দলের নেতাদের সঙ্গে শশিকলা।
দলের সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বটাও তিনি নিন। এমনটাই চাইছেন এআইএডিএমকে-র শীর্ষ নেতারা। রবিবার পোয়েস গার্ডেনে দেখা করে ‘চিনাম্মা’ ওরফে শশিকলা নটরাজনকে এই আর্জিই জানালেন তাঁরা। পাশাপাশি, জয়ললিতাকে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়ার আর্জি নিয়ে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
জয়ললিতার মৃত্যুর পর পরই শশিকলাকে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী পনীরসেলভম এবং লোকসভার ডেপুটি স্পিকার এম থাম্বিদুরাই-সহ দলের শীর্ষ নেতারা।
মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি দলের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন জয়ললিতা। আম্মার মৃত্যুর পর শশিকলাকে সেই জায়গাতেই বসাতে চাইছিলেন দলের শীর্ষ নেতারা। তড়িঘড়ি করে তাঁকে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সিলমোহর দিয়ে দেয় দল। তা নিয়ে দলের ভিতরে ও বাইরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দলের গঠনতন্ত্র ও আইনকে অগ্রাহ্য করেই শশিকলাকে এই পদ দেওয়া হয়েছে। তবে দলের মুখপাত্র সি পোনাইয়ান জানিয়ে দেন, সর্বসম্মতিক্রমে চিনাম্মাকে এই পদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে দলের আইন সংশোধন করা হবে।
এই বিতর্কের মধ্যেই আরও এক ধাপ এগিয়ে দলের শীর্ষ নেতারা এ বার শশিকলাকেই তাঁদের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বেছে নিতে চাইছেন। এআইএডিএমকে-র একটি শাখা ‘জয়ললিতা পেরাভাই’ রবিবারই এই প্রস্তাব পেশ করে। তাদের প্রস্তাব, আম্মার আর কে নগর বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে লড়ুন শশিকলা।
পেরাভাই-এর সম্পাদক আর বি উদয়কুমার, যিনি তামিলনাড়ুর রাজস্ব মন্ত্রী, ‘থাই থান্তা ভরম’ নামে একটি প্রস্তাবপত্র শশিকলার হাতে তুলে দেন। ‘থাই থান্তা ভরম’ মানে আম্মারই আশীর্বাদ শশিকলা। রাজ্যের আবাসন মন্ত্রী উড়ুমালাই কে রাধাকৃষ্ণণেরও একই দাবি। তিনি বলেন, “দলের দেড় কোটি সমর্থকের অভিভাবকের দায়িত্ব নিতে চিনাম্মাকে অনুরোধ করা হয়েছে।”
চিনাম্মা-র সঙ্গে দেখা করতে দলীয় নেতারা।
দলের শীর্ষ নেতারা যে ভাবে শশিকলাকে তাঁদের এবং সমর্থকদের অভিভাবক হিসাবে দেখতে চাইছেন, দলের ক্যাডার এবং ভোটাররা কিন্তু সেটা মেনে নিতে পারছেন না। তাঁদের অনেকেই মনে করছেন, শশিকলার হাতে দায়িত্ব গেলে তামিলনাড়ুর অবস্থা শোচনীয় হবে। যেমন রাসু মাসিলামানি নামে এক সমর্থকের কথায়, “আম্মাকে ভোট দিয়েছি। তিনিই আমার মুখ্যমন্ত্রী।” শশিকলা ও তাঁর পরিবার সম্পর্কে তিনি বলেন, “এঁরা কারা, এই ভাবে দলে নিজের আধিপত্য কায়েম করার চেষ্টা চালাচ্ছে?” তিনি যে ফের এআইএডিএমকে-কে ভোট দেবেন না সেটা স্পষ্ট জানিয়েছেন।
আরও এক সমর্থক জানান, তাঁর ভোটাধিকার রয়েছে। কিন্তু শশিকলাকে তাঁর নেতা হিসাবে মেনে নিতে পারছেন না। তবে, জয়ললিতাকে ভারতরত্ন দেওয়ার প্রস্তাব খুশি তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী পনীরসেলভম প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই দরবার করতেই সোমবার দিল্লি পৌঁছেছেন। সেই জয়ললিতার জায়গায় শশিকলা? অস্বস্তিতে দলের সমর্থকরাই।
আরও খবর: শশিকলা বনাম শশিকলা লড়াইয়ে সরগরম তামিল রাজনীতি
বিশেষজ্ঞরা তাই বলছেন, দলের শীর্ষ নেতারা যতই শশিকলাকে নিজেদের নেতা হিসাবে মানুন না কেন, আপামর তামিলনাড়ুবাসী কিন্তু তাঁকে নেতা হিসাবে মানতে নারাজ। আর এর প্রভাব কিন্তু পরবর্তী নির্বাচনে পড়তে বাধ্য।
আম্মার মৃত্যুর পর শশিকলাই যে দলের রাশ ধরতে চলেছেন সেটা এক প্রকার স্পষ্টই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যে ভাবে এআইএডিএমকে নেতারা দলের গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চিনাম্মাকে দলের অভিভাবক করতে চাইছেন, তাতে নারাজ দলীয় সমর্থকরাই। তাঁরা কোনও ভাবেই শশিকলাকে আম্মার জায়গায় বসাতে পারছেন না।
এই শশিকলাকেই আম্মাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ৩০ বছর ধরে আম্মার ছায়াসঙ্গী শশিকলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছিল, তখন থেকেই তাঁর প্রতি তীব্র দ্বেষ জন্মেছিল আম্মার সমর্থকদের মধ্যে। সেই শশিকলাকেই যখন দলের শীর্ষ নেতারা এআইএডিএমকে-র মুখ হিসাবে তুলে ধরতে সচেষ্ট, জয়ললিতার একনিষ্ঠ সমর্থকদের মধ্য ক্ষোভ দানা বাঁধা কি স্বাভাবিক নয়, প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
ছবি: টুইটার থেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy