দেশ অনেক এগিয়েছে, কিন্তু মৃত্যুর পর অঙ্গদান বা দেহদান নিয়ে এখনও সে ভাবে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি মানুষের মধ্যে। তবে এ বিষয়ে একেবারেই যে কেউ সচেতন নন, এমনটা বলা ভুল হবে। সমাজের কিছু অংশের মানুষের মধ্যে এই সচেতনতা এসেছে। সংখ্যার নিরিখে তা খুবই নগন্য।
তবে সম্প্রতি এমনই একটি গ্রামের কথা প্রকাশ্যে এসেছে যেখানে সকলেই অঙ্গদানে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন। এক জন বা দু’জন নয়, গোটা গ্রামের মানুষই মৃত্যুর পর অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তেলঙ্গানার হনুমানকোণ্ডার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম মুচরেলা। জনসংখ্যা ৫০০। সকলেই মৃত্যুর পর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করেছেন। এই অঙ্গীকারের সূচনা হয়েছিল গ্রামেরই এক ইঞ্জিনিয়ারের হাত ধরে।
আরও পড়ুন:
মণ্ডলা রবিন্দর। তিনি রাজ্য সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ার। এক সংবাদমাধ্যমকে রবিন্দর জানিয়েছেন, অঙ্গদানের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন তাঁর মাকে দিয়েই। মায়ের মৃত্যুর পর তাঁর চক্ষুদান করেন রবিন্দর। তাঁর কথায়, ‘‘দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি যে, মৃত্যুর পর অঙ্গদান করা উচিত। আমি নিজের অঙ্গদান করার অঙ্গীকার করেছি। ২০১৯ সালে বাবার মৃত্যুর পরেও তাঁর অঙ্গদান করেছি। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অন্যদের এই বিষয়ে উৎসাহ জুগিয়েছি। তাঁদের সচেতন করার কাজ চালিয়ে গিয়েছি। আর তারই সুফল পেলাম। গ্রামবাসীদের সকলেই এখন চক্ষুদানে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন।’’
রবিন্দর জানিয়েছেন, তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস মুচরেলা গ্রামই অঙ্গদানে আরও উৎসাহ জোগাবে। দেশের নানা প্রান্তে এই ঘটনা অঙ্গদান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করবে। তিনি নিজেও এ কাজ চালিয়ে যাবেন। রবিন্দর আরও জানান, প্রথমে গ্রামবাসীদের মধ্যে অঙ্গদানের বিষয় নিয়ে একটা কিন্তু-কিন্তু ভাব এবং সন্দেহ ছিল। সেই সন্দেহ কাটাতে এক দশকেরও বেশি সময় গিয়েছে। গত কয়েক বছরে অবশ্য ৭০ জন চক্ষুদানে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন। তবে যে ভাবে গোটা গ্রাম চক্ষুদানের অঙ্গীকার করেছে তা সত্যিই অভূতপূর্ব এবং অবিশ্বাস্য। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষের মধ্যে অঙ্গদান নিয়ে যে সচেতনতা বাড়ছে, আমাদের মুচরেলা গ্রামই তার এক দৃষ্টান্ত।’’
মুচরেলা গ্রামের দেখাদেখি এখন পড়শি গ্রামের লোকজনও অঙ্গদানের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হচ্ছেন। তাঁরাও এগিয়ে আসছেন। আর এ ভাবেই রাজ্য এবং দেশের অন্য প্রান্তেও এই সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে চান বলে জানিয়েছেন রবিন্দর। তবে মুচরেলা প্রথম নয়, গণহারে অঙ্গদানের পথ দেখিয়েছিল কেরলের একটি গ্রাম। ২০১৩ সালে আলাপ্পুঝার ভেলিয়াম্বর গ্রামের ৩০০ পরিবার অঙ্গদানের অঙ্গীকার করে।