Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যান’! ইদ এলেও স্বস্তি এল না উপত্যকায়

মুহূর্তে ভিড় উধাও। সশব্দে শাটার বন্ধ দোকানের। বাড়ি ফেরার তাড়ার মধ্যেই পুলিশের দিকে গালিগালাজ বর্ষণ করে চললেন মানুষ।

দুই চিত্র: নিরাপত্তা বাহিনী এবং প্রশাসনের উদ্যোগে ফোনে আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলছেন স্থানীয়রা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে ছবিটি টুইট করা হয়। পাশাপাশি চলছে প্রতিবাদও। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন স্থানীয় মহিলারা (ডান দিকে)। রবিবার শ্রীনগরে। ছবি: পিটিআই ও রয়টার্স।

দুই চিত্র: নিরাপত্তা বাহিনী এবং প্রশাসনের উদ্যোগে ফোনে আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলছেন স্থানীয়রা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে ছবিটি টুইট করা হয়। পাশাপাশি চলছে প্রতিবাদও। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন স্থানীয় মহিলারা (ডান দিকে)। রবিবার শ্রীনগরে। ছবি: পিটিআই ও রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
শ্রীনগর ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০৩:০০
Share: Save:

আজ, সোমবার ইদ। তার তোড়জোড়ে বেরিয়েছিলেন শ্রীনগরের পুরনো শহর এলাকার মানুষজন। শনিবার কিছু দোকান খুলেছিল। রবিবার সকালেও তারা ঝাঁপ খুলতেই ভিড়। টাকা তুলতে কয়েকটা এটিএম-ই ভরসা, কারণ অধিকাংশই ফাঁকা। লম্বা লাইন গ্যাস ও কাঠের দোকানে। বাজারে কোরবানির ভেড়া-ছাগল কিছু এলেও কেনার লোক কই! সকাল দশটা বাজতেই হঠাৎ ঘোরাঘুরি শুরু হল পুলিশ ভ্যানের। তা থেকে হাত-মাইকে ঘোষণা, ‘‘এখনই সবাই বাড়ি ফিরে যান। ফের কার্ফু শুরু হচ্ছে।’’

মুহূর্তে ভিড় উধাও। সশব্দে শাটার বন্ধ দোকানের। বাড়ি ফেরার তাড়ার মধ্যেই পুলিশের দিকে গালিগালাজ বর্ষণ করে চললেন মানুষ।

জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রতি‌শ্রুতি দিয়েছিলেন, উপত্যকার মানুষ যাতে ইদ উৎসব পালন করতে পারেন, সরকার তার বন্দোবস্ত করবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ দিনও বলেছেন, আপাতত কেন্দ্রীয় শাসনে আনাটা কাশ্মীরের জন্য ভালই হবে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পরে উপত্যকার সাধারণ মানুষের কাছেও পৌঁছে যাবে উন্নয়ন। শিল্প হবে, উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি হয়ে পর্যটন বাড়বে। আজ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে লম্বা ফিরিস্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, কাশ্মীরের মানুষ যাতে স্বস্তিতে ইদ পালন করতে পারেন তার জন্য কী কী ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছুটির দিনেও ব্যাঙ্ক খুলে রাখা হয়েছে। ৩,৬৯৭টি রেশন দোকানের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিলি হচ্ছে। ছ’টি ‘সব্জিমন্ডি’ বা পাইকারি বাজারে পর্যাপ্ত কাঁচা আনাজ পাঠানো হয়েছে। আড়াই লক্ষ ভেড়া গিয়েছে, মানুষ যাতে কোরবানির জন্য তা কিনতে পারেন। ইদগা-র ময়দানও তৈরি। উপত্যকার বাইরে থাকা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ক’দিন চলা নম্বরের সঙ্গে আরও কিছু ‘মদদগার’ (হেল্পলাইন) নম্বর যোগ করা হয়েছে।

কিন্তু উপত্যকা এ দিনও কাটিয়েছে মোবাইল সংযোগ ছাড়া। ইন্টারনেটও নেই টানা ছ’দিন। সংবাদ মাধ্যমের উপরে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা বহাল। দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে কোথায় আটক করে রাখা হয়েছে, খবর নেই। পাইকারি ও খুচরো বাজারে পণ্য বাড়ন্ত। এমনকি ওষুধও।

ইদ-উল-আজহার আগের দিনে শ্রীনগরের পশু বাজারে বেশ কিছু ভেড়া এসেছে বটে, কিন্তু কেনার লোক নেই। ছুটির দিনেও খোলা ব্যাঙ্ক থেকে শুকনো মুখে বেরিয়ে এলেন হাবাকের বাসিন্দা আব্দুল গফ্ফর। বললেন, ‘‘পকেটে একটা টাকাও নেই। ইদে ছেলেমেয়েদের নতুন জামাকাপড় কিনে দিতে হয়। কিন্তু আমার এখন চিন্তা— খাব কী!’’

সকাল ১০টায় ব্যাঙ্ক খোলার কথা থাকলেও খুলেছে ১১টার পরে। শ’খানেক লোক টাকা তোলার লাইনে। এক কর্মী জানালেন— মানুষ খেপে রয়েছেন, অথচ সিন্দুক ফাঁকা! এটিএম-এ পাঠানোর টাকাও আসেনি।

পুরনো শ্রীনগরের বাসিন্দা খুরশিদ আলম শাহ বাজারে এসেছিলেন কিছু জমানো টাকা নিয়ে। সঙ্গের বড় ব্যাগের কোনাটাও ভরেনি। মুদিখানার দোকানে চাল-ডাল শেষ। বাজার ঢুঁড়ে পেয়েছেন কিছু শুকনো আনাজ। আর জেনে ফিরেছেন, কাল সকালে ইদের নমাজটা মসজিদে এসে পড়া যাবে।

কার্ফুর কারণে পুরসভার কর্মীরা কাজে আসতে পারেননি। শনিবার থেকে জঞ্জাল সাফাই বন্ধ। হাসপাতাল আর বাজারের পাশের ভ্যাট উপচে পূতিগন্ধ। পশুর হাটের অবস্থা সব চেয়ে খারাপ। কোরবানির পরে শহরের হাল আরও খারাপ হতে পারে, এমন আশঙ্কাও করছেন অনেকে।

এ সবের মধ্যেই রবিবার রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক কাশ্মীরবাসীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলেছেন, এই ইদ কাশ্মীরে সুদিন আনবে। সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়াবে।

উপত্যকার রাস্তার প্রতি মোড়ে, সেতুর ওপরে তখন মোতায়েন হচ্ছে কার্বাইন হাতে সেনা-জওয়ান। নতুন করে পড়েছে কাঁটাতার। এ প্রস্তুতি ইদের জমায়েতের পরে সম্ভাব্য বিক্ষোভ দমনের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Eid Jammu and Kashmir Article 370
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE