পুলিশের সন্দেহ ছিলই। একটি ভিডিয়ো ফুটেজ দেখে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। এ বার ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে পেয়ে পুলিশ নিশ্চিত করল, যে অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুলে বাস দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাইকের চালক এবং সওয়ারি মত্ত অবস্থায় ছিলেন। ওই দুর্ঘটনাতেই বাসে আগুন লেগে প্রাণ হারান ১৯ জন যাত্রী।
২৪ অক্টোবর ভোরে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটি একটি বাইকে ধাক্কা মারে। তার জেরেই বিপত্তি ঘটে। ওই বাইকে সওয়ার দু’জন মত্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন কুর্নুল পুলিশের ডিআইজি কোয়া প্রবীণ। তারা তদন্তে নেমে দেখেছে, ওই বাইকটি ওই রাতেই আরও এক বার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। কুর্নুল জেলার চিন্না টেকুরু গ্রামে দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিল সেটি। পুলিশের অনুমান, চালক মত্ত থাকায় ঘটেছিল দুর্ঘটনা।
কুর্নুল পুলিশের ডিআইজি জানিয়েছেন, ২৩ অক্টোবর রাতে একটি ধাবায় পানাহার করেন বাইকে সওয়ার স্বামী এবং শঙ্কর। স্বামী এখন পুলিশের হেফাজতে। জেরায় তিনি এই বিষয়টি জানিয়েছেন পুলিশকে। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৪ অক্টোবর রাত ২টোর সময় লক্ষ্মীপুরম গ্রাম থেকে কুর্নুলের উদ্দেশে বাইকে চেপে রওনা হন স্বামী এবং শঙ্কর। স্বামীকে সেই গ্রামে ছেড়ে আসার কথা ছিল শঙ্করের। কুর্নুল পুলিশ সুপার বিক্রান্ত পাটিল জানিয়েছেন, রাত ২টো ২৪ মিনিট নাগাদ একটি পেট্রল পাম্পে জ্বালানি নিতে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। সিসি ক্যামেরায় তা ধরা পড়েছে। ফুটেজে দেখা গিয়েছে, বেসামাল ভাবে বাইক চালাচ্ছিলেন শঙ্কর। তা দেখেই পুলিশের প্রথমে অনুমান হয়, যে তাঁরা মত্ত ছিলেন।
গত কয়েক দিন ধরেই কুর্নুল-সহ গোটা অন্ধ্রে বৃষ্টি চলছে। তার জেরে রাস্তা পিছল ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, পেট্রল পাম্প থেকে বার হওয়ার কিছু ক্ষণ পরেই বাইকটি পিছলে যায়। ফলে তা থেকে পড়ে যান শঙ্কর এবং স্বামী। রাস্তার পাশে ডিভাইডারে ধাক্কা লাগে শঙ্করের। স্বামী তাঁকে টেনে রাস্তার পাশে নিয়ে যান। পুলিশ মনে করছে, ওই ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শঙ্করের। এর পরে স্বামী বাইকটি মাঝরাস্তা থেকে সরানোর আর সুযোগ পাননি। তার আগেই তাতে ধাক্কা দেন বাসের চালক।
অন্ধকার এবং বৃষ্টির কারণে বাইকটি যে রাস্তার মাঝে পড়ে রয়েছে, তা দেখতে পাননি বাসের চালক। বাসটি বাইকে ধাক্কা দেওয়ার পরে ওই অবস্থাতেই ২০০ মিটার যানটিকে টেনে নিয়ে যায়। রাস্তার সঙ্গে বাইকের ঘর্ষণে স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয়। বাইকের ট্যাঙ্ক থেকে পেট্রল লিক করছিল। ঘর্ষণে সৃষ্ট স্ফুলিঙ্গ ওই জ্বালানির সংস্পর্শে আসতেই বাসে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আর তার পরই বাসে বিস্ফোরণ হয়। পুরো বাস আগুনের গ্রাসে চলে যায়। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় যাত্রীদের।