Advertisement
২৯ মার্চ ২০২৩

দামি চাকরি ছেড়ে অসমে ঋতুবদল ঘটাচ্ছেন নয়ন

স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করছেন এক যুবক! শুনতে হয়েছে বিস্তর বিদ্রুপ। তবে মায়ের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে কাজ চালিয়ে যান নয়ন। কাঁচামালের জোগান দিচ্ছিলেন অরুণাচলম। বিদেশ থেকে আনানো হত উড প্লাম এবং জেল ফেব্রিক।

সক্রিয়: স্থানীয় ছাত্রীদের নিয়ে ন্যাপকিন তৈরি ও প্যাকেজিংয়ে হাত লাগিয়েছেন নয়নের স্ত্রী বাগ্মিতা (বাঁ দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

সক্রিয়: স্থানীয় ছাত্রীদের নিয়ে ন্যাপকিন তৈরি ও প্যাকেজিংয়ে হাত লাগিয়েছেন নয়নের স্ত্রী বাগ্মিতা (বাঁ দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৮ ০৩:২২
Share: Save:

বাস্তবে করে দেখিয়েছেন তামিলনাড়ুর অরুণাচলম মুরুগণান্থম আর পর্দায় লক্ষ্মীকান্ত চৌহান— সস্তায় স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করে গ্রামের মহিলাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। বাস্তব আর পর্দার দুই প্যাডম্যানের ‘শিষ্য’ নয়ন শইকিয়া এখন অসমের গ্রামে-গঞ্জে মহিলাদের ঋতুবদলের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।

Advertisement

অসমের বিশ্বনাথ জেলার গড়েহাগি গ্রামের ছেলে নয়ন কলকাতা থেকে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করে চাকরি পান বেঙ্গালুরুর পাঁচতারা হোটেলে। কিন্তু শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরলেই দেখতে পেতেন, মহিলারা কেমন অস্বাস্থ্যকর জীবন কাটাচ্ছেন। সেই সূত্রেই ইন্টারনেট ঘেঁটে অরুণাচলমের সঙ্গে পরিচয়। তাঁর কাছ থেকেই নয়ন শিখে নেন ন্যাপকিন তৈরির কৌশল।

এরপর সুখের চাকরি ছেড়ে ২০১৫-এ ফিরে যান গ্রামে। ন্যাপকিন তৈরির একটি ইউনিট তাঁকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন অরুণাচলম। নয়ন ব্যাঙ্ক থেকে ধার করেন পাঁচ লক্ষ টাকা। শুরু করেন ন্যাপকিন তৈরি।

স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করছেন এক যুবক! শুনতে হয়েছে বিস্তর বিদ্রুপ। তবে মায়ের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে কাজ চালিয়ে যান নয়ন। কাঁচামালের জোগান দিচ্ছিলেন অরুণাচলম। বিদেশ থেকে আনানো হত উড প্লাম এবং জেল ফেব্রিক।

Advertisement

কিন্তু ওই ন্যাপকিন গ্রামের মহিলাদের কাছে পৌঁছে দেবে কে? এগিয়ে এলেন সহধর্মিনী বাগ্মিতা বরা। গ্রামে ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতার উপরে প্রচার শুরু করেন তিনি। সঙ্গে প্যাড বিলি। বাগ্মিতা বলেন, ‘‘সমস্যাটা আমাদের চেয়ে ভাল কে বুঝবে? আমি কারখানায় হাত লাগানোর ফলে আশপাশের স্কুল-কলেজের ছাত্রীরাও সাহস করে এই প্রয়াসে সামিল হয়েছে।’’ আর ২৮ বছর বয়স নয়ন বলেন, “আসল সমস্যা দৃষ্টিভঙ্গি ও দারিদ্র। পুরুষরা হাটে যান। সেখানে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রি হয় না। আর বিক্রি হলেও পুরুষরা প্যাড কিনে আনার কথা ভাবতেই পারেন না। আর বাজারে বিক্রি হওয়া ন্যাপকিন কেনার মতো টাকাও মহিলাদের নেই।” নয়নের কারখানায় তিন টাকায় প্যাড তৈরি হয়। তিন টাকাতেই বিক্রি।

পাঁচতারা হোটেলের প্রাক্তন ম্যানেজার এখন সংসার চালাতে বাড়ির সামনে দোকান দিয়েছেন। কিন্তু প্যাড তৈরিতে আঁচ পড়তে দেননি। এখন হাতখরচার বিনিময়ে স্থানীয় ছাত্রীরাও ন্যাপকিন তৈরিতে হাত লাগিয়েছে। দৈনিক গড়ে তিন হাজার প্যাড তৈরি হয় নয়নবাবুর কারখানায়। সমগ্র উত্তর-পূর্বেই এমন উদ্যোগ একটিই। প্যাড বিপণনের জন্য স্থানীয় বিধায়ক, জেলা প্রশাসন ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন নয়ন। সাড়া মিলেছে বটদ্রবার বিধায়ক আঙুরলতা ডেকার কাছ থেকে। ইতিমধ্যেই বিধানসভায় বিষয়টি তুলেছেন তিনি।

নয়ন জানান, গ্রামের পরিবারগুলি প্যাড নিয়ে সঙ্কোচেই থাকত। বিষয়টা সহজ করে দিয়েছে অক্ষয়কুমারের ‘প্যাডম্যান’। গ্রামে সিনেমা হল না থাকায় মহিলাদের জন্য ছবির বিশেষ স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করেন নয়ন। ফলও মেলে। মিলে যায় বাস্তব আর পর্দার গল্প। আরও একবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.