অবিলম্বে নাগা চুক্তির বিষয়বস্তু প্রকাশ করা ও কোনও ভাবেই নাগা চুক্তির আওতায় অসমের ভৌগোলিক, রাজনৈতিক বা সামাজিক ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত না করার দাবি জানিয়ে আজ অসম বিধানসভায় একটি সর্বদলীয় প্রস্তাব গ্রহণ করা হল।
দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরে গত কালই নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী টি আর জেলিয়াং বলেছিলেন, নাগা চুক্তির বিষয়ে তিনিও বিশদে জানেন না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ তাঁকে জানিয়েছেন, এখন অবধি চূড়ান্ত চুক্তির একটি সূত্র বা রূপরেখা তৈরি হয়েছে মাত্র। তিনি আরও জানান, নাগা সমস্যা কেবল নাগাল্যান্ডের ভিতরের ব্যাপার নয়, পড়শি রাজ্যগুলির যেখানে যেখানে নাগারা রয়েছেন তাঁরা সকলেই এর আওতায় পড়বেন। নাগাদের কিছু নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও দেশিয় ভূসত্ত্ব আইন রয়েছে। কেন্দ্র সরকার নাগাদের সেই ঐতিহ্যকেই মাথায় রেখে চুক্তি করছে। সম্ভবত উত্তর-পূর্বের যেখানে নাগারা আছেন, সর্বত্র একই নিয়ম অনুসরণ করার সূত্র নেবে কেন্দ্র। জেলিয়াং আরও জানান, ‘‘নাগাল্যান্ড শান্ত না হলে উত্তর-পূর্বও শান্ত হবে না। নাগা চুক্তি সফল করার জন্য প্রয়োজনে আমি ও আমার মন্ত্রিসভার সকলে পদত্যাগেও রাজি।’’ তিনি বলেন, ‘‘নাগা চুক্তি নিয়ে অ-নাগা উপজাতি ও পড়শি রাজ্যদের ভয়ের কারণ নেই।’’ তিনি নিজে অসম, মণিপুর, অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলবেন বলেও জেলিয়াং জানান।
কিন্তু অসম বিধানসভায় এদিন মুখ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে মন্ত্রী রকিবুল হুসেন নিগা চুক্তি প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে বলেন, চুক্তির কথা গোপন রাখা ও পড়শিদের সঙ্গে আলোচনা না করেই নাগা চুক্তি করা দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতি নজিরবিহীন অবমাননা। কেন্দ্র এমনই চুক্তি করছে, যার ব্যাপারে খোদ নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রীই অন্ধকারে। অসমের বিভিন্ন জেলার অংশ নিয়ে আই-এম বৃহত্তর নাগালিম গঠন করতে চাইছিল। তাদের দাবি মেনে নিয়ে কোনও চুক্তি করাই অন্যায় হবে। গগৈ জানিয়ে দেন, অসমবাসী রাজ্যের স্বার্থের সঙ্গে আপস করে কোনও চুক্তিই মানবে না। এরপর রকিবুল এই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সর্বসম্মত ভাবে অনুমোদন করে কেন্দ্রের কাছে পাঠাবার কথা বলেন। তিনি প্রস্তাবটি বিধানসভায় পেশ করেন। সেখানে বলা হয়েছে: অবিলম্বে তথাকথিত শান্তি চুক্তির বয়ান ও শর্তাবলী প্রকাশ করা হোক। অসমের সাংবিধানিক সীমার ভিতরে থাকা কোনও অঞ্চল যেন নাগালিমের অন্তর্ভুক্ত করা না হয় বা সেখানকার কোনও প্রথার যেন বদল না হয়। অসমের রাজনৈতিক, ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র প্রভাবিত হতে পারে, এমন কোনও কাজ যেন অসমের সঙ্গে আলোচনা না করে বা অসমের জনমতকে উপেক্ষা করে না করা হয়।
গগৈ বলেন, ‘‘নাগাল্যান্ডে শান্তি না এলে এখানেও শান্তি আসবে না, এ কথা সত্য। অসমেও অসম চুক্তি, বড়ো চুক্তি হয়েছে। তা আমাদের এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। তেমনই নাগা চুক্তি নাগাল্যান্ডের ভিতরে সীমাবদ্ধ থাকলে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু চুক্তিতে নাগা অধ্যূষিত এলাকার উল্লেখ থাকায় জটিলতা বাড়ছে।’’ বৃহত্তর নাগালিমের দাবি যে তারা ছাড়ছে, তা এনএসসিএম (আইএম)-কে জানাতে হবে বলে গগৈ দাবি করেন। চুক্তির প্রকৃতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন গগৈ। তিনি বলেন, চুক্তি সইয়ের পরে একে ঐতিহাসিক নাগা চুক্তি বললেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। পরে কখনও বলা হচ্ছে এটি চুক্তি নয়, কাঠামো, কখনও বলছেন সূত্র, কখনও প্রস্তাবনা। কেন্দ্র পরিষ্কার করে জানাক, ‘‘৩ অগস্ট কী স্বাক্ষর হল!’’
অগপ, এআইইউডিএফ ও বিপিএফ এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলে: নাগা চুক্তি অসমকে আঘাত হানলে তা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল মহন্ত বলেন, ‘‘নাগাল্যান্ড ইতিমধ্যেই শিবসাগর, গোলাঘাট, যোরহাটে অসমের বিভিন্ন অংশের জমি দখল করে রেখেছে। সেখানে নিত্যদিন অশান্তি লেগে থাকে। এ বার চুক্তির হাত ধরে তারা যদি সেই সব এলাকা দখল করতে চায় তা হতে দেওয়া যাবে না।’’ প্রস্তাবে বলা হয়েছিল অসমের সঙ্গে আলোচনা না করে অসমের এলাকায় প্রশাসনিক কাঠামো বদল বা ভৌগোলিক পরিবর্তন করা যাবে না। মহন্ত বলেন, ‘‘আলোচনার পরেও কোনও ধরণের বদল আনা হবে না, তা প্রস্তাবের মাধ্যমে কেন্দ্রকে জানিয়ে দেওয়া হোক।’’
শুধুমাত্র বিজেপি বিধায়করা মৃদু প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, কেন্দ্র ইতিমধ্যে জানিয়েছে নাগা চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি এবং এর প্রভাব অসমে পড়বে না। কিন্তু, বাকি দলগুলি সমবেত স্বরে জানায়, অসম ও অসমবাসীর স্বার্থে এই প্রস্তাব গ্রহণ করে কেন্দ্রে পাঠানো হোক। সায় দেয় বিজেপি বিধায়করাও। স্পিকার প্রস্তাবটি সর্বসম্মত হিসেবেই গ্রহণ করেন।
এ দিকে, খাপলাং বাহিনীর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে নাগা হো হো ও ইএনপিও-র ১৬ জনের প্রতিনিধিদলকে মায়ানমার যাওয়ার ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। পাশাপাশি, কেন্দ্র ও আইএম-এর মধ্যস্থতাকারী আর এন রবি জানিয়েছেন, নাগা চুক্তি চূড়ান্ত করার আগে তিনি নাগাল্যান্ডে গিয়ে এনএসসিএন (খুলে-কিতোভি) গোষ্ঠীর প্রধান খুলে কন্যাক ও কিতোভি জিমোমির সঙ্গেও আলোচনায় বসতে চান। খুলে-কিতোভি গোষ্ঠীর নেতৃত্ব অনেক বছর ধরেই কেন্দ্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করতে চাইছিল। কেন্দ্র যে কেবল আইএম-এর সঙ্গে আলোচনা করেই নাগা চুক্তি সই করেছে তা ভাল মনে মেনে নেয়নি তারা। খুলে-কিতোভি বা ইউনিফিকেশন গোষ্ঠীর অন্যতম নেতা অ্যালেজো চাকেসাং সাফ জানান, ‘‘সমগ্র নাগাদের হয়ে মণিপুরের নাগা মুইভার চুক্তি সই করার কোনও অধিকারই নেই।’’ এই পরিস্থিতিতে ইউনিফিকেশন গোষ্ঠীকেও বুঝিয়ে পাশে টানতে চাইছে কেন্দ্র। খাপলাং বাহিনী ছেড়ে সদ্য ভারতে ফেরা রিফর্মেশন বাহিনী অবশ্য শান্তি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy