গুজরাতের অহমদাবাদ থেকে লন্ডন গ্যাটউইক বিমানবন্দরগামী এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১ বিমানের ভেঙে পড়া ভারতের উড়ান-ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ দুর্ঘটনা বলে চিহ্নিত হতে চলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। ২৩০ জন যাত্রী এবং ১২ জন বিমানকর্মী (পাইলট এবং তাঁর সহকারী-সহ) ছিলেন ওই উড়ানে। ছিলেন গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীও। দুর্ঘটনার প্রকৃতি দেখে আশঙ্কা করা হচ্ছে তাঁদের অধিকাংশই আর বেঁচে নেই।
নতুন শতকের ভয়াবহ দুই বিমান দুর্ঘটনা
ভারতে এমন ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা অতীতেও বেশ কয়েক বার ঘটেছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ঘটেছে উড়ান বা অবতরণের সময়। ২০২০ সালের ৭ অগস্ট ‘বন্দে ভারত’ মিশনের আওতায় দুবাই থেকে কোঝিকোড়ে ফিরছিল এয়ার ইন্ডিয়ার আইএক্স১৩৪৪। ওই বিমানে ১৮৪ জন যাত্রী এবং ছয় কর্মী ছিলেন। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে বিমানবন্দরে অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে পিছলে খাদে পড়ে যায় বিমানটি। মৃত্যু হয় দুই পাইলট দীপক ভি শাঠে এবং অখিলেশ কুমার-সহ ২১ জনের।
পরে তদন্তে জানা যায় অবতরণের সময় ভুল করে রানওয়ে বরাবর বেশি এগিয়ে গিয়েছিলেন পাইলট। ২০১০ সালে মেঙ্গালুরু বিমানবন্দরেও এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের ফ্লাইট আইএক্স-৮১২ দুবাই থেকে এসে নামার সময়ে ভেঙে পড়েছিল এবং যাত্রী-সহ ১৫৮ জন মারা গিয়েছিলেন। সেখানেও মুখ্য পাইলট ব্রিটিশ নাগরিক ক্যাপ্টেন গ্লুসিকা নামতে গিয়ে ভুল করেছিলেন বলে তদন্তে জানা যায়।
তালিকায় বাংলার পড়শি রাজ্যও
১৯৯৮ সালের ৬ জুলাই বিহারের পটনা বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ভেঙে পড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার সহযোগী সংস্থা অ্যালায়েন্স এয়ারের ফ্লাইট ৭৪১২। নিহত হয়েছিলেন বিমানে সওয়ার ৬০ জনের (৫৫ জন যাত্রী এবং পাঁচ জন পাইলট ও বিমানকর্মী) সকলেই। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিমানটি ভেঙে পড়ায় কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দাও গুরুতর আহত হয়েছিলেন।
মৃত্যুতে শীর্ষে এখনও চারখি-দাদরি
১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দিল্লির পশ্চিম সীমানা লাগোয়া হরিয়ানার চারখি-দাদরি গ্রামের আকাশে ভারতের ভয়ঙ্করতম বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছিল। সৌদি আরবের বোয়িং ৭৪৭ এবং কাজাখস্তানের আইএল-৭৬ যাত্রিবাহী বিমানের মাঝ আকাশে মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছিল মোট ৩৫৯ জনের। এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের নির্দেশ বুঝতে ভুল হওয়ার কারণেই দুই বিমান এক উচ্চতায় চলে এসেছিল সে দিন।
রানওয়েতে বিভ্রাটও দেখেছে মৃত্যু
১৯৯৩ সালের ২৬ এপ্রিল ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৪৯১ মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড়ানের উদ্দেশে ছুটতে শুরু করার পরেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রানওয়েতে একটি ট্রাকে ধাক্কা মেরেছিল। ওই ঘটনায় বোয়িং ৭৩৭-২এ৮ বিমানটিতে সওয়ার ১১৮ জনের মধ্যে ৫৫ জন যাত্রী মারা গিয়েছিলেন। গুরুতর জখম হয়েছিলেন ৬০ জন। ১৯৯০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৬০৫ কর্নাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুর উপকণ্ঠে ‘হ্যাল’ বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়েছিল। এয়ারবাস এ-৩২০ বিমানটি রানওয়ে থেকে পিছলে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল। বিমানের ১৪৬ জন যাত্রী এবং ক্রু সদস্যের মধ্যে ৯২ জন এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন।
৩৭ বছর আগের সেই অহমদাবাদ বিপর্যয়
ভারতের ইতিহাসে অন্যতম মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা ৩৭ বছর আগেও ঘটেছিল অহমদাবাদে। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১১৩ অবতরণের সময় শেষ মুহূর্তে ভেঙে পড়েছিল। ১৩০ জন যাত্রী এবং বিমানকর্মী নিহত হয়েছিলেন ওই দুর্ঘটনায়। বেঁচে গিয়েছিলেন মাত্র দু’জন। দৃশ্যমানতা কম থাকার কারণেই ওই বোয়িং ৭৩৭ বিমানটি দুর্ঘটনার শিকার হয় বলে তদন্ত রিপোর্টে জানানো হয়েছিল। ১৯৭৮ সালের ১ জানুয়ারি এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ৮৫৫ মুম্বইয়ে ভেঙে পড়েছিল। বিমানে থাকা ২১৩ জন আরোহী ও বিমানকর্মীর সকলেই নিহত হয়েছিলেন।
আরও কিছু মর্মান্তিক দুর্ঘটনা
১৯৭৩ সালের ৩১ মে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছোনোর সময় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৪৪০ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বিমানে থাকা ৬৫ জনের মধ্যে ৪৮ জন মারা গিয়েছিলেন ওই দুর্ঘটনায়। ১৯৬৩ সালের ২৮ জুলাই ইউনাইটেড আরব এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৮৬৯ মুম্বই (তৎকালীন বম্বে) বিমানবন্দর থেকে ওড়ার পরেই আরব সাগরে ভেঙে পড়েছিল। ৬৩ জন আরোহীর সকলেই নিহত হন। ওই ঘটনার এক বছর আগে ১৯৬২ সালে ৭ জুলাই ইউরোপের বিমান সংস্থা অ্যালিটালিয়ার ফ্লাইট ৭৭১ উড়ানের পরেই মুম্বইয়ের উত্তর-পূর্বে একটি পাহাড়ে ধাক্কা খেয়েছিল। ৯৪ জন আরোহীর সকলেই নিহত হয়েছিলেন ওই দুর্ঘটনায়।