তিনি রাবণ। দশমীর দিনে মৃত্যু তাঁর ললাটলিখন। সেই ভবিতব্য অভিনেতা রাবণকেও গ্রাস করবে! ভাবতে পারেননি কেউ।
প্রতি বারের মতো এ বারও রাবণ সেজেছিলেন স্থানীয় কৃষ্ণনগর এলাকার বাসিন্দা দলবীর সিংহ। এক দশক ধরে দশানন সেজে আসছিলেন ধোবি ঘাট এলাকার রামলীলায়। দশাননের মারকাটারি অভিনয় দেখে দশমীর দিন তাঁকে পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন উদ্যোক্তরা। সেটাই যে কাল হবে, তা কে জানত বলে আক্ষেপ করছেন মা স্বর্ণকুমারী দেবী। লাইনের পাশে রামলীলার ভাঙা মঞ্চের সামনে নাগাড়ে কেঁদে যাচ্ছেন তিনি। আক্ষেপ, “পুরস্কার নিতে গিয়েছিল। লাইনে বসে রাবণ পোড়ানো দেখতে গিয়ে দশেরাতেই চলে গেল দলবীর!”
স্ত্রী নভকুমার ঘন ঘন জ্ঞান হারাচ্ছেন কাল থেকে। মাঝে মধ্যেই বাবাকে খুঁজছে দলবীরের দশ মাসের মেয়ে। দাদা জানাচ্ছেন, দুই ভাই সারা বছর মজদুরি করি। দশেরার সময়ে ভাই রামলীলায় পাঠ করে বাড়তি কিছু আয় করত। বাড়ির অন্যতম ছেলে চলে যাওয়ার পরেও উঠোনে পা পড়েনি কোনও নেতা-মন্ত্রীর। পুত্রবধূর জন্য একটি চাকরির আর্জি নিয়ে জনে জনে কাকুতি-মিনতি করছেন সদ্য সন্তানহারা মা।
অমৃতসরে জোড়া ফটকের কাছে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত ও আহতদের অধিকাংশই বিহার ও উত্তরপ্রদেশের। কৃষ্ণনগর এলাকাতেই এদের বাস। প্রধান জীবিকা মজদুরি। ভোটের আগে ওই সব রাজ্যে পাশে থাকার বার্তা দিতে সক্রিয় অমরেন্দ্র সিংহের সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি চাইলে মৃত ব্যক্তির দেহ সরকারি উদ্যোগে তাদের গ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেবে পঞ্জাব সরকার। আহত ও মৃতদের তালিকার মধ্যেই পরিচয় জানা যাচ্ছে না অন্তত জনা পনেরো ব্যক্তির। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন কিছু দেহ এমন ভাবে তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে যে, তাঁদের চিহ্নিত করার মতো কিছু নেই। এই পরিস্থিতিতে ওই মৃতদেহের আঙুলের ছাপ নিয়ে আধার কার্ডের তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে পরিচয় খোঁজার কাজ শুরু করেছে প্রশাসন।