Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Agnipath Scheme

Agneepath Scheme: অগ্নিপথের ধাঁচে এসবিআই-সহ একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে শুরু চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ

এই তালিকায় আছে স্টেট ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অব বরোদা-সহ কয়েকটি নাম। সেখানে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ হচ্ছে মূলত অফিসার গ্রেড-এর কিছু পদে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২২ ০৫:৫৯
Share: Save:

ভারতীয় সেনায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রকল্প অগ্নিপথ নিয়ে সম্প্রতি বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে গোটা দেশ। সেটি প্রত্যাহারের দাবিতে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে শামিল হয়েছে যুব সমাজের একাংশ। এই পরিস্থিতিতে খানিকটা অগ্নিপথের ধাঁচেই কর্মী নিয়োগ করতে শুরু করেছে কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। সূত্রের খবর, এই তালিকায় আছে স্টেট ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অব বরোদা-সহ কয়েকটি নাম। সেখানে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ হচ্ছে মূলত অফিসার গ্রেড-এর কিছু পদে। তার মধ্যে সাধারণের পাশাপাশি উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের একাংশও পড়ছেন। কিছু দিন আগেও ওই পদগুলিতে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ হত।

কর্মী ইউনিয়নগুলির অভিযোগ, মোদী সরকার এ ভাবে ব্যাঙ্ক শিল্পেও চুপিসারে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নেওয়ার পথ খুলে দিল। সব জায়গাতেই অগ্নিপথের মতো মডেল এনে কম টাকায় কাজ করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। যাঁদের অস্থায়ী ভাবে চাকরি দেওয়া হচ্ছে, তাঁরাও নানা ভাবে বঞ্চিত হবেন। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের মতে, এ ভাবে বহু মেধাবী ছেলেমেয়ের কেরিয়ার অকালে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। চুক্তি শেষ হওয়ার পরে কেউ কাজ না পেলে আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও পড়ার আশঙ্কা থাকছে। কারণ, আর্থিক ভাবে কোনও বাড়তি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না তাঁদের।

গত জুনে সেনাবাহিনীতে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগের কথা ঘোষণার পরে মোদী সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রকল্পের বিরুদ্ধে সরব হন বিরোধীরা। অগ্নিপথের বিরুদ্ধে একের পর এক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। প্রশ্ন উঠেছে ব্যাঙ্কে স্বল্পমেয়াদি ঠিকাভিত্তিক নিয়োগ নীতি নিয়েও। সংশ্লিষ্ট ওই সূত্র বলছে, যে সব পদে নিয়োগ করা হচ্ছে, তাতে বেতন এবং চাকরির মেয়াদ, দু’টিই আগে থেকে নির্দিষ্ট করে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে চুক্তিতে। ফলে তা বাড়ানোর কোনও প্রশ্নই আর থাকছে না। মাসে মাসে থোক টাকা বেতনে দুই থেকে সাত বছরের চুক্তি করা হচ্ছে। মেয়াদ শেষ হলে তা নবীকরণ হবে কি না, সেটা নির্ভর করবে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের ইচ্ছের উপরে। অর্থাৎ কর্মীদের আরও কোনও মতামত রইল না। সাধারণ ভাবে থোক বেতনের বাইরে তেমন কোনও আর্থিক সুবিধা দেওয়ার বন্দোবস্তও নেই। কাজের জন্য কাউকে কিছু দিনের জন্য বাইরে পাঠানো হলে তাঁকে যাওয়া আসার ভাড়া এবং নির্দিষ্ট হারে ভাতা দেওয়া হবে। তবে চুক্তিতে নিযুক্ত অফিসারেরা পেনশন বা গ্র্যাচুইটি পাবেন না বলে জানিয়েছে ব্যাঙ্ক শিল্পের ইউনিয়নগুলি। তাদের মতে, এর ফলে যাঁরা চুক্তি শেষে কাজ থেকে বাদ পড়বেন, তাঁদের কোনও আর্থিক নিশ্চয়তা থাকবে না। তখন হয় অন্য কোথাও চাকরি খুঁজে নিতে হবে, নয়তো অবসর নিয়ে বাড়িতে বসে থাকতে হবে। অনেকেরই প্রশ্ন, ৪০ বছর বয়সে কারও চুক্তি শেষ হলে নতুন কাজ পাওয়া কি সহজ?

ইউনিয়নগুলি ইতিমধ্যেই এই ধরনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক অফিসার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাস বলেন, “নিয়োগের এই নতুন মডেলে তুলনামূলক ভাবে অনেক কম টাকায় কাজ করিয়ে নিতে চাইছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। ওই সব অফিসারদের পেনশন দেওয়ার দায়ও ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারবে সরকার।’’ সঞ্জয়বাবুর আরও দাবি, ব্যাঙ্ক শিল্পের সংগঠনগুলিকে দুর্বল করাও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের এই পথে হাঁটার অন্যতম উদ্দেশ্য।

সঞ্জয়বাবুর সঙ্গে একমত ব্যাঙ্ক শিল্পের বিভিন্ন ইউনিয়নের যৌথ মঞ্চ ইউএফবিইউ-র আহ্বায়ক গৌতম নিয়োগী। তিনি বলেন, “প্রতিরক্ষায় যেমন অগ্নিপথ প্রকল্প আনা হয়েছে, খানিকটা সেই ধাঁচেই ব্যাঙ্ক শিল্পে নিয়োগের পরিকল্পনা করেছে সরকার। বহু কর্মী এর মাসুল গুনবেন।’’ ব্যাঙ্ক অফিসারদের আর এক সংগঠন আইবকের রাজ্য সম্পাদক শুভজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ব্যাঙ্কে এই ধরনের স্বল্পমেয়াদি ঠিকা নিয়োগের তীব্র প্রতিবাদ করছি। এটা সর্বনাশ ডেকে আনবে দেশে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সংসদে বলেছেন যে, ব্যাঙ্ক শিল্পে কর্মী এবং অফিসার মিলে ৪১ হাজারেরও বেশি পদ খালি আছে। কিন্তু ওই সব পদে নিয়োগের কোনও পরিকল্পনা তাঁরা তৈরি করেননি। যার ফলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। এর পেছনে সরকারের মদত আছে। রাজকোষের খরচ বাঁচানোর চেষ্টা চলছে সর্বত্র।’’ এতে গ্রাহক পরিষেবা ব্যাহত হতে বাধ্য বলে মন্তব্য করেছেন ব্যাঙ্ক কর্মীদের সংগঠন এআইবিইএ-র সভাপতি রাজেন নাগর।

গোটা পরিকল্পনার মধ্যে রাজনীতির গন্ধও পাচ্ছেন সঞ্জয়বাবুদের মতো ইউনিয়নের নেতারা। তাঁরা বলছেন, “স্থায়ী চাকরিতে এক জন সাধারণত প্রায় ৩৫ বছর ধরে কাজ করেন। পাঁচ বছরের মেয়াদে নিয়োগ করা হলে ওই ৩৫ বছরে ৭ জন কর্মী কাজ করবেন। সরকার নিয়োগের সংখ্যা বাড়িয়েছে, সেটা নির্বাচনের সময় দেখানোই স্বল্পমেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য হতে পারে। অথচ আদতে হচ্ছে উল্টোটা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Agnipath Scheme bank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE