Advertisement
E-Paper

রানার পর চোকসীকেও ফেরত পাওয়ার আশা! তবে বিজয় মাল্য, নীরব মোদী, ললিত মোদীরা এখনও নাগালের বাইরে

তাহাউর রানাকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে গত সপ্তাহেই। বেলজিয়ামে গ্রেফতার হয়েছেন মেহুল চোকসীও। তাঁকেও দেশে ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে ভারত। তবে পলাতকদের তালিকায় রয়েছেন আরও অনেকে। বহু বছর কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত তাঁদের ফেরানো যায়নি।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:০০
(বাঁ দিক থেকে) মেহুল চোকসী, তাহাউর রানা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

(বাঁ দিক থেকে) মেহুল চোকসী, তাহাউর রানা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী তাহাউর রানাকে বিচারের জন্য ভারতে নিয়ে আসা হয়েছে। বেলজিয়ামে গ্রেফতার হয়েছেন ভারতে আর্থিক তছরুপের মামলায় পলাতক মেহুল চোকসীও। তাঁকেও দেশে ফেরানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সূত্রের খবর, ভারত সরকারের অনুরোধেই তাঁকে গ্রেফতার করেছেন বেলজিয়ামের কর্তৃপক্ষ। তাঁকে দেশে ফেরানোর জন্য আইনি পরামর্শ নেওয়া শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে রানা বা চোকসী ছাড়া আরও অনেকে রয়েছেন যাঁদের দেশে নিয়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাঁদের মধ্যে কেউ দেড় দশক ধরে ভিন্‌দেশের জেলে বন্দি, অথচ প্রত্যর্পণ হয়নি। আবার কেউ গ্রেফতার হয়েও জামিন পেয়ে গিয়েছেন। কেউ আবার ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিদেশের মাটিতে!

যাঁদের দেশে ফেরানোর চেষ্টা চলছে, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগও ভিন্ন ভিন্ন। কারও বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে, কেউ আবার জঙ্গিযোগে অভিযুক্ত। আবার কেউ দুষ্কৃতী দলের সদস্য। গত বছরের ডিসেম্বরে সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানিয়েছিলেন, বিভিন্ন দেশে মোট ১৭৮টি প্রত্যর্পণের অনুরোধ পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে শুধু আমেরিকাকেই পাঠানো হয়েছে ৬৫টি প্রত্যর্পণ অনুরোধ। সংসদে আরও জানানো হয়, ২০০২-২০১৮ সালের মধ্যে ১১টি প্রত্যর্পণ অনুরোধকে গুরুত্ব দিয়েছে আমেরিকা। বস্তুত, গত বছরের ডিসেম্বরের পর থেকে এখনও পর্যন্ত একটি মাত্র সফল প্রত্যর্পণ হয়েছে। গত সপ্তাহে আমেরিকা থেকে বিশেষ বিমানে ভারতে ফেরানো হয়েছে রানাকে। তবে রানার সহযোগী ডেভিড হেডলি বা চোকসীর ভাগ্নে নীরব মোদী এখনও ভারতের নাগালের বাইরে।

ডেভিল কোলম্যান হেডলি

২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী হেডলি। মুম্বই পুলিশের অভিযোগ, রানা এবং তাঁর বন্ধু হেডলি মিলেই জঙ্গি হানার চক্রান্ত করেছিলেন। হেডলিকে ভারতে নিয়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে ভারতও। ২০০৯ সালে তাঁকে গ্রেফতার করে আমেরিকার গোয়েন্দারা। রানা গ্রেফতার হওয়ার কয়েক দিন আগেই তিনি গ্রেফতার হন। তবে হেডলিকে এখনও ভারতের হাতে তুলে দেয়নি আমেরিকা। আমেরিকার আদালতে দোষ কবুল করেছেন তিনি। ২০১৩ সালে হেডলিকে ৩৫ বছরের কারাদণ্ড দেয় মার্কিন আদালত। এখনও আমেরিকার আদালতেই বন্দি রয়েছেন ২৬/১১ হামলার ওই চক্রী।

