আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। শুক্রবার সকাল ৮টায় ইভিএম খোলার পরেই আঁচ মিলবে, আগামী ৫ বছরের জন্য পটনার কুর্সি কার দখলে আসতে চলেছে। প্রায় সবক’টি বুথফেরত সমীক্ষাতেই আরজেডি, কংগ্রেস, বিকাশশীল ইনসান পার্টি এবং তিন বামদলের ‘মহাগঠবন্ধন’ (মহাজোট)-এর তুলনায় এনডিএ-কে এগিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু ভারতের নির্বাচনী ইতিহাস বলছে, অনেক ক্ষেত্রেই এমন পূর্বাভাস মেলে না।
ভোটদানের ক্ষেত্রে অবশ্য ইতিমধ্যেই নজির গড়েছে বিহার। গত ৬ নভেম্বর ২৪৩ আসনের বিধানসভায় প্রথম দফায় ১২১টি আসনে ভোট পড়েছিল ৬৫.০৮ শতাংশ। ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় ১২২টি আসনে ৬৮.৭৮ শতাংশ। অর্থাৎ, সামগ্রিক ভাবে প্রায় ৬৭ শতাংশ। মগধভূমে নির্বাচনী ইতিহাসে যা সর্বকালীন রেকর্ড। বুথফেরত সমীক্ষার ফল সত্যি হলে আরও একটি রেকর্ড গড়বে বিহার। পাঁচ বছরের ব্যবধানে ভোটদানের হার ১০ শতাংশ বেড়ে গেলে ভারতের কোনও অঙ্গরাজ্যে এ যাবৎ শাসকের প্রত্যাবর্তন দেখেনি। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভোটদানের হার ছিল ৫৭ শতাংশ। সে বার ৩৭.২৬ শতাংশ ভোট পেয়ে ১২৫টি আসনে জিতেছিল এনডিএ। ৩৭.২৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ১১০টিতে মহাগঠবন্ধন। নির্দল ও অন্যেরা আটটিতে। তবে জয় নিশ্চিত দাবি করে এ বার পটনায় বিজেপির সদর দফতরে উৎসব পালনের জন্য ৫০০ কিলোগ্রাম লাড্ডুর বরাত দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই।
বিহারে এ বার নির্বাচনী ময়দানে রয়েছে প্রাক্তন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের দল জন সুরাজ পার্টিও, যদিও বুথফেরত সমীক্ষায় তাদের অবস্থান ভাল নয়। প্রচারের শেষপর্বে প্রতিশ্রুতির বন্যা এবং একে অপরকে কাঠগড়ায় তুলে প্রচারে ঝড় তুলেছে শাসক-বিরোধী সব পক্ষই। মহাগঠবন্ধনের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী আগেই বিহারের প্রতিটি পরিবারের এক জন সদস্যকে সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেষবেলায় তাঁর অঙ্গীকার, মহাগঠবন্ধন ক্ষমতায় এলে বিহারের মহিলাদের এককালীন ৩০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে কৃষকেরাও পাবেন অঢেল সুবিধা। অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ এবং তাঁদের সহযোগী বিজেপির প্রচারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে ‘লালু জমানার জঙ্গলরাজ’ এবং গত দু’দশকে বিহারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং উন্নয়ন। সেই ভোটের আগে কুশলী চাল দিয়েছেন নীতীশ। বিহারের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মহিলাদের অ্যাকাউন্টে এককালীন ১০ হাজার টাকা দিয়ে তাঁর প্রতিশ্রুতি, ক্ষমতায় ফিরলে অন্য মহিলাদেরও একই অঙ্কের অর্থ দেবেন।
আরও পড়ুন:
স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির নেত্রীরা (যাঁরা ‘জীবিকা দিদি’ নামে পরিচিত) নীতীশের পক্ষে ভোট প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করেন। সেই ভোট ‘পাখির চোখ’ করে তেজস্বীর পাল্টা অঙ্গীকার— তিনি মুখ্যমন্ত্রী হলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের স্থায়ী নিয়োগ করা হবে। এ বারের বিধানসভা ভোটে রাজনৈতিক সমীকরণও শাসকদলের অনুকুলে। লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস)-র প্রধান চিরাগ পাসোয়ান ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটে এনডিএ-তে থেকেও জেডিইউর বিরুদ্ধে প্রায় সমস্ত আসনে প্রার্থী দিয়েছিলেন (তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বিজেপি প্রার্থীদের ‘ছাড়’ দিয়েছিলেন তিনি)। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছিল নীতীশের দল। পাঁচ বছর আগে নীতীশকে জেলে ঢোকানোর হুমকি দেওয়া চিরাগ এ বার ছট উৎসবে নীতীশের বাড়িতে গিয়ে পা-ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিয়েছেন। তাঁর দলও বিজেপি-জেডিইউর সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছে। চিরাগ প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, নীতীশকেই মুখ্যমন্ত্রী পদে সমর্থন করবেন তিনি। এ ছাড়া প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা মহাদলিত জনগোষ্ঠীর নেতা জিতনরাম মাঁঝীর ‘হাম’ (হিন্দুস্থানী আওয়াম মোর্চা), প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উপেন্দ্র কুশওয়াহার রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চা রয়েছে এই জোটে। বিজেপি নেতৃত্ব এই জোটকে ‘পঞ্চপাণ্ডব’ বললেও এখনও পর্যন্ত এনডিএ আনুষ্ঠানিক ভাবে নীতীশকে ‘মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করেনি।