Advertisement
E-Paper

রানিকাহিনির শেষ কথা কি ‘মাটির’ মানুষ!

এক জন প্রচারে নামছেন হেলিকপ্টারে। অন্য জন জিপে, কখনও পায়ে হেঁটে।  

অগ্নি রায় 

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:২০
বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া।—ফাইল চিত্র।

বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া।—ফাইল চিত্র।

জয়পুরের শপিং মল থেকে জোধপুরের কেল্লা পর্যন্ত এক জনের পরিচয়— সামন্ত্রতান্তিক এবং উদ্ধত। অন্য জনকে রাজস্থানের প্রত্যন্ত গ্রামবাসীদের অনেকেই মনে করেন, স্বজন।

এক জন প্রচারে নামছেন হেলিকপ্টারে। অন্য জন জিপে, কখনও পায়ে হেঁটে।

প্রথম জন বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া। অন্য জন অশোক গহলৌত।

রাজস্থানে দুই তারকা প্রতিপক্ষের ফারাককে এ ভাবেই চিহ্নিত করছে এখানকার রাজনৈতিক শিবির। “যদি বসুন্ধরাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ঘোষণা না-করে আমরা ভোটে যেতাম, অন্তত ১০ শতাংশ বেশি আসন পেতাম,” নাম প্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে জানাচ্ছেন প্রদেশ বিজেপিরই এক শীর্ষ নেতা। তাঁর কথায়, “গত কয়েক বছরে বিহার, পঞ্জাব, কর্নাটকে যদি বিজেপি ভাল ফলাফল করত, তা হলে বসুন্ধরাকে সরিয়ে দেওয়া সহজ হত মোদীজি, অমিত শাহদের পক্ষে। কিন্তু, এখন গুজরাতেও আমাদের কাহিল অবস্থা। তার উপর উত্তরপ্রদেশের উপনির্বাচনগুলিতে ধাক্কা। সব মিলিয়ে দলে কোণঠাসা রানিজি (বসুন্ধরা)-র সুবিধাই হয়ে গিয়েছে।

বসুন্ধরাকে না চটানোর আরও একটি কারণ রয়েছে। কংগ্রেসের তরফে ‘মিডিয়া’ সামলাচ্ছেন সত্যেন্দ্র সিংহ যাদব। তাঁর বক্তব্য, মোদীর সামনে এখন বড় লক্ষ্য, উনিশের ভোটের আগে রাজ্যগুলিতে (বিশেষত যেখানে বিজেপির ভিত মজবুত) শক্তি অটুট রাখা। বিধানসভা ভোটে বসুন্ধরাকে গুরুত্বহীন করে দিলে তিনি যে ডোবাবেন না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? বিশেষত রাজস্থান বলে, রানি সব সময়েই রানি! বিশেষ করে অর্থের জোর যদি থাকে।

মোদী হাওয়া এ বার নেই ঠিকই। তবে এটাও ঠিক যে রাজস্থান এ বার যত না মোদী-বিরোধী, তার থেকে অনেক গুণ বেশি বসুন্ধরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে রুষ্ট। যে স্লোগান প্রায়ই শুনতে পাওয়া যাচ্ছে তা হল, ‘মোদী তেরে সে ব্যের নেহি, বসুন্ধরা তেরে সে খ্যয়র নেহি।’ অর্থাৎ মোদী, তোমার সঙ্গে কোনও দুশমনি নেই, কিন্তু বসুন্ধরাকে ছাড়ব না!

রানির প্রতি রাজপুতদের দীর্ঘদিনের আনুগত্যেও চিড় ধরেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। বিষয়টা

শুরু হয়েছিল রাজপুত ‘ডন’ আনন্দ পাল সিংহকে ‘এনকাউন্টারে’ পুলিশ মেরে ফেলার পর। এর পর আসে পদ্মাবত বিতর্ক।

কংগ্রেসের স্বাভাবিক ভোট ভিত্তি ছিল জাঠ, মুসলমান এবং পিছড়ে বর্গ। সেখানে রাজস্থান বিজেপির বরাবরের শক্তি রাজপুত এবং বণিক বৈশ্য। এ বার রাহুল গাঁধী-গহলৌতের যৌথ কৌশলে রাজপুত রাজাদের টিকিট দেওয়া হয়েছে। রাজপুতদের মন জয়ে পরিশ্রমও করছে কংগ্রেস।

মনমোহন সরকার বিরোধী সার্বিক মানসিকতাকে গত বিধানসভা ভোটে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজে লাগিয়ে ছিলেন রাজে। পাশাপাশি মোদীর হিন্দুত্বের হাওয়ায় এক হয়েছিল মিনা-জাঠ-পিছড়ে বর্গ রাজপুত। এ ছাড়াও রাজে ১২০টি আসনে এনেছিলেন নতুন মুখ। শাসক দলকে পাঁচ বছর অন্তর বদলে দেওয়ার প্রবণতা সম্পন্ন রাজ্যে সেই কৌশল কাজ করেছিল ম্যাজিকের মতো।

রাজ্যের অন্যতম কংগ্রেস নেতা সচিন পাইলট সে সময়ে ছিলেন মনমোহন সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। রাজ্যের উন্নয়নের প্রশ্নে তাঁর কোনও ভূমিকা ছিল না বলে প্রচার করে বিজেপি। একই ভাবে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গহলৌত দিল্লিকে পাশে নিতে পারেননি বলেও প্রশ্ন ওঠে। কার্যত মোদী বনাম অশোকের লড়াইয়ে সেই সময়ে টিকতেই পারেননি দ্বিতীয় জন।

এ বার ‘প্রাসাদবাসিনী’ এবং ‘মাটির মানুষের’ ফারাক শেষ পর্যন্ত ভোটের বাক্সে কী চেহারা নেয়, তার অপেক্ষা এখন।

Assembly Elections 2018 Rajasthan Assembly Election 2018 Basundhara Sindhia Raje Ashok Gehlot
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy