লোকসভা নির্বাচনের তিন মাস আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছিলেন, তাঁর দশ বছরের রাজত্বে প্রায় ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্রের কবল থেকে বেরিয়েছেন। কিন্তু সেই দাবির পিছনে সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এ বার প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শমিকা রবি দাবি করলেন, ২০১১-১২ থেকে ২০২৩-২৪-এর মধ্যে ৩০ কোটি মানুষ দারিদ্র থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
গত বছর জানুয়ারিতে, লোকসভা ভোটের তিন মাস আগে নীতি আয়োগ বহুমুখী দারিদ্র সূচকের ভিত্তিতে জানায়, মোদী সরকারের দশ বছরে ২৪.৯ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তার পরে খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদী লোকসভা ভোটের প্রচারে এই তথ্যকে হাতিয়ার করেছিলেন। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, আন্তর্জাতিক স্তরে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবনযাত্রার মানের যে সমস্ত মাপকাঠি নিয়ে বহুমুখী দারিদ্র সূচক তৈরি হয়, নীতি আয়োগ তার সঙ্গে নিজের মতো করে আরও কিছু মাপকাঠি ঢুকিয়ে দিয়েছে। যেমন, জীবনযাত্রার মাপকাঠিতে জনধন যোজনায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার সংখ্যা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যদিও সেই সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের অধিকাংশই ফাঁকা পড়ে রয়েছে। মোদী সরকার দারিদ্রসীমা তুলে নিজের সুবিধা মতো সূচক তৈরি করেছে।
মনমোহন সরকারের জমানায় প্রথমে অর্থনীতিবিদ সুরেশ তেন্ডুলকরের তৈরি দারিদ্রসীমার ভিত্তিতে কত জন দরিদ্র ঠিক হত। তাতে বলা হয়েছিল, কেউ প্রতি মাসে শহরে ৫৭৯ টাকা ও গ্রামে ৪৪৭ টাকার কম খরচ করলে তাকে দরিদ্র বলা হবে। অর্থনীতিবিদ সি রঙ্গরাজনের তৈরি দারিদ্রসীমায় তা বাড়িয়ে ১,৪০৭ টাকা ও ৯৭২ টাকা করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শমিকা রবির দাবি, রঙ্গরাজনের দারিদ্রসীমার ভিত্তিতেই দেখা যাচ্ছে, ২০১১-১২ থেকে ৩০ কোটি মানুষ দারিদ্র সীমা থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
২০১১-১২-য় দারিদ্রের হার ছিল, ২৯.৫%। ২০২৩-২৪-এ তা কমে ৪% হয়েছে। প্রসঙ্গত, শমিকার হিসেব অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে দারিদ্রের হার ৩০.৪% থেকে কমে ৬% হয়েছে। শমিকার বক্তব্য, ‘‘সব রাজ্যে দারিদ্রের হার কমেছে। এক দশকে এই দারিদ্র মোচন অভূতপূর্ব ও ঐতিহাসিক।’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়ালের যুক্তি, ‘‘মোদী সরকারের আমলে নির্দিষ্ট ভাবে গরিব মানুষের কাছে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার ফলেই এই সুফল মিলেছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)