প্রথম বার ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস (আইএফএস) অফিসার্স’ অ্যাসোসিয়েশনের নবগঠিত কার্যনির্বাহীদলে রাখা হল না এক জন পুরুষ আধিকারিককেও! ভারতের সিভিল সার্ভিসের ইতিহাসে এমন উদাহরণ আগে কখনও দেখা যায়নি। অ্যাসোসিয়েশনের শেষ বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের পর অ্যাসোসিয়েশনের বিভিন্ন পদের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে ছয় মহিলা আধিকারিককে— দেশের ৩৬টি সিভিল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে এই প্রথম বার!
সদ্যনির্বাচিত নির্বাহীদলে রয়েছেন পেট্রন জ্যোৎস্না সিটলিং, সভাপতি অনিতা কর্ণ, মহাসচিব মোনালিসা দাশ, যুগ্ম সচিব সুরভী রাই, কোষাধ্যক্ষ সুবীণা ঠাকুর এবং চেষ্টা সিংহ।
জ্যোৎস্না সিটলিং (১৯৮৭ ব্যাচ): পেট্রন
১৯৮৭ সালে প্রথম আদিবাসী মহিলা হিসাবে আইএফএসে যোগ দেন জ্যোৎস্না। তিনিই দেশের প্রথম জনজাতিভুক্ত মহিলা আইএফএস আধিকারিক। ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত নন্দাদেবী জাতীয় উদ্যানের ডিরেক্টর হিসাবে ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স থেকে ৪৪ টন বর্জ্য অপসারণে নেতৃত্ব দেন জ্যোৎস্না। প্রশাসনিক দক্ষতার জন্য পেয়েছেন জাতীয় স্তরের একাধিক পুরষ্কার। তাঁর নেতৃত্বে উত্তরাখণ্ডে জীবন ও জীবিকার উন্নতি, জলাশয় সংরক্ষণ এবং লিঙ্গসাম্যের প্রসার হয়েছে।
অনিতা কর্ণ (১৯৯৭ ব্যাচ, গুজরাত ক্যাডার): সভাপতি
১৯৯৭ সালে আইএফএসে যোগ দেন অনিতা। প্রথমেই তিনি গুজরাতের গির অভয়ারণ্যে ৫১ জন মহিলা বনরক্ষী এবং ৪৪ জন মহিলা বনকর্মী মোতায়েন করেন। বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় স্থানীয় মানবসম্পদকে কাজে লাগানো এবং মহিলাদের অন্তর্ভুক্তির এমন নজির এর আগে প্রায় বিরল। দীর্ঘ দিন কচ্ছের প্রধান বন সংরক্ষক হিসাবে কাজ করেছেন অনিতা। প্রশাসনিক উৎকর্ষতার জন্য স্বীকৃতিও পেয়েছেন।
মোনালিসা দাশ (২০০৩ ব্যাচ, সিকিম ক্যাডার): মহাসচিব
মোনালিসা সিকিমের ২০০৩ ব্যাচের আইএফএস অফিসার। বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তরের পর এমফিল করেছিলেন মোনালিসা। পড়েছেন আইন নিয়েও। কেন্দ্রের আয়ুষ মন্ত্রকের যুগ্মসচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন মোনালিসা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে থাকাকালীন সিএপিএফ এবং পুলিশ প্রশাসনের আধুনিকীকরণ, রাষ্ট্রপুঞ্জে শান্তিরক্ষা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
সুরভী রাই (২০০৫ ব্যাচ): যুগ্ম সচিব
সুরভী উত্তর-পূর্ব ভারত ক্যাডারের ২০০৫ ব্যাচের আইএফএস অফিসার। বর্তমানে তিনি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের ডিআইজি (বনবিভাগ) হিসেবে কর্মরত। ডিজি (বনবিভাগ)-এর বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন সুরভী।
সুবীণা ঠাকুর (২০১৪ ব্যাচ, হিমাচল প্রদেশ ক্যাডার): কোষাধ্যক্ষ
হিমাচল প্রদেশ ক্যাডারের ২০১৪ ব্যাচের আইএফএস অফিসার সুবীণা ঠাকুর। ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত নয়াদিল্লিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের সহকারী বন মহাপরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং মানব-বন্যপ্রাণী সংঘাত কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন সুবীণা। প্রশাসনিক দক্ষতার জন্য পরিচিতিও পেয়েছেন।
চেষ্টা সিংহ (২০১৮ ব্যাচ): সাহিত্য সম্পাদক
চেষ্টা ২০১৮ ব্যাচের আধিকারিক। কানপুর আইআইটি থেকে পড়াশোনা করেছেন। ২০১৮ সালে কোনও প্রশিক্ষণ ছাড়াই আইএফএসের মতো কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ‘কমলাং টাইগার রিজার্ভ- অ্যাট আ গ্লান্স’ নামে বইও লিখেছেন চেষ্টা। বর্তমানে আইএফএস অ্যাসোসিয়েশনের সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।