নীরব এবং নীশল মোদী

২০১৮ সালে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক থেকে ঋণখেলাপের মামলায় অভিযুক্ত হন হিরে ব্যবসায়ী নীরব। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়ার পরেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। ইডি তাঁকে ‘পলাতক’ ঘোষণা করে। ২০১৯ সালে ব্রিটেনে গ্রেফতার করা হয়েছিল নীরবকে। সেই থেকে তিনি লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার এলাকায় এক জেলে বন্দি রয়েছেন। এ ক্ষেত্রেও ভারতের তরফে প্রত্যর্পণের অনুরোধের পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ১৩৮৫০ কোটি টাকার ঋণখেলাপির মামলার অভিযুক্ত নীরবের জামিনের আবেদন বার বার খারিজ হয়ে গিয়েছে। গত বছরের মে মাসে সপ্তম বারের জন্য তাঁর জামিনের আর্জি খারিজ হয়। নীরবের ছোট ভাই নীশলও ওই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত। ২০১৮ সালে সিবিআইয়ের তরফে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে নীশলের প্রত্যর্পণের ব্যবস্থা করার জন্যও অনুরোধ করা হয়। নীশলের বর্তমানে বেলজিয়ামের নাগরিকত্ব রয়েছে। যদিও নীশলের দাবি, এই ঋণখেলাপির মামলায় তাঁর কোনও যোগ নেই। চোকসী এবং নীরবের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই বলে ২০২০ সালে ইডিকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছিলেন তিনি।

বিজয় মাল্য

‘কিংফিশার’ উড়ান সংস্থার (বর্তমানে অস্তিত্বহীন) মালিক ছিলেন মাল্য। ১৭টি ভারতীয় ব্যাঙ্ক থেকে কিংফিশার এয়ারলাইন্সের জন্য প্রায় ন’হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন মাল্য। কিন্তু সেই টাকা মেটাতে না পারায় ২০১৬-র মার্চ মাসেই দেশ ছাড়েন কিংফিশার কর্তা। তাঁকে পলাতক ঘোষণা করা হয়। এর পরে ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল লন্ডনে গ্রেফতার হন তিনি। ভারতে ঋণখেলাপ-সহ একাধিক মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করেছিল স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। কিন্তু গ্রেফতারির তিন ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই জামিনে মুক্তিও পেয়ে যান তিনি। মাল্যকে দেশে ফেরানোর জন্য ভারত দীর্ঘ দিন ধরে চেষ্টা চালালেও এখনও কোনও সুরাহা হয়নি।

ললিত মোদী

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রাক্তন সহ-সভাপতি ললিতের বিরুদ্ধে বিপুল অঙ্কের আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। ‘ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ’ বা আইপিএল-এর সূচনা হয় তাঁর হাত ধরেই। অভিযোগ, আইপিএলের শীর্ষপদে থাকাকালীন প্রচুর টাকার আর্থিক দুর্নীতি করেছেন ললিত। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রচুর টাকাও তিনি নয়ছয় করেছেন বলে অভিযোগ। ২০১০ সালে ললিত ভারত ছাড়েন এবং লন্ডনে গিয়ে থাকতে শুরু করেন। তাঁকে দেশে ফেরানোর জন্য চেষ্টা করছে ভারত। তবে এখনও সাফল্য আসেনি। সম্প্রতি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র ভানাটুর নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন ললিত। নাগরিকত্ব পাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর পাসপোর্ট বাতিল করে দেয় ভানাটু। ওই ঘটনার পরে ভানাটুর প্রধানমন্ত্রী জোথাম নাপাট জানিয়েছিলেন, কোনও দেশে প্রত্যর্পণের হাত থেকে বাঁচতে কেউ তাঁদের দেশের নাগরিকত্ব চাইলে, তা বৈধ কারণ হিসাবে বিবেচিত হবে না।

বিনয় মিশ্র

পশ্চিমবঙ্গে কয়লা ও গরু পাচারের তদন্ত শুরু করার পরেই বিনয় মিশ্র দুবাইয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন। এর পর প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপরাষ্ট্র ভানাটুতে গিয়ে আত্মগোপন করেন। পরে ওই ভানাটুর নাগরিকত্ব নিয়ে সেখানেই পাকাপাকি ভাবে বসবাস শুরু করেন বিনয়। ওই দ্বীপরাষ্ট্রের একটি অংশ বিনয় কিনে নিয়েছেন বলেও নাকি তদন্তে উঠে এসেছে। ওই দ্বীপরাষ্ট্রের ভারতীয় দূতাবাসে তাঁর ভারতীয় পাসপোর্ট জমা দিয়ে লিখিত আবেদন করে বিনয় জানিয়ে দেন, বর্তমানে তিনি ভানাটুর নাগরিক। তাঁর ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিল করা হোক।

আনমোল বিশ্নোই

লরেন্স বিশ্নোই বর্তমানে জেলবন্দি। তবে তাঁর দুষ্কৃতীদল এখনও সক্রিয়। তদন্তকারীদের অনুমান, ‘বিশ্নোই গ্যাং’-এর দুষ্কৃতী কার্যকলাপের বেশির ভাগই বর্তমানে পরিচালনা করেন লরেন্সের ভাই আনমোল। ২০২২ সালে সঙ্গীতশিল্পী সিধু মুসেওয়ালা হত্যাকাণ্ডে আনমোলও জড়িত বলে সন্দেহ পুলিশের। গত বছরে মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকির হত্যা মামলায় নাম জড়ায় ‘বিশ্নোই গ্যাং’-এর। এরই মধ্যে গত বছরের নভেম্বরে আমেরিকায় গ্রেফতার হন আনমোল। সূত্রের খবর, আনমোল আমেরিকায় গ্রেফতার হওয়ার পরে তাঁকে দেশে ফেরানোর জন্য উদ্যোগী হয়েছে মুম্বই পুলিশ।

গোল্ডি ব্রার

সতিন্দরজিৎ সিংহ ওরফে গোল্ডির সঙ্গেও ‘লরেন্স গ্যাং’-এর যোগ ছিল। দুষ্কৃতীদলের ভিন্‌দেশের কার্যকলাপ সামলানোর দায়িত্ব গোল্ডির উপর। খলিস্তানপন্থী নিষিদ্ধ সংগঠন ‘বব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনাল’-এর সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল বলে অভিযোগ। ভারত সরকার তাঁকে জঙ্গি ঘোষণা করেছে। তিনি বর্তমানে কানাডায় রয়েছেন। কানাডায় প্রথম ২৫ ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’-এর তালিকাতেও রয়েছেন গোল্ডি। তাঁকে ধরার জন্য ২০২২ সালে ইন্টারপোল রেড কর্নার নোটিস জারি করে।

অর্শ দল্লা

খলিস্তানপন্থী নেতা অর্শ ভারতের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় অন্যতম অভিযুক্ত। হরদীপ সিংহ নিজ্জরের মৃত্যুর পর নিষিদ্ধ খলিস্তানপন্থী সংগঠন ‘খলিস্তান টাইগার ফোর্স’-কে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। ভারতে খুন, খুনের চেষ্টা, তোলাবাজি, অশান্তি পাকানোর চেষ্টা, সন্ত্রাসবাদে মদত-সহ ৫০টিরও বেশি মামলা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০২২ সালে তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিস জারি হয় এবং ২০২৩ সালে তাঁকে জঙ্গি তালিকাভুক্ত করে ভারত সরকার। তাঁকে গ্রেফতার করার জন্য ভারত সরকার অনুরোধ করেছিল কানাডার সরকারকে। অর্শ ধরাও পড়েন কানাডায়। তবে ভারতের হাতে এখনও তুলে দেওয়া হয়নি তাঁকে।

হাজরা ইকবাল মেমন

নিহত গ্যাংস্টার ইকবাল মিরচির স্ত্রী মেমন। মেমন এবং তাঁর দুই পুত্র আসিফ এবং জুনাইদকে ২০২১ সালে পলাতক ঘোষণা করা হয়। মুম্বইয়েই বেশ কিছু সম্পত্তি জবরদখল করার অভিযোগ রয়েছে মেমন পরিবারের বিরুদ্ধে। দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গেও এই পরিবারের যোগাযোগ রয়েছে বলে সন্দেহ তদন্তকারীদের। ২০২১ সালে মেমন পরিবারের ৮০০ কোটি টাকার সম্পপ্তি বাজেয়াপ্ত করে ইডি। তবে মেমন এবং তাঁর সন্তানেরা কোন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন, তা জানা যায়নি।

Fugitive Mehul Choksi Vijay Mallya Nirav Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy