ইন্ডিয়া মঞ্চের উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী সুদর্শন রেড্ডিকে আজ মাওবাদের সমর্থক হিসেবে দাগিয়ে দিয়ে কিছুটা নজিরবিহীন ভাবেই আক্রমণ শানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘‘ওই সুদর্শনই সালওয়া জুড়ুম বন্ধ করেছেন। (ওই শিবির) বন্ধ না হলে অনেক আগেই দেশ থেকে মাওবাদ খতম হয়ে যেত।’’
এনডিএ প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সুর্দশন রেড্ডিকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন কংগ্রেস তথা ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ। আজ কেরলের কোচিতে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সুদর্শনকে কার্যত মাওবাদের সমর্থক হিসেবে প্রতিপন্ন করার কৌশল নেন শাহ বলেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দেখে মনে করছেন বিরোধীরা। যা কিছুটা নজিরবিহীন বলেই মত রাজনীতিকদের। বিশেষ করে শাসক শিবিরের প্রার্থীর জয় যখন নিশ্চিত, সেখানে অমিত শাহের বিরোধী প্রার্থীকে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণ করা দেখে দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। রাজনীতিকদের একাংশের মতে, শাসক শিবির নির্বাচনে ‘ক্রস ভোটিং’-এর আশঙ্কা করছেন। বিশেষ করে দক্ষিণের শরিক দলগুলি রেড্ডিকে সমর্থন করতে পারে বলে আশঙ্কায় ভুগছেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই ভয় থেকেই রেড্ডিকে মাওবাদীদের সমর্থক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয় বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রায় দেড় দশক আগে, ২০১১ সালে একটি রায়ে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি সুদর্শন রেড্ডি ও বিচারপতি এস এস নির্জর ছত্তীসগঢ়ের বেঞ্চ সালওয়া জুড়ুম কেন্দ্রগুলি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই শিবিরগুলিতে স্থানীয় জনজাতি যুবকদের স্পেশাল পুলিশ অফিসার হিসেবে নিয়োগ করে মাওবাদী দমনে ব্যবহার করছিল ছত্তীসগঢ় পুলিশ। সে সময়ে সালওয়া জুড়ুম কেন্দ্রগুলির বিরুদ্ধে মাওবাদী দমনের নামে জনজাতিদের অত্যাচার করা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের একাধিক অভিযোগ সামনে আসে। যে কারণে ওই দুই বিচারপতি সে সময়ে ওই শিবিরগুলি বন্ধ করার নির্দেশ দেন। ওই সিদ্ধান্ত নিয়েই আজ প্রশ্ন তুলেছেন শাহ। তাঁর কথায়, ‘‘মাওবাদীদের সমর্থনেই রেড্ডি ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।’’ তাঁর দাবি, সে সময়ে ওই সিদ্ধান্ত না নিলে ২০২০ সালের মধ্যে দেশে থেকে মাওবাদীরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। শাহ বলেন, ‘‘কেরল মাওবাদ ও চরমপন্থার দংশন সহ্য করেছে। কেরলের লোকেরা দেখতে পাচ্ছেন কী ভাবে বামপন্থীদের চাপে কংগ্রেস এক জন এমন ব্যক্তিকে উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছেন, যিনি মাওবাদকে সমর্থন করার প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের মঞ্চকে ব্যবহার করেছিলেন।’’
অন্য দিকে, এনডিএ শিবিরের প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণন আজ অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা এনডিএ-র শরিক দল টিডিপি নেতা চন্দ্রবাবু নায়ডুর সঙ্গে দেখা করেন। নায়ডু আশ্বাস দিয়ে জানান, তাঁর দল ভোটাভুটিতে রাধাকৃষ্ণনকেই সমর্থন করবে। আজ বিজেপির জাতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা এবং উত্তরাখণ্ডের সব বিজেপি সাংসদের সঙ্গেও দেখা করেন রাধাকৃষ্ণন।
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা রাজ্যসভার সচিবালয় সূত্রে আজ জানানো হয়েছে, গত কাল পর্যন্ত ৪৬ জন প্রার্থীর ৬৮টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। যেগুলি খতিয়ে দেখে দু’টি বাদে বাকি সব ক’টি আবেদন বাতিল করা হয়েছে। যে দু’জন বৈধ প্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে তাঁরা হলেন, সিপি রাধাকৃষ্ণন (এনডিএ) এবং বি সুদর্শন রেড্ডি (ইন্ডিয়া)। জয় পরাজয় নির্ণয় হবে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর। ভোটাভুটির ফল জানা যাবে সেদিন রাতেই।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)