ক্লান্তি কাটাতে বিশ্বকাপ ফুটবলে এ বার থেকেই শুরু হয়েছে পাঁচ মিনিটের বিশেষ বিরতি বা ‘লেমন ব্রেক’। সেই ছোঁয়া যেন লাগল বাজেট বক্তৃতাতেও। বিরোধীদের বাধায় অর্থমন্ত্রীর বাজেট-ভাষণ থমকে যাওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এ দেশে। কিন্তু পিঠের ব্যথায় কাতর অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আজ নিজেই পাঁচ মিনিট বিরতি চেয়ে নিলেন স্পিকারের কাছে।
প্রথম বাজেটেই সব চেয়ে দীর্ঘ বাজেট পেশের নজির গড়লেন অরুণ জেটলি। ৪৩ পাতার এই দীর্ঘ বাজেট বক্তৃতা ৪৫ মিনিট চলার পরেই থমকে গেলেন সাদা কুর্তা-পাজামা আর হলুদ জ্যাকেট পরা অর্থমন্ত্রী। পাশে বসা রাজনাথ সিংহ, সুষমা স্বরাজকে নিচু গলায় বললেন, “কাঁধে একটা ব্যথা চাগাড় দিচ্ছে। দাঁড়াতে পারছি না। পাঁচ মিনিটের বিরতি চাইব?” সুষমা বললেন, সেটা বোধ হয় ঠিক হবে না। বেজার মুখে জেটলি ফের বাজেট পড়ার চেষ্টা করলেন। পারলেন না। স্পিকার সুমিত্রা মহাজনও
জানতে চাইলেন, কী ব্যাপার? অর্থমন্ত্রী বলেই ফেললেন, “পাঁচ মিনিটের একটু বিরতি দেবেন? তার পর আবার পড়ছি।” কিছুটা থমকে গেলেন স্পিকার। তার পরে অবশ্য পাঁচ মিনিট মুলতবি রাখলেন অধিবেশন। জানালেন, ১১টা ৫২ মিনিটে ফের শুরু হবে বক্তৃতা।
বাজেট পেশ করতে গিয়ে এ ভাবে বিরতি নেওয়ার নজির নেই। গত কালই লোকসভায় বসে ঘুমে ঢুলে পড়তে দেখা গিয়েছে রাহুল গাঁধীকে। তা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপি নেতারা। আর আজ দেশের অর্থনীতিকে দাঁড় করাতে গিয়ে খোদ অর্থমন্ত্রীই বসে পড়লেন পিঠের ব্যথায়! কংগ্রেসের কিছু সাংসদ বিরতির মধ্যেই টিপ্পনি কাটতে শুরু করেছিলেন। বাদ সাধলেন স্বয়ং সনিয়া গাঁধী। আজ রাহুল গাঁধীকে পাশে নিয়ে সামনের সারিতেই বসেছিলেন সনিয়া। পিছনে তাকিয়ে হাত তুলে থামালেন নিজের দলের সাংসদদের।
তত ক্ষণে অন্য দলের সাংসদরা ছুটে এসেছেন জেটলির দিকে। কংগ্রেসের জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া থেকে তৃণমূলের সৌগত রায়।
অরুণ জেটলির বাজেট পেশ দেখতে হলুদ পোশাক পরে গ্যালারিতে বসে ছিলেন তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতা ও কন্যা সোনালি। উদ্বিগ্ন তাঁরাও। পাশে বসা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরামর্শ দিলেন, “আর দাঁড়িয়ে পড়ার দরকার নেই। বসে বসেই পড়ুন।” সেই বার্তা পাঠানো হল স্পিকারের কাছে। পাঁচ মিনিট পরে স্পিকার এসে নিজেই বললেন, “আপনি বসেই বাজেট পড়ুন।” তত ক্ষণে জেটলির ঘনিষ্ঠ সাংসদ পীযূষ গয়াল বিজেপি সাংসদদের কাছে গিয়ে বললেন, “আপনার ঠিক ভাবে টেবিল চাপড়ে বাজেট ঘোষণাকে স্বাগত জানাচ্ছেন না। জোরে জোরে তালিও দিন।” তার পর থেকে টেবিল চাপড়ানি ও হাততালির বহরও বাড়ল।
সব মিলিয়ে দু’ঘণ্টা পাঁচ মিনিটের বাজেট বক্তৃতা। তত ক্ষণে অনেকটাই সুস্থ হতে শুরু করেছেন অর্থমন্ত্রী। সুষমা বললেন, “একটা কুশন আনতে বলি?” বাজেট পড়তে পড়তেই জেটলি ইশারায় জানালেন, প্রয়োজন হবে না। লোকসভায় বাজেট পেশ শেষ হতেই ফের রাজ্যসভায় তা সংক্ষিপ্ত আকারে পেশ। তত ক্ষণে সংসদ ভবনের নীচে তাঁর স্ত্রী-কন্যা জেটলির কক্ষে চলে এসেছেন। বললেন,কাঁধের ব্যথাটা ক’দিন ধরেই বেড়েছে। জেটলির ঘরে তখন চাঁদের হাট। রবিশঙ্কর প্রসাদ, ধর্মেন্দ্র প্রধান, নির্মলা সীতারামন, প্রকাশ জাভড়েকর, এন কে সিংহ, রাজীব চন্দ্রশেখর, নরেশ গুজরাল। সকলের মুখে একই কথা। আগে রোজ সকালে হাঁটতে যেতেন। দু’মাস ধরে তার সময় পাচ্ছেন না। ওজনও বেড়েছে। টানা অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে অসুবিধা হয়। তার উপর ডায়াবেটিস। পা-ও ফুলেছে। ক’দিন আগে চটি পরে যেতে হয়েছে নৌসেনার একটি অনুষ্ঠানে।
রাজ্যসভায় সংক্ষিপ্ত বাজেট পেশ অবশ্য দাঁড়িয়েই করেছেন জেটলি। তত ক্ষণে সংসদের চিকিৎসকদের একটি টিমও এসে গিয়েছে। কিন্তু বাজেট পেশ করে জেটলি নিজের কক্ষে ঢুকলেন হাসি মুখেই। ঢুকতেই সকলে করতালি দিলেন। অভিনন্দন কুড়িয়ে একটু চোখ রাখলেন টেলিভিশনের পর্দায়। শেয়ার বাজার তত ক্ষণে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে। হাসি ফুটল জেটলির মুখে। পর পর সাক্ষাৎকার বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে। ঘর ভর্তি লোক। খাবার সময় নেই। এক ফাঁকে স্ত্রী কানে কানে বললেন, “ডাক্তার এসেছে, এক বার দেখিয়ে নাও। বাড়ি থেকে খাবারও এসেছে, খেয়ে নাও।” জেটলি মানা করলেন। বললেন, “একদম ঠিক আছি। বাড়ির খাবার লাগবে না। এখানেই সকলের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।” বলতে না বলতেই ঘরে ঢুকলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ কে ডি সিংহ। আয়োজন তাঁর তরফ থেকেই। এলেন জেটলির বহু দিনের বন্ধু কংগ্রেসের সাংসদ রাজীব শুক্ল। সকলে মিলে সেখানেই খাওয়া-দাওয়া শুরু হল। তার মধ্যেই দলের নেতাদের জানিয়ে দিলেন, বাজেট নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে ঠিক কী কী বলতে হবে।
ক’দিন ধরেই ভোগাচ্ছে পিঠের ব্যথা। তাই প্রথা ভেঙে বসে বসেই বাজেট পড়লেন অরুণ জেটলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy