E-Paper

বিদেশি সংস্থার দাদাগিরি ফের ঢাকায়, সতর্ক দিল্লিও

প্রসঙ্গত আইআরআই এবং এনডিআই বাংলাদেশে নতুন নয়। নব্বইয়ের দশকের গোড়া থেকেই মূলত আমেরিকান কংগ্রেসের টাকায় চলা এই সংস্থাগুলি বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সমাজসেবী সংগঠনগুলিকে নিয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছিল।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:১১
মুহাম্মদ ইউনূস।

মুহাম্মদ ইউনূস। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম। গ্রাফিক সহায়তা: এআই।

বাংলাদেশে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি অ-সরকারি এনজিও বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি আবারও সক্রিয় হচ্ছে সে দেশের মাটিতে। এই মর্মে রিপোর্ট এসেছে নয়াদিল্লিতে এবং বিষয়টি নজরে রাখা হচ্ছে বলে কূটনৈতিক সূত্রের খবর।

বিশেষ করে আমেরিকার দুটি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিক ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই)-এর অতিসক্রিয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে বলে খবর। গণতন্ত্র প্রসারের দাবি করা এই দুই এনজিও বাংলাদেশে ‘দক্ষতা নির্মাণ’, ‘নির্বাচনী সহায়তা’, ‘গণতন্ত্রের প্রসারের’ মতো কর্মসূচিতে কাজ শুরু করেছে। তবে প্রশ্ন উঠছে— কোথায় গণতন্ত্রের প্রসারে বৈধ সহায়তার শেষ হয় আর ঠিক কোন জায়গা থেকে রাজনৈতিক খবরদারি শুরু হয়— এই সূক্ষ্ম বিভাজনরেখা নিয়ে।

প্রসঙ্গত আইআরআই এবং এনডিআই বাংলাদেশে নতুন নয়। নব্বইয়ের দশকের গোড়া থেকেই মূলত আমেরিকান কংগ্রেসের টাকায় চলা এই সংস্থাগুলি বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সমাজসেবী সংগঠনগুলিকে নিয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছিল। কূটনৈতিক মহলের মতে গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলিকে শক্তিশালী করার মোড়ক থাকলেও ইউক্রেন, সার্বিয়া, ভেনেজুয়েলায় এই সংগঠনগুলির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। মায়ানমারেও ওয়াশিংটনের বৃহত্তর কৌশলগত এবং ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধ করতেই এদের কাজে লাগানোর অভিযোগ শোনা গিয়েছে।

বাংলাদেশেও তাদের অতীত দাগমুক্ত নয়। শূন্য দশকে এবং ২০১০-এর গোড়ায় তাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ ও কিছু ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ করেছিল তৎকালীন বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। কারণ হিসাবে বলা হয়েছিল, এরা অনভিপ্রেত রাজনৈতিক খবরদারি করছে, যা জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ। বর্তমান রিপোর্ট বলছে, তারা আবারও একই ভাবে বিভিন্ন যুব নেতৃত্বের প্রকল্পে টাকা দিচ্ছে, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে অংশীদারি করছে, মাঠে নেমে নির্বাচনের সমীক্ষার জন্য পর্যবেক্ষক নিয়োগ করছে। এই কার্যকলাপগুলি উপর থেকে দেখতে নিরীহ বলে মনে হলেও এই মুহূর্তে বাংলাদেশের উত্তপ্ত এবং মেরুকরণদুষ্ট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাকে নিরপেক্ষ বলা চলে না বলেই ওয়াকিবহাল মহলের মত।

নয়াদিল্লির মতে, ২০২৬ সালের নির্বাচন শুধুমাত্র কোনও রাজনৈতিক দলকে শাসক হিসাবে বেছে নেওয়ার নির্বাচন নয়। বরং সে দেশের গণতন্ত্র কতটা পরিণত হয়েছে, তারও পরীক্ষা। বাইরের ভূকৌশলগত লড়াইয়ের মধ্যে যেন নিজের দেশ না পড়ে, সে দিকে নজর রাখা বাংলাদেশের অগ্রাধিকার। রিপোর্টে তাই তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত, স্বচ্ছতার প্রশ্নে কোনও আপোস নয়। সমস্ত বিদেশি অর্থে প্রতিপালিত সংস্থাকে তাদের টাকাপয়সা কোথা থেকে আসছে, তার হিসাব দিতে হবে। তারা কাকে সঙ্গে নিয়ে কোন প্রকল্প কেন করতে চাইছে, তা স্পষ্ট করতে হবে। নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ যাতে নির্বাচন কমিশনের আইনি এক্তিয়ারের মধ্যে থেকে করা হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া বিদেশি কোনও রাষ্ট্রের হাতে তুলে না দিয়ে বাংলাদেশের উচিত নিজেদের দেশে সিভিক ট্রেনিং কর্মসূচি শুরু করার। ভোটার সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়ার। তৃতীয়ত, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা অবশ্যই মূল্যবান। কিন্তু তাকে পারস্পরিক সম্মান এবং সার্বভৌমত্বের ভিতে তৈরি করতে হবে। তারা অংশীদার রাষ্ট্রকে স্বাগত জানাক, কিন্তু দাদাগিরি যেন বরদাস্ত না করে। বিদেশ সরকারের সঙ্গে সংলাপ গণতন্ত্রের প্রসারে সহায়ক হোক, তা যেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিতনা করে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Muhammad Yunus Bangladesh Bangladesh Election

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy