Advertisement
E-Paper

জেটলির গলায় জয়ের সুর, তবু ধন্দ দলেই

জাতীয়তাবাদ নিয়ে বিতর্কের প্রথম রাউন্ডে তাঁদেরই জয় হয়েছে বলে দাবি করলেন অরুণ জেটলি। আজ রাজধানীতে দিল্লি বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে জেটলি যুক্তি দিয়েছেন, যারা এত দিন ভারত-বিরোধী স্লোগান দিয়েছিল, তাদের ‘ভারত মাতা কি জয়’ না হলেও অন্তত ‘জয় হিন্দ’ বলতে বাধ্য করেছে বিজেপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৬ ০২:৪৯

জাতীয়তাবাদ নিয়ে বিতর্কের প্রথম রাউন্ডে তাঁদেরই জয় হয়েছে বলে দাবি করলেন অরুণ জেটলি। আজ রাজধানীতে দিল্লি বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে জেটলি যুক্তি দিয়েছেন, যারা এত দিন ভারত-বিরোধী স্লোগান দিয়েছিল, তাদের ‘ভারত মাতা কি জয়’ না হলেও অন্তত ‘জয় হিন্দ’ বলতে বাধ্য করেছে বিজেপি।

তবে জেটলি যতোই জোর দিয়ে জয়ের কথা বলুন না কেন, দলের অনেক নেতা ও নবীন সাংসদ কিন্তু এ নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ে। তাঁদের আশঙ্কা, এ ভাবে উগ্র জাতীয়তাবাদের পথে হাঁটতে গিয়েই মোদী সরকারের উন্নয়নের কর্মসূচি ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে।

এই সপ্তাহের গোড়ায় বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে গৃহীত রাজনৈতিক প্রস্তাবে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, বাক্‌স্বাধীনতার যুক্তিতে দেশবিরোধী, জাতি-বিরোধী বক্তব্যকে কোনও ভাবে রেয়াত করা হবে না। ঠিক তার পরের দিন একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে উন্নয়নের মন্ত্র জপ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। আজ আবার রাজ্য বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে ফের সেই জাতীয়তাবাদের অস্ত্রে শান দিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। দলীয় নেতৃত্বের মতে, এটা আসলে বিজেপির দ্বৈত রণকৌশল। এক দিকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে, বাক-স্বাধীনতার নামে দেশ-বিরোধিতা বরদাস্ত করবে না দল। আবার একই সঙ্গে উন্নয়নের স্লোগান হাতিয়ার হবে প্রধানমন্ত্রীর।

বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এ থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লাভের অঙ্ক কষলেও তরুণ নেতারা কিন্তু সেই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, মোদী সরকার সঙ্কীর্ণতাবাদী বলে ধারণা তৈরি হচ্ছে জনমানসে। উগ্র হিন্দুত্বের তাস খেলতে গিয়েই নেতা হিসেবে জন্ম হয়েছে নতুন কানহাইয়ার। যিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতেও দ্বিতীয় বার ভাবছেন না।

প্রথম রাউন্ডে জয়ের কথা বললেও এই চ্যালেঞ্জের কথা আজ অস্বীকার করতে পারেননি জেটলিও। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সামনে এটা মস্ত বড় আদর্শগত চ্যালেঞ্জ। একে তাত্ত্বিক যুদ্ধ বলে ধরে নিতে হবে।’’ কানহাইয়া কুমার থেকে আসাউদ্দিন ওয়াইসিদের দিকে ইঙ্গিত করে আজ জেটলি বলেন, অদ্ভুত এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যেখানে দেশকে টুকরো টুকরো করার কথা বলা হল বাক-স্বাধীনতা। আইন বা সংবিধান এর অনুমতি দেয় না। অথচ রাজধানীতেই তা ঘটছে। তবে অর্থমন্ত্রীর দাবি, এত দিন যাঁরা ভারত-বিরোধী স্লোগান দিচ্ছিলেন, এখন ‘ভারত মাতা কি জয়’ না বললেও অন্তত ‘জয় হিন্দ’ বলছেন তাঁরা।

এই বৈতরণী পেরোতে শেষমেশ তাই জাতীয়তাবাদেই আস্থা রাখছেন জেটলির মতো নেতারা। কারণ জাতিপ্রেমের ধুয়ো তুলে আমজনতার ভাবাবেগকে খুঁচিয়ে তোলা যায়। এই হাওয়া এক ধরনের সরকার-সমর্থনও তৈরি করে। পাশাপাশি উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা প্রধানমন্ত্রী সেখান থেকে ফসল তোলার চেষ্টায় নেমেছেন স্বয়ং নিজে। তাই ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর নীতিই এখন ঘুরে ফিরে মোদীর মুখে। তাই রোহিত ভেমুলার মৃত্যুর পর যখন বিরোধীরা এই সরকারকে দলিত-বিরোধী তকমা দিচ্ছে, দলের নেতাদের দলিত, তফসিলি জাতি-উপজাতির মানুষের কাছে পৌঁছনোর নির্দেশ দিয়েছেন মোদী। মোহন ভাগবত সংরক্ষণ নীতি পর্যালোচনার দাবি তুললেও মোদী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সংরক্ষণ নীতি বদলের কোনও প্রশ্নই নেই।

তাই আজ দলীয় সভায় কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে প্রথম রাউন্ডে যেমন জয়ের কথা বলেছেন জেটলি, তেমনই ছুঁয়ে গিয়েছেন উন্নয়নের মন্ত্রও। জানিয়েছেন, অনগ্রসর শ্রেণির শিল্পপতিদের সুলভে ঋণ দিতে শুরু হচ্ছে ‘স্ট্যান্ড-আপ ইন্ডিয়া’ প্রকল্প।

বিজেপির তরুণ নেতারা দু’মুখো নীতি নিয়ে দ্বিধা কাটাতে না পরলেও শীর্ষ নেতৃত্ব কিন্তু এতে ভর করেই কংগ্রেসকে হারানোর অঙ্ক কষছেন। ভোটব্যাঙ্কে তার কতটা ছায়া পড়বে, সেই উত্তর অবশ্য সময়ই দেবে।

jaitley bjp nationalism
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy