নরেন্দ্র মোদীর প্রধান সেনাপতি অমিত শাহ-ই সম্ভবত বিজেপির পরবর্তী সভাপতি হতে চলেছেন। আগামিকাল সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক ডেকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করতে পারেন বিজেপি-র বিদায়ী সভাপতি রাজনাথ সিংহ।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার আগেই সঙ্ঘ নেতৃত্বকে মোদী জানিয়ে দিয়েছিলেন, রাজনাথ সিংহের উত্তরসূরি হিসেবে তিনি অমিতকেই চাইছেন। তার পিছনে একটি বড় কারণ হল, উত্তরপ্রদেশে লোকসভা ভোটে তাঁর নেতৃত্বে বিজেপির সত্তরটিরও বেশি আসনে জয়। তা ছাড়া সামনেই মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন। ২০১৬-তে পশ্চিমবঙ্গেও বিধানসভা নির্বাচন। সব জায়গাতেই ভাল ফলের জন্য অমিত শাহের সাংগঠনিক ক্ষমতার উপরে নির্ভর করছে দল। তবে গুজরাতের এই নেতাকে সভাপতি করার ব্যাপারে দল ও সঙ্ঘের একাংশের আপত্তি ছিল। কিন্তু মধ্যপ্রদেশে আরএসএসের সদ্য সমাপ্ত বৈঠকে এ ব্যাপারে সব আপত্তি খারিজ হয়ে গিয়েছে। তবে অমিতের টিমে যাতে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব থাকে, সে জন্য সঙ্ঘ নেতৃত্ব চান, আরএসএসের কয়েক জন যেন বিজেপিতে যোগ দেন।
অমিত শাহকে বিজেপি সভাপতি হিসেবে তুলে ধরার ব্যাপারে সঙ্ঘের একাংশের আশঙ্কা মূলত চারটি। এক, মোদীর মতোই অমিত-ও গুজরাতের নেতা। ফলে দলের অন্য অংশের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হতে পারে। দুই, সরকারের পাশাপাশি দলের রাশও মোদীরই হাতে থাকবে। মোদীকে নিয়ে এমনিতেই সঙ্ঘের একাংশের সমস্যা রয়েছে। জনপ্রিয়তার ঢেউয়ে ভেসে তিনি প্রধানমন্ত্রী হলেও সংগঠনের রাশ তাঁর হাতে দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত হবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে সঙ্ঘের অন্দরে। তিন, মধ্যপ্রদেশের বৈঠকেই অনেকে প্রশ্ন তোলেন, অমিত উত্তরপ্রদেশের মতো সাফল্য অন্য রাজ্যেও পাবেন, তার নিশ্চয়তা কোথায়? সে কারণে দলের সাধারণ সম্পাদক জগৎ প্রকাশ নাড্ডার নাম বিবেচনার কথাও বলেন অনেকে। চার, অমিতের বিরুদ্ধে বহু মামলা রয়েছে, যার অনেকগুলিই দলের কাছে অস্বস্তির কারণ হতে পারে।
বিজেপি সূত্রের মতে, অমিতকে নিয়ে যাবতীয় আশঙ্কা খারিজ করতে আসরে নামেন স্বয়ং মোদী। সঙ্ঘ নেতৃত্বকে তিনি বোঝান, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁকেও নানা মিথ্যা মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে। অমিত বরং সংযত থেকে নিজের নেতৃত্বই প্রতিষ্ঠা করেছেন। দল তাঁকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, তাতে সফল হয়েছেন। বিজেপির এক শীর্ষ সূত্রের মতে, অমিত শাহের পথের কাঁটা এক এক করে সরাতে সক্রিয় ছিলেন মোদী। ইউপিএ জমানায় যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছিলেন, তাঁদের কোনও না কোনও ভাবে বিপাকে ফেলা হয়েছে। তার সাম্প্রতিক শিকার গোপাল সুব্রহ্মণ্যম, অশ্বিনী কুমাররা।
দলের একটি অংশ চাইছিল, সংসদের বাজেট অধিবেশনের পরেই অমিতের নাম ঘোষণা করতে। কিন্তু মোদী তাতে রাজি হলেন না কেন?
বিজেপি সূত্রের মতে, রাজনাথ নিজে তড়িঘড়ি সভাপতি পদ ছাড়তে রাজি ছিলেন না। তিনি চাইছিলেন, সংসদ অধিবেশন শেষ হলে এই ঘোষণা করতে। কিন্তু মোদী মনে করেন, সংসদের অধিবেশন শেষ হতে অগস্ট হয়ে যাবে। তার পর এক মাসের মাথায় কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। ফলে নতুন সভাপতির হাতে সময় থাকবে না। তার উপর দলের অনেকের আপত্তি এখনও বহাল। মোদী চাইছিলেন, এ সব নিয়ে নতুন কোনও সমস্যা হওয়ার আগে অমিতের ব্যাপারে ঘোষণা হয়ে যাক। আপাতত স্থির হয়েছে, আগামিকাল সংসদীয় বোর্ডে অমিত শাহের নাম ঘোষণা করবেন রাজনাথ। তার পর বিজেপির সদর দফতরে সভাপতির ঘরে তাঁকে নিয়ে যাবেন। সভাপতি পদে তাঁর মনোনয়ন প্রসঙ্গে অমিত বলেন, “যা হবে, আগামিকালই হবে। আমি এটুকু বলতে পারি, আত্মবিশ্বাসই উন্নয়নের প্রথম সিঁড়ি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy