিলেন। সঙ্গে ১৯৬১ থেকে ১৯৭১ সালের ভোটার তালিকায় থাকা বাবা অমূল্যচরণ চৌধুরীর নথিপত্র। নিজের সব প্রমাণ। সব পরীক্ষা করে আশ্বস্ত করেছিলেন হাজেলা। তার পরেও খারিজ হয়েছে তাঁর নাম। কমলবাবু বলেন, “এনআরসি কেন্দ্র দূরের কথা খোদ প্রতীক হাজেলার পরীক্ষা করা প্রমাণপত্রও যেখানে বাতিল হল, সেখানে বাঙালিদের লড়াইটা কত কঠিন, তা বোঝাই যাচ্ছে।”

গোলাঘাট জেলার সরুপথারে স্বাধীনতা সংগ্রামী শচীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের পরিবারেও হাহাকার। ছেলে, স্কুল শিক্ষক সমীর ভট্টাচার্য, তাঁর স্ত্রী শম্পাদেবী, দুই মেয়ে সুমিতা ও কণিকা— সকলের আবেদন খারিজ হয়েছে। ক্ষিপ্ত সমীরবাবু বলেন, “১৯৫০ সালের ভোটার তালিকায়, ১৯৫৬ নাগরিকত্ব পরিচয়পত্র, বাবার নামে জমির দলিল সবই আছে। আমার নিজের ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ম্যাট্রিকের সার্টিফিকেট দিয়েছি। ১৫টি প্রমাণপত্রের একটি জমা দিলেই নাম ওঠার কথা। আমরা দিয়েছি ১২টি প্রমাণপত্র। তার পরেও নাম বাদ!” সমীরবাবু জানাচ্ছেন, ইন্দিরা গাঁধীর আমলে বাবা তাম্রপত্র পান। তিনি মারা যাওয়ার পরে মা পেতেন স্বাধীনতা সংগ্রামীর পেনশন। ছেলের কথায়, “এমন পরিবারকে বাংলাদেশি সাজানো ঘৃণ্য চক্রান্ত। সবাই বলছে ভয় নেই। কিন্তু সপরিবারে আদালতে দৌড়ানোর হেনস্থা ও এই লজ্জার দায় কে নেবে?”

লাল গণেশের গীতারানি পাল ১৯৬৮ সালের স্কুল সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন। তাঁর বাড়ি ছিল উত্তরবঙ্গের ধূপগুড়িতে। শৈশবে পিতৃহারা গীতাদেবী বিয়ের পর থেকে গুয়াহাটির বাসিন্দা। ছেলে মিন্টুবাবুর দুশ্চিন্তা দ্বিগুণ। কারণ, শুধু মা নন, স্ত্রী প্রভাতীর নামও তালিকায় নেই। প্রভাতীদেবী অসমেরই ধুবুড়ি জেলার সাপটগ্রামের বাসিন্দা। তালিকায় নাম না-থাকায় উচ্চ রক্তচাপের রোগী গীতাদেবী অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। কিছু খাচ্ছেনও না। আগেই হুমকি দিয়েছেন, “আত্মহত্যা করব, তবু জেলে যাব না।” ছেলের আশঙ্কা এই ভাবে চললে মায়ের হার্ট অ্যাটাক না হয়। একই এলাকার সুদর্শন পাল ত্রিপুরা থেকে ১৯৭০ সালের আগেই গুয়াহাটিতে এসেছিলেন। তাঁর নাম তালিকায় থাকলেও তিন মেয়ে শম্পা, রুবি, সীমার নাম বাদ পড়েছে। ‘ভারতীয়’ বাবা ভেবে পাচ্ছেন না তিন মেয়েকে কোন যুক্তিতে ‘বাংলাদেশি’ হল!

NRC Assam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy