Advertisement
১৮ মে ২০২৪

জেটলির আশ্বাসেও ভোগান্তি কমলো না মানুষের

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকায় যা-ই থাক, বাতিল নোটে এক লপ্তে পাঁচ হাজার টাকার বেশি ব্যাঙ্কে জমা দিতে গেলে প্রথম বার কোনও জবাবদিহি করতে হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন খোদ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন। মঙ্গলবার বি বা দী বাগে রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন। মঙ্গলবার বি বা দী বাগে রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:০৬
Share: Save:

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকায় যা-ই থাক, বাতিল নোটে এক লপ্তে পাঁচ হাজার টাকার বেশি ব্যাঙ্কে জমা দিতে গেলে প্রথম বার কোনও জবাবদিহি করতে হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন খোদ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

কার্যক্ষেত্রে কিন্তু দেখা গেল, জেটলির আশ্বাসের কোনও মূল্যই নেই। এমনকী রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকাও উড়িয়ে দিয়ে বহু ব্যাঙ্ক সাফ জানিয়ে দিল, পাঁচ হাজার টাকার বেশি পুরনো নোট তারা জমাই নেবে না। মঙ্গলবার যেমন বিধাননগরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বৈশাখী শাখা। যদিও সেই টাকাই পরে জমা নিয়েছে ওই একই ব্যাঙ্কের আনন্দপুর শাখা।

এক যাত্রায় এমন পৃথক ফল কেন? কেন এক ব্যাঙ্ক থেকে অন্য ব্যাঙ্কে দৌড়ে ভোগান্তির মুখে পড়তে হল গ্রাহকদের? সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কটির কর্তৃপক্ষের দাবি, এমনটা হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি তাঁদের জানাও নেই। কিন্তু ওয়াকিবহাল মহলের মতে, জেটলির বক্তব্য এবং সরকারি বিজ্ঞপ্তির মধ্যে ফারাক ভোগান্তির একটা কারণ।

জেটলি বলে দিয়েছেন, বাতিল নোটের পরিমাণ যতই হোক, প্রথম বার টাকা জমা দিতে গেলে কোনও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে না। বারবার টাকা জমা দিলে তবেই ব্যাখ্যা দিতে হবে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের সরকারি বিজ্ঞপ্তি, প্রেস বিবৃতি থেকে শুরু করে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকা— সর্বত্রই স্পষ্ট বলা রয়েছে, পাঁচ হাজারের বেশি জমা দিতে গেলেই ব্যাঙ্কের অফিসারদের কাছে ব্যাখ্যা দিতে হবে, কেন এত দিন ওই টাকা জমা পড়েনি। এ নিয়ে ব্যাঙ্কে একটি ফর্মও পূরণ করতে হবে। অফিসারেরা সেই লিখিত ব্যাখ্যায় তুষ্ট হলে তবেই ওই টাকা জমা পড়বে অ্যাকাউন্টে। অর্থাৎ, জেটলি যা-ই বলুন, সরকারি নির্দেশিকায় কোনও বদল হয়নি।

এখন প্রশ্ন, লিখিত ব্যাখ্যা না চেয়ে অনেক ব্যাঙ্ক টাকা জমাই নেওয়া হবে না বলে গ্রাহকদের ফিরিয়ে দিল কেন? ব্যাঙ্কের সঙ্গে জড়িত অনেকের ব্যাখ্যা, কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফর্ম ব্যাঙ্কে এসে পৌঁছয়নি। কিছু ক্ষেত্রে আবার দায় কাঁধে নিতে চাননি ব্যাঙ্কের অফিসারেরা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশ হল, পুরনো টাকা জমা দেওয়ার সময় দু’জন ব্যাঙ্ক আধিকারিককে গ্রাহকের জমা দেওয়া ওই ফর্মে সই করতে হবে। ভবিষ্যতে এ নিয়ে সমস্যা হতে পারে আশঙ্কা করেই টাকা জমা নেওয়া এড়িয়ে গিয়েছে বহু ব্যাঙ্ক।

টাকা জমা দিতে গিয়েও সাধারণ মানুষকে ফের হেনস্থার মুখে ঠেলে দেওয়ায় বিজেপির অন্দরেই চূড়ান্ত ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিতে গিয়েও হেনস্থার শিকার হলে মানুষের ক্ষোভ আরও বাড়বে। এর আগে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সাংসদরাই দলীয় সভাপতি অমিত শাহর কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সঙ্ঘ পরিবারও ক্ষুব্ধ।

আজ তাতে ইন্ধন জুগিয়েছেন স্বরাজ ইন্ডিয়ার নেতা যোগেন্দ্র যাদব। তিনি আজ ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিয়ে হলফনামায় বলেছেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীকে বিশ্বাস করেছিলাম যে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় থাকবে। তাই ব্যাঙ্কের লাইন ছোট হওয়ার অপেক্ষা করছিলাম।’ যোগেন্দ্রর বিদ্রুপের পরে স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপিতে ক্ষোভ বেড়ে়ছে।

তার প্রকাশও দেখা গিয়েছে। জেটলির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত টুইট করেছেন, ‘‘পুরনো নোট জমার ক্ষেত্রে নতুন শর্ত একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। এতে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা কমবে।’’ এনডিএ-শরিক তেলুগু দেশম নেতা তথা অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুও বলেন, ‘‘সঙ্কট মিটছে না, সমাধানও মিলছে না!’’

বিজেপির ঘরের লোকেদেরই এহেন মন্তব্যে হাতিয়ার পেয়ে যায় বিরোধীরা। মোদীকে কটাক্ষ করে রাহুল গাঁধী বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যেমন দ্রুত পোশাক বদলান, বিজার্ভ ব্যাঙ্কও তেমনই নিয়ম পাল্টাচ্ছে।... সোমবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘোষণার পরে বোঝা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর বার্তার কোনও সারবত্তা নেই।’’

প্রধানমন্ত্রী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরনো নোট জমা দেওয়া যাবে বলে আশ্বাস দেওয়ার পরেও কেন আচমকা নিয়ম পাল্টানো হল, কেনও বা জেটলির ব্যাখ্যার পরেও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকা পাল্টালো না— এ সব প্রশ্নের কোনও জবাব নেই। ৮ নভেম্বর নোট নাকচের ঘোষণার পর গত ছ’সপ্তাহে প্রায় ৬০টি নির্দেশ জারি করেছে অর্থ মন্ত্রক ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যার দৌলতে ভোগান্তি বেড়েছে আমজনতার। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কথায়, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক টাকা জমার নতুন নিয়ম করছে। অর্থমন্ত্রী তার উল্টো কথা বলছেন! মানুষ কাকে বিশ্বাস করবেন? কারও কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। মরিয়া সরকার মরিয়া পদক্ষেপ করছে।’’

প্রশ্ন উঠেছে, জেটলি কি নোট জমার ক্ষেত্রে শর্ত চাপানোর বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিলেন না? সরকারের একটি মহলের ব্যাখ্যা, আমজনতার হেনস্থা হবে বুঝে জেটলি মাঠে নামেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও অর্থ মন্ত্রকে মোদীর আস্থাভাজন অফিসারেরা সিদ্ধান্ত বদলাতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arun Jaitley Notes Crisis Reserve Bank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE