উদয়বীর সিংহ
মুলায়ম সিংহ যাদবের সংসারে দ্বন্দ্ব মেটার ইঙ্গিত মিলেছিল শুক্রবার। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে গেল, তা ইঙ্গিতই।
যাঁকে কেন্দ্র করে পিতা-পুত্রের দ্বন্দ্ব, মুলায়মের সেই ভাই শিবপাল সিংহ যাদব কালই জানিয়েছিলেন, দল জিতলে মুখ্যমন্ত্রী হবেন অখিলেশ যাদবই। কিন্তু শনিবার মুলায়ম সিংহ যাদবকে ‘অপমানজনক’ ভাষায় চিঠি লেখার অভিযোগে সমাজবাদী পার্টির বিধান পরিষদের সদস্য তথা অখিলেশের ঘনিষ্ঠ সহযোগী উদয়বীর সিংহকে ৬ বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হল।
ফলে সমাজবাদী পার্টির অন্দরে ‘মুষল পর্ব’ জারি রয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।
উদয়বীরের চিঠি অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছে আর একটি চিঠির কথা। সেই চিঠিও লেখা হয়েছিল মুলায়মকে। লিখেছিলেন তাঁর ছেলে অখিলেশ। চিঠিতে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ৫ নভেম্বর মুলায়ম সিংহের নেতৃত্বে দল প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী বছর পালনের উৎসবে তিনি থাকতে পারবেন না। কারণ ভোটের কথা মাথায় রেখে ৩ নভেম্বর থেকেই তিনি ‘বিকাশ রথ যাত্রা’ শুরু করবেন। রাজনীতির বিশ্লেষকদের মতে, এই চিঠিতেই অখিলেশ স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, প্রয়োজনে তিনি ভিন্ন পথে চলতেও প্রস্তুত।
আর এখন উদয়বীরের চিঠি। মুলায়মকে লেখা চিঠিতে উদয়বীর প্রস্তাব দিয়েছেন, অখিলেশ যাদবকে দলের সভাপতি করা হোক। সেই সঙ্গে তিনি মুলায়মের কাছে অভিযোগ করেছেন, ‘নেতাজির’ দ্বিতীয় স্ত্রী সাধনা তাঁর ভাই শিবপাল যাদবের সঙ্গে হাত মিলিয়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ করছেন। উদয়বীর লিখেছেন, ‘‘সমাজবাদী পার্টির রাজ্য সভাপতি শিবপাল যাদব এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা আপনাকে (মুলায়ম) বিভ্রান্ত করছে। মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত রয়েছেন তাঁরা।’’ এমনকী, অখিলেশকে বিপদে ফেলতে তাঁর সৎ মা সাধনা তুকতাক করছেন বলেও চিঠিতে অভিযোগ করেছেন উদয়বীর।
অখিলেশের ঘনিষ্ঠ সহযোগী উদয়বীর যে ভাষায় মুলায়মকে চিঠি লিখেছেন, তা অত্যন্ত ‘অপমানজনক’ বলে মনে করছে সমাজবাদী পার্টির প্রদেশ কার্যনির্বাহী কমিটি। তাই এ দিন শিবপালের নেতৃত্বে কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উদয়বীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সর্বসম্মত ভাবে একটি প্রস্তাব পাশ করা হয়। দলের রাজ্য স্তরের মুখপাত্র অম্বিকা চৌধুরি বলেন, ‘‘অসৌজন্যমূলক ব্যবহার এবং দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্যই উদয়বীরকে ৬ বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দল এই ধরনের ব্যবহার কোনও মতেই সহ্য করবে না। শৃঙ্খলার কারণেই দল রজতজয়ন্তী উৎসব পালন করতে চলেছে।’’
দলের আর এক নেতা গৌরব ভাটিয়ার কথায়, ‘‘লক্ষ্মণরেখা অতিক্রম করে গিয়েছেন উদয়বীর। যে ধরনের শব্দ তিনি চিঠিতে ব্যবহার করেছেন, তা দলের কর্মীদেরও আঘাত করেছে।’’ তাঁর মতে, মুলায়ম সিংহ দলের নির্বাচিত সভাপতি। তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা ভুল। এক জন বিধান পরিষদের সদস্য কখনওই ঠিক করে দিতে পারেন না দলের সভাপতি কে হবেন। এমন আচরণ শৃঙ্খলাভঙ্গের সামিল। আর দলের শৃঙ্খলা ভাঙলে শাস্তি পেতেই হবে। এ ক্ষেত্রে ঠিক সেটাই হয়েছে।
উদয়বীরের সঙ্গে অখিলেশের বন্ধুত্ব তিন দশকেরও বেশি সময়ের। স্কুলেও দু’জনে সহপাঠী ছিলেন। এ দিন দল থেকে বহিষ্কারের ব্যাপারে উদয়বীরের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘আগে চিঠি হাতে পাই, তার পর যা বলার বলব।’’ সেই সঙ্গে উদয়বীর এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, মুলাময়কে এই ভাষায় চিঠি লেখার জন্য তাঁর কোনও অনুতাপ নেই। অখিলেশের ঘনিষ্ঠ সহযোগীর কথায়, ‘‘মুলায়ম সিংহ যাদব দলের পৃষ্ঠপোষক। তিনি অখিলেশ এবং আমার প্রতি সুবিচার করবেন বলে আমি আত্মবিশ্বাসী।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘যাঁরা পার্টি প্রধানের বিরুদ্ধে আজেবাজে কথা বলছেন, তাঁরা বহাল তবিয়তে দলে রয়েছেন। আর যাঁরা তাঁর সত্যিকারের শুভাকাঙ্খী এবং তাঁকে চিঠি লিখছেন, তাঁকেই দল থেকে তাড়ানো হচ্ছে।’’
ঘটনা হল, কালই দলের প্রদেশ সভাপতি শিবপাল যাদবের ডাকা বৈঠকে যোগ দেননি অখিলেশ। শিবপালের ব্যক্তিগত অনুরোধ সত্ত্বেও। উল্টে অখিলেশ দলের জেলা ও নগর স্তরের নেতাদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করে কথা বলেন তাঁর ‘বিকাশ রথ য়াত্রা’ সম্পর্কে। আর তার পর দিনই অখিলেশের ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে দল থেকে বহিষ্কার করে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকেই কি কোনও বার্তা দেওয়া হল?
এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনীতির অলিন্দে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy