মারমুখী। হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে ছাত্র জমায়েতে কানহাইয়া কুমার। বৃহস্পতিবার পিটিআইয়ের ছবি।
তাঁর লাল চপ্পলকে নিয়ে এখন আলোচনা সর্বত্র। আর এই সময়েই আজ প্রতিপক্ষের চপ্পলের নিশানার মধ্যে পড়তে হলো কানহাইয়া কুমারকে।
রোহিত ভেমুলার শহর হায়দরাবাদে বুধবার পৌঁছনোর পর থেকেই কানহাইয়াকে আটকানোর চেষ্টা হয়েছে বারবার। ভিতরে যাওয়ার অনুমতি না মেলায় বুধবার হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরেই তিনি উগরে দিয়েছিলেন ক্ষোভ। আর আজ সরাসরি আক্রমণের শিকার হলেন তিনি। দুপুরে শহরে একটি আলোচনা সভায় যোগ দিতে সবে পৌঁছেছেন কানহাইয়া কুমার। তাঁর কথা শুনতে ছাত্রছাত্রীদের ভিড়ে ঠাসা হলঘর। আচমকাই দর্শক আসন থেকে উড়ে এল চপ্পল। গো-রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত জনৈক নরেশ কুমারের এমন কাণ্ডের পরেই শুরু হয়ে গেল তুমুল হইচই। মারমুখী ছাত্ররাও জবাব দিতে ছুটে গেলেন ওই ব্যক্তির দিকে। বেশ কিছু ক্ষণ চলল হাতাহাতি। অসহিষ্ণুতার এই আবহেই হায়দরাবাদে দাঁড়িয়ে জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি বললেন, ‘‘যা ইচ্ছে হয় করুন, কিন্তু এ ভাবে আমার মুখ বন্ধ করতে পারবেন না।’’
হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের দলিত ছাত্র রোহিতের আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে এ দিন মোদী সরকারকে নিশানা করেন কানহাইয়া। প্রশ্ন তোলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সরকারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলি নিয়েও। তাঁর স্পষ্ট অভিযোগ, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি এখন সুপরিকল্পিত ভাবে মোদী সরকারের আক্রমণের শিকার। আর দলীয় ভাবে বিজেপি যে ভাবে তাঁদের
দিকে প্রশ্ন তুলছে, তারও জবাব দিয়েছেন ছাত্রনেতা। ‘‘অভিযোগ আনা হচ্ছে, আমরা রাজনীতি করছি। আমরা, নাকি সরকারই রাজনীতি করছে?’’ প্রশ্ন তোলেন কানহাইয়া। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বশাসন শেষ করে দিতে আগে
থেকেই ছক কষে রেখেছে সরকার। কেন না, এই সব জায়গা থেকেই তো সরকারকে সমালোচনার সুর শোনা যায়।’’ এ কারণেই হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জেএনইউয়ের কোনও পার্থক্য নেই বলেই যুক্তি দেন কানহাইয়া। পুণের এফটিআইআই, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, জেএনইউ বা হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘যুদ্ধ ক্ষেত্র বানিয়ে দেওয়া হয়েছে’ বলে মোদী সরকারের দিকে আঙুল তোলেন তিনি।
রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় জামিন পাওয়ার পরে কানহাইয়াকে বিজেপি বিরোধী ছাত্র-যুবদের মুখ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে। তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ-সহ কয়েকটি রাজ্যে ভোটের প্রচারে আনারও চেষ্টা করেছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। শুরুতে কানহাইয়াও এ নিয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। কিন্তু হায়দরাবাদে কানহাইয়া আজ জানিয়ে দেন, পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের প্রচারে যাচ্ছেন না তিনি। তবে শুধু ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বিষয়ই নয়, সামগ্রিক ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতাকে তুলে ধরেন কানহাইয়া। তাঁর মন্তব্য, মোদী সরকার যে উন্নয়নের কথা বলছিল, গত দু’বছরে তা একেবারে পিছনের সারিতে চলে গিয়েছে।
হায়দরাবাদে পৌঁছে গত কালই রোহিত ভেমুলার মা ও ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি। বুধবারই তিনি অভিযোগ এনেছিলেন, রোহিতের আত্মহত্যা নিয়ে যে সব প্রশ্ন উঠেছে, তাকে চাপা দিতেই জেএনইউয়ে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তোলা হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের আপত্তিতে হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢুকতে পারেননি কানহাইয়া। সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে থেকেই তোপ দেগেছেন তিনি। আর আজ তাঁর সফরের দ্বিতীয় দিনে ঘটে গেল চপ্পল ছোড়ার ঘটনা। তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও এই ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছে দিল্লিতে পাটিয়ালা হাউস কোর্টের সামনে কানহাইয়ার মার খাওয়ার দিনটাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy