Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

কংগ্রেসের ঘাড়ে বন্দুক রেখে অসম থাকছেই চুক্তিতে

কংগ্রেস ও অসমের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তিতে অসমকে বাদ রাখা হচ্ছে না বলে জানিয়ে দিল বিজেপি। সাপ মরবে, লাঠিও ভাঙবে না, এমনই একটা কৌশল খুঁজছিল। কংগ্রেসের আপত্তি সেই সুযোগ এনে দিল তাদের। অসমকে বাদ রেখেই ভূমি হস্তান্তর সংক্রান্ত সংশোধনী বিল পাশ করাতে চেয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কিন্তু অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ চুক্তিতে অসমকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৫ ০৩:৪৪
Share: Save:

কংগ্রেস ও অসমের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তিতে অসমকে বাদ রাখা হচ্ছে না বলে জানিয়ে দিল বিজেপি। সাপ মরবে, লাঠিও ভাঙবে না, এমনই একটা কৌশল খুঁজছিল। কংগ্রেসের আপত্তি সেই সুযোগ এনে দিল তাদের। অসমকে বাদ রেখেই ভূমি হস্তান্তর সংক্রান্ত সংশোধনী বিল পাশ করাতে চেয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কিন্তু অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ চুক্তিতে অসমকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেন। কংগ্রেসও জানিয়ে দেয় অসমকে বাদ দিয়ে স্থলসীমান্ত চুক্তি হতে দেবে না তারা। এই অবস্থায় অসমের সাংসদরা আজ রাত পর্যন্ত অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহ, সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে অসমের বিজেপি সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের বহু চেষ্টা সত্ত্বেও গগৈ ও সনিয়া গাঁধীর অসম বিরোধী অবস্থানের কারণে স্থলসীমান্ত চুক্তি থেকে অসমের নাম বাদ যাবে না। এই চুক্তি করতে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তাই এর বিল পাশ করাতে সংসদে দুই–তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন। অথচ রাজ্যসভায় গরিষ্ঠতাই নেই সরকারের। এই পরিস্থিতিতে অসমকে চুক্তির আওতায় আনতে হচ্ছে বলে জানান সিদ্ধার্থবাবু।

মনমোহন সিংহ জমানার ২০১১ সালের চুক্তির খসড়া অনুযায়ী অসমের ৪৯৯ একর জমি বাংলাদেশ যাওয়ার কথা ছিল। কাল রাজ্যসভায় যে বিলটি পেশ হতে চলেছে, তাতে এর পরিমাণ ২৩১ একর কমেছে। অর্থাৎ এই চুক্তি হলে অসম থেকে বাংলাদেশে ২৬৭ একর জমি যাবে। আগামী বছরই ভোট অসমে। তার আগে রাজ্যের জমি চলে যাওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক ভাবে বিপাকে ফেলতে পারে বিজেপিকে এ জন্যই দলের রাজ্য শাখা দীর্ঘদিন ধরেই চুক্তির বিরোধিতা করে যাচ্ছিল।

২০১১ সালে ইউপিএ যখন এই বিল আনে তখন বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতারা এর তীব্র সমালোচনা করে গগৈ ও কংগ্রেসকে অসম- বিরোধী আখ্যা দিয়েছিলেন। আর এখন চুক্তির বিলটি সংসদে আনা নিয়ে বন্দুকটা কার্যত সেই কংগ্রেস ও অসমে তাদের মুখ্যমন্ত্রী গগৈয়ের ঘাড়েই রেখে দিল।

রাতে বিজেপি অসম নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অসমের মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেন, স্থলসীমান্ত চুক্তি হলে অসমের যে জমি বাংলাদেশ পাবে, তার চেয়ে বেশি জমি পাবে অসম। তাই চুক্তি থেকে বাদ গেলে অসমেরই ক্ষতি। বিজেপি রাজনৈতিক স্বার্থে সেই ক্ষতি করতে চলেছে। এই পরিস্থিতিতেই রাজ্যসভায় বিল পেশের আগের রাতে, দিল্লিতে অমিত শাহের বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য, সাংসদ কামাখ্যাপ্রসাদ তাসা, রমেন ডেকা, আর পি শর্মা, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, অসমের ভারপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা মহেন্দ্র সিংহ, বেঙ্কাইয়া নায়ডু। সিদ্ধার্থবাবু পরে বলেন, কংগ্রেস ও গগৈ রাজনৈতিক মুনাফা আদায়ের জন্য দু’মুখো নীতি নিয়ে চলছে। গগৈ অসম-বিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। সনিয়া রাজ্যবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন।

সাংসদ রামপ্রসাদ শর্মা বলেন, ‘‘লোকসভায় সংশোধনী পাশ করাতে অন্তত ৩৬৮ জন সাংসদের সম্মতি লাগবে। কিন্তু, আমাদের শক্তি ৩৩৪। তাই অসমকে বাদ দিয়ে বিল পাশ করাতে পারব না।’’ এ নিয়ে সনিয়া ও গুলাম নবিকে ফোনে অনুরোধ করেছেন সুষমা। কিন্তু, গগৈ নাছোড়বান্দা। কংগ্রেস নমনীয় না হলে, লোকসভায় ৭ বা ৮ মে অসমকে নিয়ে মূল বিলটিই পেশ করা হবে। বৈঠকে জানানো হয়, সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করতে চুক্তি সম্পাদন করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে সব চেয়ে বেশি জমি (৭০০০ বিঘা) পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে যাবে। তারা কোনও আপত্তি জানায়নি। অসমের চেয়ে বেশি জমি যাবে মেঘালয় ও ত্রিপুরারও। অসম থেকে ২৬৭ একর জমি বাংলাদেশ পেলেও অসম উল্টো দিকে ৫০০ একর জমি পাবে। তাই অসমের ক্ষতি নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE