Advertisement
E-Paper

অমিতকে দেখেই মুখ ভার আডবাণীর

কোথাও গম্ভীর মেজাজ। কোথাও হাল্কা ঠাট্টা। প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে রাজপথ অজান্তেই সাক্ষী হয়ে রইল এমন অনেক টুকরো ঘটনার। সদ্য দু’দিন আগে বিজেপির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন অমিত শাহ। সভাপতি হওয়ার পরে কাল হাওড়ায় প্রথম জনসভায় তোপ দেগে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:৪২
Pic -প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে আডবাণী ও অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই

Pic -প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে আডবাণী ও অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই

কোথাও গম্ভীর মেজাজ। কোথাও হাল্কা ঠাট্টা।

প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে রাজপথ অজান্তেই সাক্ষী হয়ে রইল এমন অনেক টুকরো ঘটনার।

সদ্য দু’দিন আগে বিজেপির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন অমিত শাহ। সভাপতি হওয়ার পরে কাল হাওড়ায় প্রথম জনসভায় তোপ দেগে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আর আজ সকাল দশটায় প্যারেড শুরুর পাক্কা এক ঘণ্টা আগে সস্ত্রীক পৌঁছে গিয়েছিলেন রাজপথে। সঙ্গে ছেলে ও পুত্রবধূ। প্যারেড শুরুর আধ ঘণ্টা আগে কন্যা প্রতিভাকে নিয়ে পৌঁছলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। ঘটনাচক্রে আডবাণীকে বসতে বলা হল অমিত শাহের পাশে। এক সময়ে এই অমিত শাহের সভাপতিত্ব আটকাতেই সক্রিয় হয়েছিলেন বিজেপির এই প্রবীণ নেতা। এ বারও যাননি সভাপতি নির্বাচনের দিনে। রাতে আডবাণীর বাড়িতে অমিত শাহ আশীর্বাদ নিতে গেলেও উভয়ের সম্পর্কের বরফ যে বিন্দুমাত্র গলেনি, রাজপথ আজ তা চাক্ষুষ করল।

নিয়মমাফিক সৌজন্য বিনিময়ে উঠে দাঁড়ালেন অমিত শাহ। আডবাণী তাঁর স্ত্রীর নামটিও জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু টানা দেড় ঘণ্টা অমিত শাহের পাশে বসে প্যারেড দেখতে তিনি যে খুব একটা আগ্রহী নন, আডবাণীর শরীরী ভাষায় তা ছিল স্পষ্ট। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা কর্মীদের অনুরোধে বসতে রাজি হলেন ঠিকই, কিন্তু অমিত শাহের পাশে বসালেন নিজের মেয়ে প্রতিভাকে। পরের দেড় ঘণ্টায় আর কোনও বাক্য বিনিময় হয়নি।

অমিত শাহ-আডবাণীর যখন এই চোরাযুদ্ধ চলছে, রাজপথে তখন আর এক দ্বন্দ্বের ছবি দেখার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন সবাই। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল আর উপরাজ্যপাল নজিব জঙ্গের আসনও ছিল পাশাপাশি! কেজরীবাল যথারীতি মাফলারে মুখ ঢেকে শীতের সকালে স্ত্রী সুনীতাকে নিয়ে একটু আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন। নজিব জঙ্গ স্ত্রীকে নিয়ে পৌঁছন একটু পরে।

কিন্তু এ কি উলট পুরাণ! হাসি-ঠাট্টায় নজিব-কেজরী যে ভাবে মেতে উঠলেন, দেখে কে বলবে এঁরা উদয়াস্ত ঝগড়া করেন! শুধু কি তাই! উভয়ের স্ত্রীরাও দেখা হতেই মজে গেলেন খোশ গল্পে। নজিব জঙ্গই তখন প্রস্তাব দিলেন দু’জনের স্ত্রী পাশাপাশি বসুক। এই বলে কেজরীবালকে নিজের পাশে টেনে বসালেন দিল্লির উপরাজ্যপাল। কেজরীবালের আর এক প্রতিপক্ষ অবশ্য প্রথম সারিতে বসেছিলেন। কিন্তু তাঁরা মুখোমুখি হননি। বিকেলে রাষ্ট্রপতি ভবনে নিয়মমাফিক সৌজন্য বিনিময় ছাড়া অরুণ জেটলি-অরবিন্দ কেজরীবালের কোনও কথা হয়নি।

তবে প্রজাতন্ত্র দিবস তো উৎসব। সব মিলিয়ে রাজপথ মিলন মেলা। বাবুল সুপ্রিয়, অনুরাগ ঠাকুর, রাজ্যবর্ধন রাঠৌররা আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে ব্যস্ত ছিলেন নিজস্বী তুলতে। আর ধর্মেন্দ্র প্রধান, রাজীবপ্রতাপ রুডির স্ত্রীরা যেন একটা ছোটখাটো কিটি পার্টিই সেরে ফেললেন। মাঝে একটি বাচ্চা হারিয়ে যাওয়ায় তাঁকে পেয়ে রুডি কোলে তুলে ঘুরে বেড়ালেন বক্সের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। ফেরতও দিলেন মায়ের কোলে। রাষ্ট্রপতি ভবনে পাশে বসা সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষণ একান্ত আলোচনা সেরে ফেললেন অরুণ জেটলিও। পণ্য পরিষেবা কর বিল নিয়ে কথা হল কি?

গত বার অবশ্য সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। ছাতা মাথায় দিয়ে প্যারেড দেখেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এ বারে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদকে সে সমস্যায় ভুগতে হয়নি। আজ মেঘ-রোদ্দুরের খেলা চললেও, বৃষ্টি হয়নি। কুয়াশা ফুঁড়ে বায়ুসেনার লড়াকু বিমান তাক লাগিয়ে দিয়েছে। দীর্ঘ ২৬ বছর পরে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর পেশাদারদের মতো পা মিলিয়ে সব চেয়ে হাততালি কুড়িয়েছে। আর ইতিহাসে এই প্রথম বার ১২৩ জন ফরাসি সেনার প্যারেডে উপস্থিতি তো বাড়তি পাওনা। বাংলার বাউল থেকে কর্নাটকের কফি, ত্রিপুরার নাচ থেকে প্রাক্তন সেনানীদের স্যালুট—নজরকাড়া ছিল অনেক কিছুই।

তবে রাজপথে জনপ্রিয়তার পারদ চড়েছে এক জনকে ঘিরেই। সোনালি পাগড়ি পরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্যারেড শুরুর আগেই ভিআইপি বক্সে এসে লালকৃষ্ণ আডবাণীদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করে যান। পরে যখনই হাত তুলেছেন, রাজপথের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত ভেসে গিয়েছে মোদী-ধ্বনিতেই। এ বারও নিয়ম ভেঙে প্যারেড শেষে সটান হাঁটতে শুরু করেন রাজপথে। পৌঁছে যান জনতার কাছে। বিকেলে একই দৃশ্য ধরা পড়ে রাষ্ট্রপতি ভবনেও।

শেষমেশ দিনটি ভালয় ভালয় কাটায় হাঁফ ছেড়েছেন নিরাপত্তাকর্মীরা।

amit shah bjp president
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy