সেনার আত্মহত্যা নিয়ে মুখ খুলে রাহুল গাঁধীর সমালোচনা করলেন। নিশানায় নিলেন অখিলেশ-মায়াবতীকেও। পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশে বিজেপির রথযাত্রার শুরুর দিনেই মেরুকরণের রাজনীতির মহড়াটি সেরে ফেললেন নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।
আজ পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের সহারনপুরে প্রথম রথযাত্রা শুরু করার কথা ছিল বেলা একটায়। কিন্তু লখনউয়ের সভায় মুলায়ম সিংহ যাদব তখন জনতা পরিবারকে একজোট করে বিজেপির মতো ‘সাম্প্রদায়িক’ দলকে উত্তরপ্রদেশে ঠেকানোর কথা বলছেন। মুলায়মের বক্তব্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রায় ছ’শো কিলোমিটার দূরের সহারনপুরে অমিত শাহ মঞ্চে আসেননি। দুপুর তিনটের পরে মঞ্চে এসেই আক্রমণ শুরু করেন বিজেপি সভাপতি। তিন তালাক প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘কেউ কেউ এর বিরোধিতা এমন ভাবে করছেন যেন তাঁদের কারও ঠাকুমা মারা গিয়েছেন। সংখ্যালঘু মহিলাদের সম্মান রক্ষায় ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি আসছে কেন?’’
সমাজবাদী পার্টির নেতা মুখতার আনসারি, আতিক আহমেদ, আজম খানকে ‘গুন্ডা’-ও বলেন তিনি। অমিতের বক্তব্য, ‘‘অখিলেশ নিজেকে বিকাশপুরুষ হিসেবে তুলে ধরছেন। অথচ এই গুন্ডারা তাঁর দলে রয়েছে। এমনকী বহেনজির দলেও নাসিমুদ্দিন সিদ্দিকি রয়েছে। আমাদের দলে কোনও গুন্ডা নেই।’’
গোড়া থেকে মায়াবতীর মতো বিরোধী নেত্রী বলে আসছেন, লোকসভা নির্বাচনের সময় বিজেপি ও সমাজবাদী পার্টি ম্যাচ গড়াপেটা করে মেরুকরণের ফায়দা তুলেছে। আজও তিনি লখনউতে সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন, মুজফ্ফরনগরে গোষ্ঠী সংঘর্ষও এই দুই দল করেছে। মায়াবতী সংখ্যালঘুদের কাছে আবেদন জানান, কোনও ভাবেই তাঁরা যেন কোনও ‘তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ’ দলকে ভোট দিয়ে তা নষ্ট না করেন।
বিজেপির শীর্ষ সূত্রের খবর, লোকসভা নির্বাচনে ৮০টির মধ্যে ৭৩টি আসন পাওয়ার পিছনে এই মেরুকরণের রাজনীতিই অনেকটা ফল দিয়েছে। এ বারও লোকসভা ভোটের মতোই কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগের মতোই উন্নয়নের কথা বলবেন। সেনা অভিযান নিয়ে জাতীয়তাবাদের আবেগ টানার চেষ্টাও করবেন তিনি। অন্য দিকে জাতপাতের সমীকরণকে মাথায় রেখে ভোট টানতে রাজনাথ সিংহের মতো ঠাকুর, কলরাজ মিশ্রের মতো ব্রাহ্মণ, কেশবপ্রসাদ মৌর্যের মতো ওবিসি, উমা ভারতীর মতো লোধ সম্প্রদায়ের মুখকে সামনে রেখে প্রচার হবে। আবার হিন্দু ভোটকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে মেরুকরণকেও উস্কে দিতে হবে। রামায়ণ সংগ্রহশালা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে তার সূত্রপাত ইতিমধ্যেই করা হয়েছে। আজ তাতে আরও উস্কানি দিলেন অমিত।
রাজনীতিকদের মতে, মেরুকরণের কথা মাথায় রেখেই অমিত শাহ এ বারও প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে সমাজবাদী পার্টিকে চিহ্নিত করেছিলেন। কিন্তু সমাজবাদী পরিবারের কোন্দলে সেই অঙ্ক অনেকটাই নড়বড়ে। মুলায়ম-অখিলেশও জানেন, পরিবারের কোন্দলের জেরে সংখ্যালঘু ভোট যাবে মায়াবতীর দিকে। তাই আজ অখিলেশও বার বার বিজেপিকে আক্রমণ করেন। আবার অমিত শাহের নিশানায় ছিলেন অখিলেশ। বিজেপির এক নেতা জানান, এখনও উমা ভারতীর মতো ‘অগ্নিকন্যা’ বিজেপির ঝুলিতে আছেন। উত্তরপ্রদেশের আরও তিনটি যাত্রা বাকি। তখন তাঁকে নামানো হবে।
সম্প্রতি এক প্রাক্তন সেনার আত্মহত্যা নিয়ে রাহুল গাঁধী যে ভাবে আসরে নেমেছেন, তাতে জাতীয়তাবাদের আবেগ টানার চেষ্টা ধাক্কা খেয়েছে। তাই আজ রাহুলকেও নিশানা করলেন অমিত শাহ। তিনি বললেন, ‘‘সেনা অভিযান করেছে, আর রাহুল গাঁধী রক্তের দালালি বলছেন। ভাইয়া রাহুল, এটা সনিয়া-মনমোহনের সরকার নয়। নরেন্দ্র মোদীর সরকারে ইটের জবাব পাথরে, গুলির জবাব গোলায় হবে।’’